বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সেচ বিভাগের অধীনে নেওয়া ‘মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পে’ ২৪৮ কোটি টাকা নয়ছয়ের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রকল্প পরিচালনা, ঠিকাদার নিয়োগ থেকে শুরু করে কৃষকদের কাছ থেকে ঘুষ আদায়- সবক্ষেত্রেই অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে দুদকের অনুসন্ধানে।
দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর অঞ্চলকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কাগজে-কলমে প্রকল্পটির ৭০–৭৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কাজের অগ্রগতি খুবই কম বলে জানা গেছে। প্রকল্পের ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি, কাগজে-কলমে প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখানো, কৃষকদের কাছ থেকে ঘুষগ্রহণ, নিন্মমানের কাজ এবং কমিশন বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগের তির বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাবেক এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের দিকে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের ডিপিপিতে নির্ধারিত নকশা ও মান অনুযায়ী ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের সেচ অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়নি। তাছাড়া ঠিকাদার কাজ শেষ করে বিল তুলতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক (২%), সহকারী প্রকৌশলী (১%), সাইট অফিসার (২%) এবং হিসাব সহকারীকে (১%) কমিশন প্রদান বাধ্যতামূলক ছিল বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের এই ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পের অবশিষ্ট অংশ বাস্তবায়নে বরাদ্দ ৫৬ কোটি টাকার কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করার দাবিতে প্রকল্প কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধনও করেন স্থানীয়রা।
দুদকের এনফোর্সমেন্ট অভিযান
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকার বিএডিসি কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নীলকমল পাল।
অভিযানকালে দেখা যায়, চার বছরে কাগজপত্রে প্রকল্পটির অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৭৫ শতাংশ। ২৪৮ কোটি টাকার প্রকল্পে ইতোমধ্যে ১৯২ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হলেও বাস্তবে তা প্রতিফলিত হয়নি। প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ নয়-ছয় এবং কাজের অস্তিত্বহীনতার কারণে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিম অনুসন্ধানের সুপারিশ করে।
অভিযান শেষে নীলকমল পাল তখন সাংবাদিকদের বলেন, ‘২৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিএডিসির কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। আমরা মাঠপর্যায়েও তদন্ত করব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।’

ডেস্ক রিপোর্ট 






















