ঢাকা ০১:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

টেকসই বেড়িবাঁধের দাবীতে ভেলায় ভেসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ব্যতিক্রমী কর্মসুচি

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৭:২৩:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
  • ৮৪ বার দেখা হয়েছে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

নেই বন্যা নিয়ন্ত্রন বেড়িবাঁধ। বাঁধের বাইরে বসবাস। অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবনে বাড়ি-ঘর, চলাচলের রাস্তাঘাট, কৃষিজমি সবটুকু ডুবে যায়। আবার ভাটায় ভেসে ওঠে। এই অবস্থায় পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য এবং কৃষি জমি রক্ষায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ব্যতিক্রমী কর্মসুচি পাপলন করেছে।
আজ সোমবার সকালের পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের পশ্চিম লোন্দা গ্রামে টিয়াখালী নদীর পাড়ে জোয়ারের সময় পানির ওপর ভেলায় ভেসে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং এলাকাবাসী তাদের দাবির কথা জানিয়েছেন।


বেলা এগার টায় ভেলার ওপর দাড়িয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য গণগবেষক মোসাঃ হালিমা আয়শা বলেন, এই পশ্চিম লোন্দা গ্রামের ২৫০ টি দরিদ্র পরিবার প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছে। এই গ্রামে রয়েছে ২০০ একরেরও বেশি কৃষিজমি। আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাঁধ না থাকায় এখানকার পরিবারগুলো প্রায় সারাটা বছরই জোয়ারে ডুবছে এবং ভাটায় ভাসছে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং কৃষি জমি রক্ষায় এখানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন বলে দাবি করেন তারা।

হালিমা আয়শা আরো বলেন, তাদের এই ন্যায্য দাবী আদায়ে গত বছর অক্টোবর মাসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জোয়ারের সময় পানিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ হিসেবে মানবন্ধন কর্মসুচি পালন করেছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কলাপাড়া কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। সরাসরি গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এই পরিস্থিতে আজকে আমরা কলাগাছের ভেলায় ভেসে এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য তারা জোর দাবী জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য শাহীন মোল্লা জানান, তাদের এলাকা প্রতিবছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও অমাবস্যা-পূর্নিমায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময়ে ৪ দিন পর‌্যন্ত আমাদের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে ছিল। জোয়ার-ভাটায় কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বছরে একবার চাষাবাদ করতেও আমাদের কষ্ট হয়।

স্থানীয় বেল্লাল হোসেন জানায়, জোয়ারের পানিতে তাদের প্রায় ২০০ একর ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যায়। তিন ফসলী এই জমি অথচ তারা এক ফসলও চাষাবাদ করতে পারছে না। অভাব অনটনে পড়তে হচ্ছে তাদের । এই অবস্থায় এখানে একটা টেকসই বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
রোকেয়া বেগম জানায়, জোয়ারের পানির প্লাবনে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। চুলায় পানি ঢুকে পড়ায় রান্না করতে পারে না। গর্ভবতী নারী এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই অসহনীয় দূর্ভোগ থেকে তাদের বাঁচানোর দাবি জানান তারা।

৩য় শ্রেনীর ছাত্র নাইম বলেন, ‘জোয়ারের সময় পানিতে ডুবে যায়। ঘরেও ডুকে পানি। স্কুলে যাওয়া হয়নি। থাকতে হয় ভয়ে। আমরা বাঁধ চাই।
হালিমা আয়শা জানান, জোয়ার ভাটার এই পরিস্থিতিতে এলাকায় কৃষি উৎপাদন কস্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। পাডিনতে ডুবে থাকার কারণে যাতায়ত ব্যবস্থা, বাচ্চারা স্কুলে যেতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে । এখানে সুচিকিৎসার অভাব। এই পরিস্থিতিতে অসহনীয় দূর্ভোগ থেকে এলাকার ২৫০টি পরিবারকে এবং ২০০ একর তিন ফসলী জমি রক্ষার জন্য পশ্চিম লোন্দা গ্রামের টিয়াখালী নদীর তীরে দক্ষিণ দিকে নূর হোসেনের বাড়ি থেকে উত্তর দিকে খালেদ প্যাদের বাড়ি পর্যন্ত আনুমানিক ৩ কিলেঅমিটার জলকপাটসহ টেকসই রিং বেড়িবাঁধ একান্ত প্রয়োজন বলে জানান তিনি।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, ‘আসলে ওই এলাকাটা বেড়িবাঁধের বাহিরে হওয়ায় সেখানে আমাদের কিছু করার নাই। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ক্ষুদ্র পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে ওই এলাকার মানুষের জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে পারে।’
পটুয়াখালীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মীর হোসেন আলী বলেন, ‘রাজস্ব খাতের অর্থ দিয়ে ওই এলাকায় আমরা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দিতে পারবো। তবে সেক্ষেত্রে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন তাঁদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে আমাদেরকে অবহিত করলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবো বলে জানান তিনি।

টেকসই বেড়িবাঁধের দাবীতে ভেলায় ভেসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ব্যতিক্রমী কর্মসুচি

প্রকাশিত : ০৭:২৩:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

নেই বন্যা নিয়ন্ত্রন বেড়িবাঁধ। বাঁধের বাইরে বসবাস। অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবনে বাড়ি-ঘর, চলাচলের রাস্তাঘাট, কৃষিজমি সবটুকু ডুবে যায়। আবার ভাটায় ভেসে ওঠে। এই অবস্থায় পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য এবং কৃষি জমি রক্ষায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ব্যতিক্রমী কর্মসুচি পাপলন করেছে।
আজ সোমবার সকালের পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের পশ্চিম লোন্দা গ্রামে টিয়াখালী নদীর পাড়ে জোয়ারের সময় পানির ওপর ভেলায় ভেসে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এবং এলাকাবাসী তাদের দাবির কথা জানিয়েছেন।


বেলা এগার টায় ভেলার ওপর দাড়িয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য গণগবেষক মোসাঃ হালিমা আয়শা বলেন, এই পশ্চিম লোন্দা গ্রামের ২৫০ টি দরিদ্র পরিবার প্রায় ৪০ বছর ধরে বসবাস করছে। এই গ্রামে রয়েছে ২০০ একরেরও বেশি কৃষিজমি। আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাঁধ না থাকায় এখানকার পরিবারগুলো প্রায় সারাটা বছরই জোয়ারে ডুবছে এবং ভাটায় ভাসছে। তাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং কৃষি জমি রক্ষায় এখানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন বলে দাবি করেন তারা।

হালিমা আয়শা আরো বলেন, তাদের এই ন্যায্য দাবী আদায়ে গত বছর অক্টোবর মাসে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জোয়ারের সময় পানিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ হিসেবে মানবন্ধন কর্মসুচি পালন করেছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কলাপাড়া কার্যালয়ে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। সরাসরি গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এই পরিস্থিতে আজকে আমরা কলাগাছের ভেলায় ভেসে এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য তারা জোর দাবী জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য শাহীন মোল্লা জানান, তাদের এলাকা প্রতিবছর প্রাকৃতিক দূর্যোগ ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও অমাবস্যা-পূর্নিমায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের সময়ে ৪ দিন পর‌্যন্ত আমাদের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে ছিল। জোয়ার-ভাটায় কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে বছরে একবার চাষাবাদ করতেও আমাদের কষ্ট হয়।

স্থানীয় বেল্লাল হোসেন জানায়, জোয়ারের পানিতে তাদের প্রায় ২০০ একর ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যায়। তিন ফসলী এই জমি অথচ তারা এক ফসলও চাষাবাদ করতে পারছে না। অভাব অনটনে পড়তে হচ্ছে তাদের । এই অবস্থায় এখানে একটা টেকসই বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
রোকেয়া বেগম জানায়, জোয়ারের পানির প্লাবনে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। চুলায় পানি ঢুকে পড়ায় রান্না করতে পারে না। গর্ভবতী নারী এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই অসহনীয় দূর্ভোগ থেকে তাদের বাঁচানোর দাবি জানান তারা।

৩য় শ্রেনীর ছাত্র নাইম বলেন, ‘জোয়ারের সময় পানিতে ডুবে যায়। ঘরেও ডুকে পানি। স্কুলে যাওয়া হয়নি। থাকতে হয় ভয়ে। আমরা বাঁধ চাই।
হালিমা আয়শা জানান, জোয়ার ভাটার এই পরিস্থিতিতে এলাকায় কৃষি উৎপাদন কস্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। পাডিনতে ডুবে থাকার কারণে যাতায়ত ব্যবস্থা, বাচ্চারা স্কুলে যেতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে । এখানে সুচিকিৎসার অভাব। এই পরিস্থিতিতে অসহনীয় দূর্ভোগ থেকে এলাকার ২৫০টি পরিবারকে এবং ২০০ একর তিন ফসলী জমি রক্ষার জন্য পশ্চিম লোন্দা গ্রামের টিয়াখালী নদীর তীরে দক্ষিণ দিকে নূর হোসেনের বাড়ি থেকে উত্তর দিকে খালেদ প্যাদের বাড়ি পর্যন্ত আনুমানিক ৩ কিলেঅমিটার জলকপাটসহ টেকসই রিং বেড়িবাঁধ একান্ত প্রয়োজন বলে জানান তিনি।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম বলেন, ‘আসলে ওই এলাকাটা বেড়িবাঁধের বাহিরে হওয়ায় সেখানে আমাদের কিছু করার নাই। তবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ক্ষুদ্র পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের মাধ্যমে ওই এলাকার মানুষের জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে পারে।’
পটুয়াখালীর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মীর হোসেন আলী বলেন, ‘রাজস্ব খাতের অর্থ দিয়ে ওই এলাকায় আমরা বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দিতে পারবো। তবে সেক্ষেত্রে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন তাঁদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে আমাদেরকে অবহিত করলে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবো বলে জানান তিনি।