চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সেই পরিচিত ধূসর দরজার সামনে বুধবার সকাল থেকেই ভিড় জমতে শুরু করে। রোদ তখনো নরম, কিন্তু মানুষের চোখে-মুখে পড়া কষ্টের রেখা ছিল গাঢ়। কারও হাতে কাগজের ছোট ফাইল, কারও হাতে ওয়ারিশ সনদ বাতিলের আবেদন, আবার কেউ এসেছে সুপেয় পানির ব্যবস্থা কিংবা আদরের সন্তানের পড়ালেখার সহযোগিতা চাইতে। এসব মানুষ এসেছেন এক লক্ষ্য নিয়ে—একজন মানুষকে দেখতে, যিনি দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় দিনেই আলোড়ন তৈরি করেছেন তার মানবিকতার জন্য। তিনি হলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
হলরুমে ঢুকতেই যা চোখে পড়ে তা শুধু উপচেপড়া ভিড় নয়—দীর্ঘদিনের ভোগান্তি আর আশা মিশে থাকা মানুষের দৃষ্টি। একজন বৃদ্ধা কাঁপা হাতে অভিযোগপত্র ধরে আছেন, এক যুবক এসেছে পরিবারের নামজারি জটিলতা নিয়ে। পাশেই বসে আছেন বাঁশখালীর এক মধ্যবয়সী মানুষ, যিনি লবণাক্ত পানির সমস্যা থেকে মুক্তির আর্জি নিয়ে এসেছেন।

সবাই অপেক্ষা করছেন এক মানুষের সামনে নিজেদের কথা বলার জন্য। মানুষটি যখন প্রবেশ করলেন, পরিবেশে যেন আশ্বাসের হাওয়া বইল।
মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা যখন আবেদনগুলো পড়লেন, তখন তার মনোযোগ ও আচরণ দেখে বোঝা যায়—তার কাছে এসব কাগজ কেবল ডকুমেন্ট নয়, প্রতিটি মানুষের জীবন থেকে উঠে আসা যন্ত্রণার গল্প।
তিনি কোনো তাড়াহুড়ো করলেন না। প্রতিটি মানুষকে নাম ধরে ডাকলেন, সময় দিলেন, সমস্যাটি বুঝে নিলেন, তারপর সমাধান দিলেন—কখনও নির্দেশ দিয়ে, কখনও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে।
এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আসেন নিজের পড়ালেখার খরচ এবং ছোট বোনের স্কুলের বেতন মওকুফের আবেদন নিয়ে। পরিস্থিতি শুনে ডিসি স্যার সঙ্গে সঙ্গে বোনের বেতন মওকুফ করেন এবং ছাত্রটির জন্য নিয়মিত আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেন।
নাম প্রকাশ না করে শিক্ষার্থী বলেন, স্যার আমার পরিবারকে বাঁচিয়ে দিলেন। এভাবে কেউ শোনে না, কিন্তু উনি শুনলেন। তার চোখের পানি যেন গণশুনানির মানবিকতার সত্যিকারের স্বাক্ষর।
যারা ঘরে ঢুকেছিলেন ভর দেওয়া ক্লান্তি ও দুশ্চিন্তায়, তারা বের হলেন হাসিমুখে। কেউ সমস্যার সমাধান পেয়েছেন, কেউ আশ্বাসের আলো।

সবার কণ্ঠে একই কথা, এই ডিসি স্যারটা যেন সবসময় এমনই থাকেন।
দিন শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, মানুষ আশা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। তাদের কথা শোনা এবং সমস্যার সমাধান করা আমাদের দায়িত্ব। দুঃস্থ বা বয়োবৃদ্ধ—আমার অফিস সবার জন্য উন্মুক্ত। নিয়মিত গণশুনানি মানুষের আস্থা বাড়ায় এবং প্রশাসনকে জনগণের কাছাকাছি নিয়ে আসে।

ডেস্ক রিপোর্ট 






















