ডেস্ক রিপোর্ট 
১৮ বছর বয়সেই সন্তান ধারণ করছেন দেশের ৪৩ শতাংশ নারী। এমনকি ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যেই ১৭ মাসের ব্যবধানে দুই সন্তানের মা হচ্ছেন ৩১ শতাংশ নারী। আর প্রসূতিদের ৪৭ শতাংশ প্রসব পরবর্তী সেবা (পিএনসি) গ্রহণ করছেন না।
রাজধানীর হোটেল শেরাটনে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) প্রসব পরবর্তী সেবা ও প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা বৃদ্ধিতে বহুদেশীয় গবেষণামূলক প্রকল্প ‘সংযোগ’এর ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সম্মেলনটির আয়োজন করে সেভ দ্য চিলড্রেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সম্মেলনের আয়োজকরা জানান, প্রসবের পর মায়ের জরায়ু ও অন্যান্য প্রজনন অঙ্গ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সাধারণত ৬ সপ্তাহ সময় লাগে। প্রসবের পর পরই মায়ের এবং নবজাত শিশুর যত্ন নেওয়াকে পিএনসি বলা হয়। নবজাতক ও প্রসূতির সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এবং মাতৃ ও শিশু মৃত্যু হ্রাসে প্রসব পূর্ববর্তী সেবা বা অ্যান্টি নেটাল কেয়ার (এএনসি) ও প্রসব পরবর্তী সেবা বা পোস্ট নেটাল কেয়ার (পিএনসি) গুরুত্বপূর্ণ। তবে পিএনসি গ্রহণের ক্ষেত্রে এখনো তেমন উন্নতি দেখা যায়নি। এতে শিশু ও মায়ের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।
আয়োজকরা আরও জানান, প্রথমবারের মতো যারা মা-বাবা হয়েছেন বা হতে যাচ্ছেন এমন দম্পতিদের মান সম্পন্ন প্রসব পরবর্তী সেবা ও প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংযোগ প্রকল্প কাজ করছে। ইতোমধ্যে নোয়াখালী ও মাদারীপুর জেলার আট উপজেলায় কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি গবেষণা শেষ হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদন উল্লেখ করে আরও দেখানো হয়, প্রথমবার সন্তান ধারণকারী ৫১ শতাংশ প্রসূতি পরিবার কল্যাণ সহকারীর (এফডব্লিউএ) সেবা পেয়েছেন। প্রতি প্রসূতি এফডব্লিউএ’র সাক্ষাৎ পেয়েছেন গড়ে ৪ দশিমক ৫ বার। পিএনসি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ প্রসূতি (এফটিএম) নবজাতকের জন্য এফডব্লিউএ’র সাক্ষাৎ নিয়েছেন। আর নবজাতকের জন্মের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিয়েছেন মাত্র ১৫ শতাংশ প্রসূতি। একইভাবে উঠান বৈঠক ও লিফলেট গ্রহণের ক্ষেত্রেও হার খুবই কম দেখা গিয়েছে।
সংযোগ প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ক্লিনিক্যাল কন্ট্রাসেপটিভ সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রোগ্রামকে (সিসিএসডিপি) কারিগরি সহযোগিতা করছে। মূলত প্রসব পরবর্তী পরিবার পরিকল্পনা (পিপিএফপি) কেমন হওয়া উচিত এবং ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে প্রথম সন্তান ধারণকারীদের পিএনসির বিষয়ে কাজ করছে তারা।
সম্মেলনে ‘ব্যারিয়ার অ্যান্ড ফ্যাসিটিলেটর অ্যানালাইসিস’ শিরোনামের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) রিপ্রডাক্টিভ অ্যান্ড চাইল্ড হেলথের (আরসিএইচ) উপপরিচালক ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) মাত্র ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী বিধান কৃষ্ণ সরকার উপস্থাপন করেন পিএনসি ও রিয়েলিস্ট ইভ্যাল্যুয়েশন নিয়ে দুইটি প্রবন্ধ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন এজেন্সি বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজ করছে। তারপরও বাল্যবিবাহ হচ্ছে এবং ১৮ বছরের নিচে মা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এ নিয়ে আমাদের সবাইকেই সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন- অধিদপ্তরের পরিচালক (আইইএম) মো. তসলিম উদ্দিন খান, পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর (পরিকল্পনা) সাবিনা পারভীন, পরিচালক (অর্থ) মো. এনামুল হক, পরিচালক (প্রশাসন) মীর সাজেদুর রহমান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (এমএনসি অ্যান্ড এএইচ) ডা. এস এম আব্দুল্লাহ আল মুরাদ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সিসিএসডিপি) ডা. মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার।
