ঢাকা ১০:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনই টিকে থাকার চাবিকাঠি

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৪:০৭:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৪ বার দেখা হয়েছে

টেকসই উন্নয়নের পথে এগোতে হলে শুধু মুনাফা নয়, ব্যবসায়িক নীতিতেও আনতে হবে দায়বদ্ধতার চর্চা। পরিবেশের সুরক্ষা, সামাজিক দায়িত্ব এবং সুশাসনের স্বচ্ছতা- এই তিন মানদণ্ডেই টিকে থাকার চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ, ব্যবসা ও প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ইএসজি- অর্থাৎ এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোও টেকসই প্রবৃদ্ধির এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত অভিযোজিত হচ্ছে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের হোটেল বেঙ্গল কেনেরি পার্কে ডে-লং সার্টিফিকেট ট্রেনিং অন সাসটেইনেবিলিটি ফান্ডামেন্টালস: এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (ইএসজি) ফর কর্পোরেট কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ শীর্ষক সারাদিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব মত তুলে ধরেন দেশের পরিবেশ ও ব্যবসা-নীতি বিশেষজ্ঞরা।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), এসবিসি বাংলাদেশ, লিন সিক্স সিগমা আইটি সলিউশনস এবং সাসটেইনেবল রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটেন্সি লিমিটেড-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধন করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ক্যাপস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে এখন কর্পোরেট সাফল্যের মাপকাঠি শুধু আর্থিক নয়; প্রতিষ্ঠান কতটা পরিবেশবান্ধব, কর্মীদের প্রতি কতটা মানবিক ও প্রশাসনিকভাবে কতটা স্বচ্ছ- এসবই এখন ব্যবসার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে। বাংলাদেশ শিল্পোন্নয়নের পথে দ্রুত এগোলেও পরিবেশ দূষণ ও সুশাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইএসজি হতে পারে কার্যকর দিকনির্দেশনা।

কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, সম্পদের প্রকৃত মূল্যায়নে পরিবেশের ভূমিকা অপরিহার্য। গ্রিন টেকনোলজি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে- এটাই টেকসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নেন সাসনেক্স লিমিটেড-এর পরিচালক ও জিআরআই সার্টিফায়েড প্রশিক্ষক মোন্তাসির নাহিদ, ডিবিএল গ্রুপ-এর সিনিয়র ম্যানেজার (সাসটেইনেবিলিটি) মাশুক চৌধুরী, গ্রিন ফাইন্যান্স প্রফেশনাল কারিমুল তুহিন এবং ইএসজি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাদমান সাকিব আনিক।

মোন্তাসির নাহিদ বলেন, বাংলাদেশে ইএসজি ও টেকসই রিপোর্টিং কাঠামো শক্তিশালী হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বচ্ছ রিপোর্টিং বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়াবে এবং কর্পোরেট ব্র্যান্ডের প্রতি বিশ্বাস তৈরি করবে।

ডিবিএল গ্রুপের মাশুক চৌধুরী বলেন, আমরা ইএসজি কমপ্লায়েন্সকে ব্যবসায়িক নীতির মূলভিত্তি হিসেবে নিয়েছি। উৎপাদন থেকে কর্মপরিবেশ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে টেকসই অনুশীলন নিশ্চিত করা এখন আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম।

গ্রিন ফাইন্যান্স প্রফেশনাল কারিমুল তুহিন বলেন, ব্যাংকিং খাতে ইএসজি কমপ্লায়েন্স এখন বৈশ্বিক আর্থিক দায়বদ্ধতার অংশ। এটি শুধু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নয়, বিনিয়োগ আস্থারও নিশ্চয়তা।

ইএসজি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাদমান সাকিব আনিক বলেন, ইএসজি এখন বৈশ্বিক ব্যবসা রূপান্তরের চালিকা শক্তি। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের কৌশল ও কাঠামো পুনর্গঠন করতে হবে।

এসবিসি বাংলাদেশ কনসালটেন্ট ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মো. রবিউল কবির বলেন, ইএসজি কেবল বড় কর্পোরেটদের বিষয় নয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সুশাসনের মানদণ্ডে নিজেদের অভ্যস্ত করতে হবে। এভাবেই বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টেকসই অবস্থান নিতে পারবে।

কর্মশালার সঞ্চালনা করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আহসান কবির রুবেল। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হুমায়ুন কবির ও প্রভাষক মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী।

অংশগ্রহণকারীদের মতে, এই প্রশিক্ষণ শুধু নীতি আলোচনায় সীমাবদ্ধ ছিল না- বরং বাংলাদেশের কর্পোরেট খাতে টেকসই চর্চাকে একটি বাস্তব প্রয়োগে রূপ দেওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মতিঝিল-শাহবাগ রুটে চলছে মেট্রোরেল

পরিবেশ, সমাজ ও সুশাসনই টিকে থাকার চাবিকাঠি

প্রকাশিত : ০৪:০৭:৫০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

টেকসই উন্নয়নের পথে এগোতে হলে শুধু মুনাফা নয়, ব্যবসায়িক নীতিতেও আনতে হবে দায়বদ্ধতার চর্চা। পরিবেশের সুরক্ষা, সামাজিক দায়িত্ব এবং সুশাসনের স্বচ্ছতা- এই তিন মানদণ্ডেই টিকে থাকার চাবিকাঠি লুকিয়ে আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ, ব্যবসা ও প্রবৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দুতে এখন ইএসজি- অর্থাৎ এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোও টেকসই প্রবৃদ্ধির এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত অভিযোজিত হচ্ছে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানের হোটেল বেঙ্গল কেনেরি পার্কে ডে-লং সার্টিফিকেট ট্রেনিং অন সাসটেইনেবিলিটি ফান্ডামেন্টালস: এনভায়রনমেন্টাল, সোশ্যাল অ্যান্ড গভর্ন্যান্স (ইএসজি) ফর কর্পোরেট কমপ্লায়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ শীর্ষক সারাদিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব মত তুলে ধরেন দেশের পরিবেশ ও ব্যবসা-নীতি বিশেষজ্ঞরা।

বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস), এসবিসি বাংলাদেশ, লিন সিক্স সিগমা আইটি সলিউশনস এবং সাসটেইনেবল রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটেন্সি লিমিটেড-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধন করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও ক্যাপস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার।

উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে এখন কর্পোরেট সাফল্যের মাপকাঠি শুধু আর্থিক নয়; প্রতিষ্ঠান কতটা পরিবেশবান্ধব, কর্মীদের প্রতি কতটা মানবিক ও প্রশাসনিকভাবে কতটা স্বচ্ছ- এসবই এখন ব্যবসার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছে। বাংলাদেশ শিল্পোন্নয়নের পথে দ্রুত এগোলেও পরিবেশ দূষণ ও সুশাসনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইএসজি হতে পারে কার্যকর দিকনির্দেশনা।

কর্মশালার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, সম্পদের প্রকৃত মূল্যায়নে পরিবেশের ভূমিকা অপরিহার্য। গ্রিন টেকনোলজি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে- এটাই টেকসই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।

প্রশিক্ষক হিসেবে অংশ নেন সাসনেক্স লিমিটেড-এর পরিচালক ও জিআরআই সার্টিফায়েড প্রশিক্ষক মোন্তাসির নাহিদ, ডিবিএল গ্রুপ-এর সিনিয়র ম্যানেজার (সাসটেইনেবিলিটি) মাশুক চৌধুরী, গ্রিন ফাইন্যান্স প্রফেশনাল কারিমুল তুহিন এবং ইএসজি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাদমান সাকিব আনিক।

মোন্তাসির নাহিদ বলেন, বাংলাদেশে ইএসজি ও টেকসই রিপোর্টিং কাঠামো শক্তিশালী হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বচ্ছ রিপোর্টিং বিনিয়োগকারীর আস্থা বাড়াবে এবং কর্পোরেট ব্র্যান্ডের প্রতি বিশ্বাস তৈরি করবে।

ডিবিএল গ্রুপের মাশুক চৌধুরী বলেন, আমরা ইএসজি কমপ্লায়েন্সকে ব্যবসায়িক নীতির মূলভিত্তি হিসেবে নিয়েছি। উৎপাদন থেকে কর্মপরিবেশ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে টেকসই অনুশীলন নিশ্চিত করা এখন আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম।

গ্রিন ফাইন্যান্স প্রফেশনাল কারিমুল তুহিন বলেন, ব্যাংকিং খাতে ইএসজি কমপ্লায়েন্স এখন বৈশ্বিক আর্থিক দায়বদ্ধতার অংশ। এটি শুধু ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নয়, বিনিয়োগ আস্থারও নিশ্চয়তা।

ইএসজি ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক শাদমান সাকিব আনিক বলেন, ইএসজি এখন বৈশ্বিক ব্যবসা রূপান্তরের চালিকা শক্তি। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের কৌশল ও কাঠামো পুনর্গঠন করতে হবে।

এসবিসি বাংলাদেশ কনসালটেন্ট ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মো. রবিউল কবির বলেন, ইএসজি কেবল বড় কর্পোরেটদের বিষয় নয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সুশাসনের মানদণ্ডে নিজেদের অভ্যস্ত করতে হবে। এভাবেই বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টেকসই অবস্থান নিতে পারবে।

কর্মশালার সঞ্চালনা করেন স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আহসান কবির রুবেল। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হুমায়ুন কবির ও প্রভাষক মো. নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী।

অংশগ্রহণকারীদের মতে, এই প্রশিক্ষণ শুধু নীতি আলোচনায় সীমাবদ্ধ ছিল না- বরং বাংলাদেশের কর্পোরেট খাতে টেকসই চর্চাকে একটি বাস্তব প্রয়োগে রূপ দেওয়ার দিকনির্দেশনা দিয়েছে।