ঢাকা ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

মেগা প্রকল্প ব্যর্থ হলেও পথ দেখাচ্ছে ‘ডাইভারশন’

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৩:২২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৪ বার দেখা হয়েছে

দুই কোটিরও বেশি মানুষের শহর ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। বহু বছর ধরেই রাজধানীকে পীড়া দিচ্ছে যানজট নিয়ন্ত্রণের দুরবস্থা। ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালে ঢাকার সড়কে যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার, ২০২৪ সালে তা নেমে আসে মাত্র ৫ কিলোমিটারে—যা ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহরগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

লালমাটিয়া দিক থেকে ধানমন্ডিমুখী (বামে) এবং মিরপুর রোড থেকে ধানমন্ডি ১৬ নম্বরমুখী (ডানে) দুটি ইউ-টার্ন ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে যানজট কমাতে ও মোড় পুনর্নকশার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

নতুন উদ্যোগের ফল মিলেছে দ্রুতই। ডিএমপির হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর গড় গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ১০ কিলোমিটার হয়েছে। কিছু সিগন্যাল পয়েন্টে অপেক্ষার কমে গেছে সময় দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত।

বিজয় সরণি মোড়ে দায়িত্ব পালনকারী সার্জেন্ট সোহেল রানা বলেন, “আগে যেখানে গাড়িগুলোকে সিগন্যালে ৮ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হতো, এখন ৩ মিনিটের মধ্যেই পার হতে পারে। ডাইভারশন ব্যবস্থার ফলে পূর্ব–পশ্চিমমুখী ট্রাফিক লুপ আকারে ঘোরে, ফলে সিগন্যাল সময়ও কম লাগে। গাড়িগুলো দ্রুত মোড় পার হতে পারছে।”

তেজগাঁও জোনের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সুরুজ জানান, “দীর্ঘদিনের যানজটের কেন্দ্রবিন্দু কারওয়ান বাজারেও এখন পরিস্থিতি বদলেছে। আগে চালকদের ৩০ মিনিট বা তারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হতো। এখন ট্রাফিক অনেকটাই মসৃণভাবে চলছে, আমাদের কাজের চাপও কমেছে,” বলেন তিনি।

সাভার–নিউমার্কেট রুটের বাসচালক শিপলু মিয়া বলেন, “আগে আড়ং মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। এখন ইউ-টার্ন নিয়ে সরাসরি চলে যাই—কোনো সিগন্যালে আটকে থাকতে হয় না।”

মোটরসাইকেলচালক মাহিদুল ইসলাম বলেন, “এখন যানজট হলেও গাড়ি একদম থেমে থাকে না, ধীরে ধীরে এগোয়—এটা স্বস্তির। এমন ব্যবস্থা আরও জায়গায় চালু করা উচিত।”

শাহবাগের এক যাত্রী বলেন, “জ্যাম অনেক কমেছে ঠিকই, কিন্তু ফুটপাতগুলোর অবস্থা খারাপ। যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীদের নিরাপত্তার দিকেও নজর দেওয়া দরকার।”

যানবাহন বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, নতুন উদ্যোগ সফল হলেও ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় মাত্র ১০ কিলোমিটার—যা এখনও বিশ্বমানের তুলনায় অনেক কম। এই উন্নতি ধরে রাখতে হলে নিয়মিত সমন্বয়, গণপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বিত পরিকল্পনা এবং পথচারী ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করা প্রয়োজন।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ঢাকা এই উদ্যোগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, “ইন্টারসেকশন ম্যানেজমেন্ট বা মোড় ব্যবস্থাপনা হচ্ছে যান চলাচল উন্নত করার সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও দ্রুত পদ্ধতি। ব্যাংকক, ম্যানিলা ও জাকার্তাও বড় অবকাঠামো নির্মাণের আগে এমন ব্যবস্থা নিয়েছিল। কার্যকর সমাধানের জন্য নমনীয় (নীতি ও ব্যবস্থাপনা) এবং কঠিন (অবকাঠামো) উভয় ধরনের উদ্যোগই প্রয়োজন।”

মেগা প্রকল্প ব্যর্থ হলেও পথ দেখাচ্ছে ‘ডাইভারশন’

প্রকাশিত : ০৩:২২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

দুই কোটিরও বেশি মানুষের শহর ঢাকায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১২ লাখের বেশি। বহু বছর ধরেই রাজধানীকে পীড়া দিচ্ছে যানজট নিয়ন্ত্রণের দুরবস্থা। ডিএমপির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬ সালে ঢাকার সড়কে যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার, ২০২৪ সালে তা নেমে আসে মাত্র ৫ কিলোমিটারে—যা ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির শহরগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।

লালমাটিয়া দিক থেকে ধানমন্ডিমুখী (বামে) এবং মিরপুর রোড থেকে ধানমন্ডি ১৬ নম্বরমুখী (ডানে) দুটি ইউ-টার্ন ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজধানীতে যানজট কমাতে ও মোড় পুনর্নকশার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

নতুন উদ্যোগের ফল মিলেছে দ্রুতই। ডিএমপির হিসাব অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর গড় গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার থেকে বেড়ে ১০ কিলোমিটার হয়েছে। কিছু সিগন্যাল পয়েন্টে অপেক্ষার কমে গেছে সময় দুই-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত।

বিজয় সরণি মোড়ে দায়িত্ব পালনকারী সার্জেন্ট সোহেল রানা বলেন, “আগে যেখানে গাড়িগুলোকে সিগন্যালে ৮ থেকে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হতো, এখন ৩ মিনিটের মধ্যেই পার হতে পারে। ডাইভারশন ব্যবস্থার ফলে পূর্ব–পশ্চিমমুখী ট্রাফিক লুপ আকারে ঘোরে, ফলে সিগন্যাল সময়ও কম লাগে। গাড়িগুলো দ্রুত মোড় পার হতে পারছে।”

তেজগাঁও জোনের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সুরুজ জানান, “দীর্ঘদিনের যানজটের কেন্দ্রবিন্দু কারওয়ান বাজারেও এখন পরিস্থিতি বদলেছে। আগে চালকদের ৩০ মিনিট বা তারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হতো। এখন ট্রাফিক অনেকটাই মসৃণভাবে চলছে, আমাদের কাজের চাপও কমেছে,” বলেন তিনি।

সাভার–নিউমার্কেট রুটের বাসচালক শিপলু মিয়া বলেন, “আগে আড়ং মোড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। এখন ইউ-টার্ন নিয়ে সরাসরি চলে যাই—কোনো সিগন্যালে আটকে থাকতে হয় না।”

মোটরসাইকেলচালক মাহিদুল ইসলাম বলেন, “এখন যানজট হলেও গাড়ি একদম থেমে থাকে না, ধীরে ধীরে এগোয়—এটা স্বস্তির। এমন ব্যবস্থা আরও জায়গায় চালু করা উচিত।”

শাহবাগের এক যাত্রী বলেন, “জ্যাম অনেক কমেছে ঠিকই, কিন্তু ফুটপাতগুলোর অবস্থা খারাপ। যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীদের নিরাপত্তার দিকেও নজর দেওয়া দরকার।”

যানবাহন বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা, নতুন উদ্যোগ সফল হলেও ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের গড় গতি ঘণ্টায় মাত্র ১০ কিলোমিটার—যা এখনও বিশ্বমানের তুলনায় অনেক কম। এই উন্নতি ধরে রাখতে হলে নিয়মিত সমন্বয়, গণপরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বিত পরিকল্পনা এবং পথচারী ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করা প্রয়োজন।

নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, ঢাকা এই উদ্যোগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, “ইন্টারসেকশন ম্যানেজমেন্ট বা মোড় ব্যবস্থাপনা হচ্ছে যান চলাচল উন্নত করার সবচেয়ে সাশ্রয়ী ও দ্রুত পদ্ধতি। ব্যাংকক, ম্যানিলা ও জাকার্তাও বড় অবকাঠামো নির্মাণের আগে এমন ব্যবস্থা নিয়েছিল। কার্যকর সমাধানের জন্য নমনীয় (নীতি ও ব্যবস্থাপনা) এবং কঠিন (অবকাঠামো) উভয় ধরনের উদ্যোগই প্রয়োজন।”