ঢাকা ০২:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫

ময়মনসিংহের ভালুকায় ট্রিপল মার্ডার প্রধান আসামি নজরুল ইসলাম

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৮:২২:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • ৫০ বার দেখা হয়েছে

ময়মনসিংহের ভালুকায় মা ও দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি নজরুল ইসলামের পারিবারিক অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের পরিবারে মানসিক রোগের ইতিহাস রয়েছে। নজরুলের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার এলাকায় স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রফিকুল ও নজরুল ছোট থাকতেই তার মা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর থেকে তারা দুই ভাই নেত্রকোণা সদরে তার ফুফুর বাড়িতে বড় হতে থাকেন। পরর্তীতে জীবিকার তাগিদে নেত্রকোণা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় নজরুল ও রফিকুল।

স্থানীয়রা বলছেন, রফিকুল ও নজরুলের বাবা সলতু মিয়া মানসিক বিকারগ্রস্ত, এক কথায় বদ্ধ উন্মাদ। সলতু মিয়া বসবাস করেন সরকারি জায়গায়, নিজের ভিটে-মাটি বলতে কিছু নেই। সে প্রায় সময় বাজারের আশপাশে ঘোরাফেরা করে। কারও সাথে কথা বলে না, কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে তারও উত্তর দেয় না। ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে সলতু মিয়া তার বোনকে নিয়ে বসবাস করেন। তার বোন রসু আক্তারও মানসিক ভারসাম্যহীন। সলতু মিয়ার এক বড় ভাই ছিলেন, যিনি অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। তিনিও মানসিক রোগী ছিলেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

তবে মানসিক বিকারগ্রস্ত হলেও কখনও মানুষকে আঘাত করা বা মারধর করার মতো ঘটনা ঘটাননি সলতু মিয়া বা তার বোন। কিন্তু নজরুল ও রফিকুল তারা দুই ভাই একসাথে থাকাকালীন যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে, এটি জানার পর এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সবার মুখে মুখে একই কথা, আসলেই কি নজরুল তাদের তিনজনকে হত্যা করেছে। নাকি ঘটনা অন্য কিছু?

সেনের বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. হৃদয় চাঁদ বলেন, তারা দুই ভাই ছোট থাকতেই তার মা একটি রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। তারপর থেকে তারা দুই ভাই নেত্রকোণায় তার ফুফুর কাছে বড় হয়েছে শুনেছি। তারা দুই ভাই তাদের এক ফুফুর বাড়িতে বড় হলেও তার বাবা সলতু মিয়া বোন রসু আক্তারকে নিয়ে থেকে যান কেন্দুয়াতে। আমরা ছোট থেকেই দেখছি সলতু মিয়া এবং তার বোন দুজনেই মানসিক রোগী।

আকবর আলী নামের আরেকজন জানান, সলতু মিয়ার বউ মারা যাওয়ার পরে তার দুইটা ছেলে নেত্রকোণায় তার ফুফুর বাড়িতে চলে যায়। সেখান থেকে বড় হয়ে তারা দুজন আলাদা হয়ে যায়। সলতু মানসিক রোগী, তার মাথা ঠিক নেই। তার কোনো বাড়ি-ঘর নেই। সে এবং তার বোন সেনের বাজারে সরকারি জায়গায় ঝুপড়ি একটি ঘরে বসবাস করেন

স্থানীয় সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম জানান, নজরুল ও রফিকুল তারা দুই ভাই ছোটবেলা থেকে অন্যত্র বড় হয়েছেন। কিন্তু তার বাবা কেন্দুয়াতেই ছিলেন। উনার মানসিক ভারসাম্য নেই, যার কারণে উনি অগোছালো অবস্থায় বাজারে বাজারে ঘোরাফেরা করেন। তার আরেক বোন রসু আক্তারকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন, তারা দুজনেই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাদের আরেক বড় ভাই ছিলেন, যিনি মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। তিনিও মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানতে পেরেছি। বলতে গেলে মানসিক রোগ বিষয়টি যেন তাদের পারিবারিক একটি রোগ!

কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ভালুকায় যে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে তাদের বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায়। তবে তারা এখানে কেউ বসবাস করতেন না। সবাই চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করতেন। তবে রফিকুল ও নজরুলের বাবা এখানেই বসবাস করতেন। তবে তাদের নিজস্ব কোনো বসতভিটে নেই। এবং এখন পর্যন্ত আমরা যতটুক শুনতে পারছি তার বাবা এবং তার ফুফু দুজনেই মানসিক ভারসাম্যহীন। হত্যাকাণ্ডের পর দায়ের করা মামলার আসামি নজরুলের বাড়ি যেহেতু কেন্দুয়াতে ছিল, তাই আমরা তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে ছিলাম।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১৪ জুলাই) ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই শিশুসহ মাকে গলা কেটে হত‍্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নিহত হন ময়না আক্তার (২৫) ও তার দুই শিশু সন্তান রাইসা (৭) ও নিরব (২)। ঘটনার পর ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আকতার উল আলম জানান, পারিবারিক কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে। এরপর মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে জেলা পুলিশের একটি দল গ্রেপ্তার করে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. নজরুল ইসলামকে।

ময়মনসিংহের ভালুকায় ট্রিপল মার্ডার প্রধান আসামি নজরুল ইসলাম

প্রকাশিত : ০৮:২২:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

ময়মনসিংহের ভালুকায় মা ও দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি নজরুল ইসলামের পারিবারিক অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের পরিবারে মানসিক রোগের ইতিহাস রয়েছে। নজরুলের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সেনের বাজার এলাকায় স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রফিকুল ও নজরুল ছোট থাকতেই তার মা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। এরপর থেকে তারা দুই ভাই নেত্রকোণা সদরে তার ফুফুর বাড়িতে বড় হতে থাকেন। পরর্তীতে জীবিকার তাগিদে নেত্রকোণা ছেড়ে অন্যত্র চলে যায় নজরুল ও রফিকুল।

স্থানীয়রা বলছেন, রফিকুল ও নজরুলের বাবা সলতু মিয়া মানসিক বিকারগ্রস্ত, এক কথায় বদ্ধ উন্মাদ। সলতু মিয়া বসবাস করেন সরকারি জায়গায়, নিজের ভিটে-মাটি বলতে কিছু নেই। সে প্রায় সময় বাজারের আশপাশে ঘোরাফেরা করে। কারও সাথে কথা বলে না, কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে তারও উত্তর দেয় না। ছোট একটি ঝুপড়ি ঘরে সলতু মিয়া তার বোনকে নিয়ে বসবাস করেন। তার বোন রসু আক্তারও মানসিক ভারসাম্যহীন। সলতু মিয়ার এক বড় ভাই ছিলেন, যিনি অনেক আগেই মারা গিয়েছেন। তিনিও মানসিক রোগী ছিলেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

তবে মানসিক বিকারগ্রস্ত হলেও কখনও মানুষকে আঘাত করা বা মারধর করার মতো ঘটনা ঘটাননি সলতু মিয়া বা তার বোন। কিন্তু নজরুল ও রফিকুল তারা দুই ভাই একসাথে থাকাকালীন যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে, এটি জানার পর এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সবার মুখে মুখে একই কথা, আসলেই কি নজরুল তাদের তিনজনকে হত্যা করেছে। নাকি ঘটনা অন্য কিছু?

সেনের বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. হৃদয় চাঁদ বলেন, তারা দুই ভাই ছোট থাকতেই তার মা একটি রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। তারপর থেকে তারা দুই ভাই নেত্রকোণায় তার ফুফুর কাছে বড় হয়েছে শুনেছি। তারা দুই ভাই তাদের এক ফুফুর বাড়িতে বড় হলেও তার বাবা সলতু মিয়া বোন রসু আক্তারকে নিয়ে থেকে যান কেন্দুয়াতে। আমরা ছোট থেকেই দেখছি সলতু মিয়া এবং তার বোন দুজনেই মানসিক রোগী।

আকবর আলী নামের আরেকজন জানান, সলতু মিয়ার বউ মারা যাওয়ার পরে তার দুইটা ছেলে নেত্রকোণায় তার ফুফুর বাড়িতে চলে যায়। সেখান থেকে বড় হয়ে তারা দুজন আলাদা হয়ে যায়। সলতু মানসিক রোগী, তার মাথা ঠিক নেই। তার কোনো বাড়ি-ঘর নেই। সে এবং তার বোন সেনের বাজারে সরকারি জায়গায় ঝুপড়ি একটি ঘরে বসবাস করেন

স্থানীয় সাংবাদিক মাজহারুল ইসলাম জানান, নজরুল ও রফিকুল তারা দুই ভাই ছোটবেলা থেকে অন্যত্র বড় হয়েছেন। কিন্তু তার বাবা কেন্দুয়াতেই ছিলেন। উনার মানসিক ভারসাম্য নেই, যার কারণে উনি অগোছালো অবস্থায় বাজারে বাজারে ঘোরাফেরা করেন। তার আরেক বোন রসু আক্তারকে নিয়ে তিনি বসবাস করেন, তারা দুজনেই মানসিক ভারসাম্যহীন। তাদের আরেক বড় ভাই ছিলেন, যিনি মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। তিনিও মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানতে পেরেছি। বলতে গেলে মানসিক রোগ বিষয়টি যেন তাদের পারিবারিক একটি রোগ!

কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ভালুকায় যে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে তাদের বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায়। তবে তারা এখানে কেউ বসবাস করতেন না। সবাই চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করতেন। তবে রফিকুল ও নজরুলের বাবা এখানেই বসবাস করতেন। তবে তাদের নিজস্ব কোনো বসতভিটে নেই। এবং এখন পর্যন্ত আমরা যতটুক শুনতে পারছি তার বাবা এবং তার ফুফু দুজনেই মানসিক ভারসাম্যহীন। হত্যাকাণ্ডের পর দায়ের করা মামলার আসামি নজরুলের বাড়ি যেহেতু কেন্দুয়াতে ছিল, তাই আমরা তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে ছিলাম।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১৪ জুলাই) ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই শিশুসহ মাকে গলা কেটে হত‍্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নিহত হন ময়না আক্তার (২৫) ও তার দুই শিশু সন্তান রাইসা (৭) ও নিরব (২)। ঘটনার পর ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আকতার উল আলম জানান, পারিবারিক কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে। এরপর মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে জেলা পুলিশের একটি দল গ্রেপ্তার করে হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা মো. নজরুল ইসলামকে।