সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় মানুষ প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া প্রতিকারমূলক উপায়ের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে রোগ প্রতিরোধে উপকারী ও পানিশূন্যতা পূরণে কার্যকর ডাবের পানি এখন ঘরে ঘরে দরকারি উপকরণ হয়ে উঠেছে। এই চাহিদার প্রভাব পড়েছে পিরোজপুরের বাজারেও। জেলার প্রায় সব উপজেলায় ডাবের চাহিদা বেড়ে গেছে দ্বিগুণের বেশি। তবে এখন আষাঢ় মাস হওয়ায় ফলন তুলনামূলক কম, ফলে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে। এতে করে একদিকে যেমন দাম বেড়েছে, অন্যদিকে অনেকেই প্রয়োজনের সময় পাচ্ছেন না ডাব।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন আষাঢ় মাস, প্রাকৃতিকভাবেই ডাবের সরবরাহ কম থাকে। তার ওপর বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় সরবরাহ-বিপণনে চাপ বেড়েছে। এতে দামও কিছুটা বেড়েছে। পাশাপাশি হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তারা অতিরিক্ত সরবরাহ করতে পারছেন না। তার ওপর এখন ডাবের মৌসুম না হওয়ায় ফলন তুলনামূলকভাবে কম।
সদর উপজেলার পাঁচপাড়া এলাকার বিক্রেতা আরিফ হোসেন বলেন, আগে প্রতিদিন পাইকারি ৩০-৪০টা ডাব বিক্রি করতাম। এখন ৭০-৮০টা গেলেও চাহিদা মিটছে না। ডেঙ্গু রোগীর কারণে চাহিদা বেড়েছে।
নেছারাবাদ উপজেলার অলংকারকাঠি গ্রামের ডাব ব্যবসায়ী হারুন ফকির বলেন, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ট্রাকে করে ডাব পাঠানো হয়। এতে স্থানীয় বাজারে চাহিদা অনুযায়ী ডাব রাখা যাচ্ছে না।
স্বাস্থ্যসচেতনতা ও চিকিৎসকদের পরামর্শে ডাবের চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) সুরঞ্জিত কুমার সাহা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডেঙ্গুতে শরীরে প্লেটলেট কমে যায় ও পানিশূন্যতা দেখা দেয়। ডাবের পানি এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় খুবই কার্যকর। এ কারণে আমরা অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর পরিবারকে ডাবের পানি খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ডাবের পানিতে থাকা প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইটস শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, হজমে সহায়তা করে এবং কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে। তাই ডেঙ্গু, জ্বর বা অন্যান্য ভাইরাল সংক্রমণে এটি কার্যকর একটি উপাদান।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার বাইরে, আগাম প্রতিরোধেও স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ এখন নিয়মিত ডাব খাচ্ছেন। যার প্রভাব বাজারে সরাসরি পড়ছে।
তবে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে চাহিদা স্থায়ী হলে সরকারকে ডাব চাষে উৎসাহ এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারি বাড়াতে হবে।
পিরোজপুর জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দেবাশিস রায় বলেন, আমরা এর আগেও ডাবের বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি, আবারও করবো। অভিযান পরিচালনার সময় গুরুত্ব দেওয়া হবে কত টাকায় ডাব কেনা হচ্ছে আর কত টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে তার ওপর।
পিরোজপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহসানুল কবির বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপে ডাবের চাহিদা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। এ সময় আমরা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি, যেন নির্ধারিত দামের বাইরে কেউ পণ্য বিক্রি না করে।
সার্বিক বিষয়ে পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুনুর রশিদ বলেন, দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রভাবে বাজারে ডাবের চাহিদা বেড়েছে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার প্রস্তুতি রয়েছে। কেউ যদি অতিরিক্ত মুনাফার আশায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায়, তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে আমরা স্থানীয় কৃষকদের ডাব চাষে উৎসাহিত করার বিষয়েও চিন্তা করছি, যাতে করে ভবিষ্যতে সরবরাহে ঘাটতি না হয়।