২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে শিল্প সহায়ক হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে দেশের প্রধান রপ্তানিমুখী খাত তৈরি পোশাকশিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ। তবে সংগঠনটি জানিয়েছে, বাজেটে তাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, যা খাতটির প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং এলডিসি পরবর্তী বাস্তবতায় অভিযোজনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সোমবার (২ জুন) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাজেট ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, জুলাইয়ের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দেশে যে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, তার আলোকে বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনীতির লক্ষ্যে প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী ও প্রাসঙ্গিক। বাজেট ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের মাননীয় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সুবিধা, কর্মসংস্থান এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়াকে বিজিএমইএ ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য, বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে উৎপাদন ব্যয় ১০ শতাংশ হ্রাস এবং বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর ঘোষণাও শিল্পের জন্য আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ বলে মনে করছে সংগঠনটি।
এছাড়া, এলএনজি আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট অব্যাহতি এবং পেট্রোলিয়াম ও ডিজেলের আমদানি শুল্ক হ্রাসের ফলে শিল্পের উৎপাদন ব্যয় কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিজিএমইএ। সেই সঙ্গে নারী উদ্যোক্তা, তরুণ উদ্যোক্তা ও ইকোনমি উন্নয়নে ঘোষিত বিশেষ তহবিলগুলোকেও তারা স্বাগত জানিয়েছে।
তবে বিজিএমইএর মতে, পোশাক শিল্প যে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল, ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি, মজুরি বৃদ্ধি এবং জ্বালানি খাতে খরচ বৃদ্ধির যে বাস্তবতা, তা মোকাবেলায় বাজেটে কিছু মৌলিক প্রস্তাব উপেক্ষিত হয়েছে। বিশেষত, ২০২৬ সালে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের পর বাজার প্রতিযোগিতা বাড়বে, ফলে এখন থেকেই শিল্পে আরও সহায়তা প্রয়োজন।
প্রস্তাবিত বাজেটে রপ্তানির বিপরীতে উৎসে কর ও শিল্প খাতে করপোরেট কর অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে—যা বিজিএমইএ প্রশংসনীয় বলে উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়া এবং বন্ড ব্যবস্থাকে সহজীকরণের লক্ষ্যে আনা কয়েকটি সংশোধন—যেমন বন্ড নবায়নের মেয়াদ, এফওসি ভিত্তিক কাঁচামাল আমদানির শর্ত হ্রাস, মেশিন জরিপে কর্মকর্তা পরিবর্তন, কম মূল্যের পণ্যে শুল্ক ছাড়, এবং ইপিজেডের কিছু যন্ত্রে শুল্ক অব্যাহতি—এসবকে তারা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখেছে।
তবে বিজিএমইএর দেওয়া আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। এর মধ্যে রয়েছে —
১. আরও কিছু যন্ত্রপাতি ও উপকরণকে শুল্কমুক্ত বা রেয়াতি সুবিধার আওতায় আনা।
২. পোশাক শিল্পের জন্য প্রযোজ্য পণ্য ও সেবাকে সম্পূর্ণ ভ্যাটমুক্ত রাখা।
৩. এইচএস কোড সহজীকরণ এবং বন্ডড ও নন-বন্ডড প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া সহজীকরণ।
৪. সার্কুলার ফ্যাশন ও রিসাইকেল শিল্পে ব্যবহৃত সব উপকরণকে শুল্ক ও ভ্যাটমুক্ত রাখা।
এছাড়া, প্রস্তাবিত বাজেটের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগে তাদের উপেক্ষিত দাবিগুলো সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনবে এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে বিজিএমইএ।