ঢাকা ১১:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫

২০২৬ সালের ১ জুলাই পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হবে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৭:১৩:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • ২৯ বার দেখা হয়েছে

পায়রা বন্দরের টার্মিনাল, সংযোগ সড়ক ও আন্ধারমানিক নদের ওপর সেতু নির্মাণ শেষে ২০২৬ সালের ১ জুলাই পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হবে। বলে জানিয়েছেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের (পিপিএ) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল ।

পায়রা বন্দরের উন্নয়ন, অগ্রগতি, সম্ভাবনা এবং অপারেশনাল কার্যক্রম বিষয়ক মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি পটুয়াখালীরকলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়ায় অবস্থিত পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল (পিপিএফটি) ভবনে সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে এমতবিনিময়সভায় তিনি একথা বলেছেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের প্রারম্ভিক সুযোগ-সুবিধাদি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পায়রা বন্দরের নিজস্ব টার্মিনালের অপারেশন শুরুর আগেই অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ইতোমধ্যে পায়রা বন্দর ৫২৯টি বৈদেশিক জাহাজ ও ৩ হাজার ৪২৬টি দেশীয় লাইটারেজ জাহাজ নিরাপদে হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হয়েছে। এতে সরকার প্রায় ২ হাজার ৭৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমান সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পটুয়াখালীর
কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের কথা সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে। এর কাজ খুব দ্রুতই শুরু হবে। এ সড়ক নির্মিত হলে গোটা দক্ষিনাঞ্চলের চিত্র পাল্টে যাবে।
পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে বন্দরের চেয়ারম্যান বলেন, পায়রা বন্দরকে ঘিরে এ অঞ্চলে শিল্প ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগ হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বন্দর সীমায় অবস্থিত দুটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বন্দরের ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পটুয়াখালীর আউলিয়াপুরে ৪১০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), বন্দরের নিজস্ব শিল্পাঞ্চলের কথা তুলে ধরেন। এখানে বিনিয়োগের জন্য একাধিক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে সচল
হওয়ার পর বন্দর ও বন্দরনির্ভর যে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে সেটা দক্ষিণাঞ্চলের একটি তুলনামূলক অনগ্রসর জনপদকে সমৃদ্ধ করা তথা দেশের অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব অবদান রাখবে বলেও তিনি জানান। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বন্দরের অগ্রযাত্রায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহায়তার জন্য তিনি সকলকে আহবান জানান।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের (পিপিএ) আয়োজনে এ সভায় অন্যদের মধ্যে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) পরিমল চন্দ্র বসু, সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন চৌধুরী, হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন এস এম শরীফুর রহমান, উপ পরিচালক (নিরাপত্তা) মো. আজিজুর রহমান প্রমুখ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমডোর মোহাম্মদ আবদুল কাদের পায়রা বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম, ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে এ বন্দর কী ভূমিকা রাখবে তার ওপর একটি ‘ভিডিও ডকুমেন্টরি’ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীসহ অংশীজনদের কাছে উপস্থাপন করেন।

পায়রা বন্দর ব্যবহারের সুবিধাসমূহ :
লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়ায় অবস্থিত পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ভবন এলাকায় আধুনিক ইকুইপমেন্ট সুবিধা সম্বলিত ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মূল জেটি, ৩ লক্ষ ২৫ হাজার বর্গ মিটার আয়তনের ব্যাকআপ ইয়ার্ড এবং ১০ হাজার বর্গ মিটারের আধুনিক সিএফএস সুবিধার ওয়ার হাউসের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালে ভিড়ে এক সঙ্গে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিনটি মাদারভ্যাসেল পণ্য খালাস
করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম টার্মিনাল উদ্বোধনের পরই পুরোপুরি বাণিজ্যিক কার্যক্রম
শুরু হবে পায়রা বন্দরের। পায়রা বন্দরের পাশ দিয়ে বহমান রাবনাবাদ চ্যানেলটি ৭৫ কি. মি. দীর্ঘ। এর প্রশস্ততা কোথাও ১২৫ মিটার এবং কোথাও ১৪০ মিটার। যার কারণে এ চ্যানেলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৩২ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট প্যানামেক্স আকৃতির জাহাজ চলাচল করতে পারবে। ইনার চ্যানেলে একই সময়ে ১০-১৫টি বানিজ্যিক জাহাজ ট্রান্সশিপমেন্ট করতে পারবে। এ ছাড়া চব্বিশ ঘন্টা নৌ পথ ব্যবহার করে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ট্রান্সশিপমেন্ট করতে পারবে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কপথের সামগ্রিক উন্নয়ন হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা সড়কপথ ব্যবহার করে চার ঘন্টায় ঢাকায় যানজটবিহীনভাবে কার্গো পরিবহন করতে পারবে। রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটার হওয়ায় সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারবে মাদার ভ্যাসেল। এ বন্দরে জটবিহীন বার্থিং-আন বার্থিং সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। যার ফলে অন্য সব বন্দরের তুলনায় পণ্য পরিবহন খরচ কম হবে এখানে। এ কারণে বন্দরটি ঘিরে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রথম টার্মিনাল প্রকল্পের সঙ্গে জেটি ছাড়াও রয়েছে আন্দারমানিক নদের ওপর ১ দশমিক ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল সেতু। এ সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এ সেতুর জেটির সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সাথে বন্ধন তৈরি করবে সড়ক পথের।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন এস এম শরীফুর রহমান জানান,’পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে এ অঞ্চলের ব্যবসাবাণিজ্য সমৃদ্ধ হবে। অদূর ভবিষ্যতে পায়রা বন্দর হয়ে উঠবে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র।’
বন্দরের প্রকৌশলীরা জানান, সার্ভিস জেটি এবং জেটি সংলগ্ন সড়কের কাজ ৯৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, ইয়ার্ড এবং জেটির কাজ ৬৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ছয় লেনের সংযোগ সড়ক ও সেতুর কাজ প্রায় শেষের পথে। এ ছাড়া বানতিপাড়া বাজার থেকে সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ছয় লেনের সড়কের কাজও শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত পায়রা বন্দরের উন্নয়ন
কার্যক্রমে ৭ হাজার ৩৮১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে মতবিনিময়সভায় জানান বন্দরের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমডোর মোহাম্মদ আবদুল কাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করছে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন, চায়না হারবার অ্যান্ড চ্যানেল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো, চায়না শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন।

ব্যবসায়ীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অভিমত :
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘পায়রা বন্দরকে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি আঞ্চলিক সহায়ক কেন্দ্রে পরিনত করার জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল তথা সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পায়রা বন্দর যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। নদীকে বাঁচিয়ে রাখা যেমন জরুরী, তেমনি নদ-নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, বিশেষ করে ইলিশ মাছ যাতে টিকে থাকে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। বন্দরের চ্যানেল ব্যবহারের যথেচ্ছারের কারণে যাতে বিশাল মৎস্য সম্পদের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।’
ঢাকার ব্যবসায়ী সুমন হাওলাদার বলেন, ‘পায়রা বন্দর হবে আমদানি-রপ্তানির নতুন হাব।’
এসব ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও মতবিনিময়সভায় বন্দর ব্যবহারকারী-অংশীজন এবং বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন এবং বন্দরের বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন-উদ্যোগের জন্য মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন প্রবেশদ্বার হিসেবে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে গড়ে তোলা হচ্ছে।
২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়ায় দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রমের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। ২০১৬ সালের ১৩ আগষ্ট এ সমুদ্র বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। অপরদিকে ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়ায় পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের (পিপিএফটি) উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু হয়।

২০২৬ সালের ১ জুলাই পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হবে

প্রকাশিত : ০৭:১৩:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

পায়রা বন্দরের টার্মিনাল, সংযোগ সড়ক ও আন্ধারমানিক নদের ওপর সেতু নির্মাণ শেষে ২০২৬ সালের ১ জুলাই পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হবে। বলে জানিয়েছেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের (পিপিএ) চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাসুদ ইকবাল ।

পায়রা বন্দরের উন্নয়ন, অগ্রগতি, সম্ভাবনা এবং অপারেশনাল কার্যক্রম বিষয়ক মতবিনিময়সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি পটুয়াখালীরকলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়ায় অবস্থিত পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল (পিপিএফটি) ভবনে সাংবাদিকসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে এমতবিনিময়সভায় তিনি একথা বলেছেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের প্রারম্ভিক সুযোগ-সুবিধাদি নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পায়রা বন্দরের নিজস্ব টার্মিনালের অপারেশন শুরুর আগেই অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ইতোমধ্যে পায়রা বন্দর ৫২৯টি বৈদেশিক জাহাজ ও ৩ হাজার ৪২৬টি দেশীয় লাইটারেজ জাহাজ নিরাপদে হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম হয়েছে। এতে সরকার প্রায় ২ হাজার ৭৯ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।
বর্তমান সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পটুয়াখালীর
কুয়াকাটা পর্যন্ত মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণের কথা সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে। এর কাজ খুব দ্রুতই শুরু হবে। এ সড়ক নির্মিত হলে গোটা দক্ষিনাঞ্চলের চিত্র পাল্টে যাবে।
পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে বন্দরের চেয়ারম্যান বলেন, পায়রা বন্দরকে ঘিরে এ অঞ্চলে শিল্প ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগ হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বন্দর সীমায় অবস্থিত দুটি তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বন্দরের ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পটুয়াখালীর আউলিয়াপুরে ৪১০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড), বন্দরের নিজস্ব শিল্পাঞ্চলের কথা তুলে ধরেন। এখানে বিনিয়োগের জন্য একাধিক বিদেশি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বন্দর পূর্ণাঙ্গভাবে সচল
হওয়ার পর বন্দর ও বন্দরনির্ভর যে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে সেটা দক্ষিণাঞ্চলের একটি তুলনামূলক অনগ্রসর জনপদকে সমৃদ্ধ করা তথা দেশের অর্থনীতিতে অভূতপূর্ব অবদান রাখবে বলেও তিনি জানান। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বন্দরের অগ্রযাত্রায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে সহায়তার জন্য তিনি সকলকে আহবান জানান।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের (পিপিএ) আয়োজনে এ সভায় অন্যদের মধ্যে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) পরিমল চন্দ্র বসু, সদস্য (হারবার অ্যান্ড মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন চৌধুরী, হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন এস এম শরীফুর রহমান, উপ পরিচালক (নিরাপত্তা) মো. আজিজুর রহমান প্রমুখ কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমডোর মোহাম্মদ আবদুল কাদের পায়রা বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম, ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে এ বন্দর কী ভূমিকা রাখবে তার ওপর একটি ‘ভিডিও ডকুমেন্টরি’ উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীসহ অংশীজনদের কাছে উপস্থাপন করেন।

পায়রা বন্দর ব্যবহারের সুবিধাসমূহ :
লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়ায় অবস্থিত পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ভবন এলাকায় আধুনিক ইকুইপমেন্ট সুবিধা সম্বলিত ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মূল জেটি, ৩ লক্ষ ২৫ হাজার বর্গ মিটার আয়তনের ব্যাকআপ ইয়ার্ড এবং ১০ হাজার বর্গ মিটারের আধুনিক সিএফএস সুবিধার ওয়ার হাউসের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালে ভিড়ে এক সঙ্গে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিনটি মাদারভ্যাসেল পণ্য খালাস
করতে পারবে।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম টার্মিনাল উদ্বোধনের পরই পুরোপুরি বাণিজ্যিক কার্যক্রম
শুরু হবে পায়রা বন্দরের। পায়রা বন্দরের পাশ দিয়ে বহমান রাবনাবাদ চ্যানেলটি ৭৫ কি. মি. দীর্ঘ। এর প্রশস্ততা কোথাও ১২৫ মিটার এবং কোথাও ১৪০ মিটার। যার কারণে এ চ্যানেলে ২২৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ৩২ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট প্যানামেক্স আকৃতির জাহাজ চলাচল করতে পারবে। ইনার চ্যানেলে একই সময়ে ১০-১৫টি বানিজ্যিক জাহাজ ট্রান্সশিপমেন্ট করতে পারবে। এ ছাড়া চব্বিশ ঘন্টা নৌ পথ ব্যবহার করে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা ট্রান্সশিপমেন্ট করতে পারবে। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সড়কপথের সামগ্রিক উন্নয়ন হলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা সড়কপথ ব্যবহার করে চার ঘন্টায় ঢাকায় যানজটবিহীনভাবে কার্গো পরিবহন করতে পারবে। রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা ১০ দশমিক ৫ মিটার হওয়ায় সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারবে মাদার ভ্যাসেল। এ বন্দরে জটবিহীন বার্থিং-আন বার্থিং সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। যার ফলে অন্য সব বন্দরের তুলনায় পণ্য পরিবহন খরচ কম হবে এখানে। এ কারণে বন্দরটি ঘিরে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
প্রথম টার্মিনাল প্রকল্পের সঙ্গে জেটি ছাড়াও রয়েছে আন্দারমানিক নদের ওপর ১ দশমিক ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল সেতু। এ সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এ সেতুর জেটির সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সাথে বন্ধন তৈরি করবে সড়ক পথের।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার ক্যাপ্টেন এস এম শরীফুর রহমান জানান,’পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে এ অঞ্চলের ব্যবসাবাণিজ্য সমৃদ্ধ হবে। অদূর ভবিষ্যতে পায়রা বন্দর হয়ে উঠবে দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র।’
বন্দরের প্রকৌশলীরা জানান, সার্ভিস জেটি এবং জেটি সংলগ্ন সড়কের কাজ ৯৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, ইয়ার্ড এবং জেটির কাজ ৬৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ছয় লেনের সংযোগ সড়ক ও সেতুর কাজ প্রায় শেষের পথে। এ ছাড়া বানতিপাড়া বাজার থেকে সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ছয় লেনের সড়কের কাজও শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত পায়রা বন্দরের উন্নয়ন
কার্যক্রমে ৭ হাজার ৩৮১ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে মতবিনিময়সভায় জানান বন্দরের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) কমডোর মোহাম্মদ আবদুল কাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করছে চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন, চায়না হারবার অ্যান্ড চ্যানেল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো, চায়না শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন।

ব্যবসায়ীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের অভিমত :
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘পায়রা বন্দরকে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য একটি আঞ্চলিক সহায়ক কেন্দ্রে পরিনত করার জন্য বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল তথা সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে পায়রা বন্দর যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ। নদীকে বাঁচিয়ে রাখা যেমন জরুরী, তেমনি নদ-নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, বিশেষ করে ইলিশ মাছ যাতে টিকে থাকে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। বন্দরের চ্যানেল ব্যবহারের যথেচ্ছারের কারণে যাতে বিশাল মৎস্য সম্পদের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।’
ঢাকার ব্যবসায়ী সুমন হাওলাদার বলেন, ‘পায়রা বন্দর হবে আমদানি-রপ্তানির নতুন হাব।’
এসব ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও মতবিনিময়সভায় বন্দর ব্যবহারকারী-অংশীজন এবং বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের গণমাধ্যমকর্মীরা অংশ নেন এবং বন্দরের বিভিন্ন খাতে উন্নয়ন-উদ্যোগের জন্য মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের অর্থনীতির নতুন প্রবেশদ্বার হিসেবে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে গড়ে তোলা হচ্ছে।
২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়ায় দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হিসেবে পায়রা বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রমের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। ২০১৬ সালের ১৩ আগষ্ট এ সমুদ্র বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। অপরদিকে ২০২২ সালের ২৭ অক্টোবর উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়ায় পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের (পিপিএফটি) উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু হয়।