পঞ্চগড়ের বোদা পৌর বাজারে অগ্নি নির্বাপনের জন্য আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার স্থাপন করা হয়েছিল ১৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে। দুই লক্ষ লিটার ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই রিজার্ভারটি উদ্বোধনের দেড় মাসের মধ্যেই কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এতে পানি না থাকায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।
বোদা পৌরসভার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা বোদা পৌরবাজারে শুষ্ক মৌসুমে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তবে পর্যাপ্ত পানির অভাবে আগুন নেভানো কঠিন হয়ে পড়ে এবং ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। এই বিষয়টি মাথায় রেখে পৌর কর্তৃপক্ষ অগ্নি নির্বাপনের লক্ষ্যে রিজার্ভারটি নির্মাণ করে।
রিজার্ভারের সঙ্গে একটি পাম্প হাউসও নির্মাণ করা হয়েছে, যা সার্বক্ষণিক পানি উত্তোলন ও সরবরাহে সক্ষম। এটি ফায়ার সার্ভিসের স্ট্যান্ডার্ড হোস সংযোগের উপযোগীভাবে নির্মিত হয়েছে, যাতে জরুরি সময়ে সহজেই সংযোগ নিয়ে আগুন নেভানো যায়। নিরাপত্তার স্বার্থে এতে লকিং সিস্টেম এবং গার্ডরুমও স্থাপন করা হয়েছে।
কিন্তু উদ্বোধনের কিছুদিন পর থেকেই রিজার্ভারে পানি না থাকায় সেটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভর্তি করা পানি কয়েক দিনের মধ্যেই শুকিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, বোদা পৌরসভার অর্থায়নে এই নির্মাণকাজ শুরু হয় চলতি বছরের ১১ মার্চ এবং শেষ হয় ৫ মে। উদ্বোধনের পর থেকেই রিজার্ভারে পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারের ব্যবসায়ী আল মামুন বলেন, বোদা বাজারে প্রতিবছরই দুই-একবার আগুন লাগে। সেই কারণেই পৌরসভা আমাদের জন্য এই রিজার্ভার তৈরি করেছে। কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই এতে পানি থাকছে না। পানি না থাকলে এই ট্যাংকি অর্থহীন। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।
আরেক ব্যবসায়ী যুক্ত বাবু বলেন, এই পানির ট্যাংকি আগুন লাগলে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু এখন পানি না থাকায় আমরা ঝুঁকিতে আছি। হঠাৎ আগুন লাগলে বড় ধরনের বিপদ হবে।
সুকুমার দত্ত বলেন, এত টাকা খরচ করে রিজার্ভার তৈরি করা হলো, কিন্তু পানি না থাকলে এর কোনো লাভ নেই। আমরা ভেবেছিলাম এটি খুব কার্যকর হবে, কিন্তু সেটি হয়নি।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তিন-চার দিন আগেও পানি ভরাট করা হয়েছিল, কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই পানি নিচে নেমে গেছে। এখনো দুই মাস হয়নি, এর মধ্যেই পানি থাকছে না। আগুন লাগলে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
বোদা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী দীপঙ্কর অধিকারী বলেন, ১৫ লাখ ৮৩ হাজার টাকা ব্যয়ে আমরা এই আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার নির্মাণ করেছি, যার ধারণক্ষমতা দুই লক্ষ লিটার। সম্প্রতি আমরা লক্ষ্য করেছি, রিজার্ভারে পানি থাকছে না। ইউএনও স্যার নিজে এসে পরিদর্শন করেছেন এবং আমাদের দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে বলেছেন। আমরা পরীক্ষা করে দ্রুত রিপেয়ার করব।
এ বিষয়ে বোদা পৌরসভার প্রশাসক রবিউল ইসলাম বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বোদা বাজার এলাকায় পানি সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়েছে। পরিদর্শনের সময় দেখা গেছে, সম্ভবত কোনো লিকেজ বা প্রযুক্তিগত কারণে পানি কমে যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনকে দ্রুত মেরামত করে পুনরায় পানি সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।