ঢাকা ১১:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

মাদক কারবারিরা সহানুভূতি পেতে পরিবারকে ব্যবহার করছে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৪:০৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭ বার দেখা হয়েছে

রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারিরা গ্রেপ্তার এড়াতে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন বলে মনে করছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহানুভূতি পেতে তারা নিজের শিশু সন্তান এবং পরিবারের অসুস্থ বা বৃদ্ধ সদস্যকে সামনে এনে ব্যবহার করছেন বলে দাবি করছেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি জেনেভা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, এক শিশু তার বাবাকে আঁকড়ে ধরে কাঁদছে, যখন পুলিশ তাকে আটক করে। একই সময়ে পুলিশের একজন সদস্য আটক ব্যক্তির গালে চড় দেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম রুস্তম কসাই, যিনি জেনেভা ক্যাম্পের একজন খুচরা মাদক কারবারি। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি মূল সড়কের ময়লার ভাগাড়ের পাশে ইয়াবা বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন। তল্লাশি করে তার পকেট থেকে প্রায় ৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করে পুলিশ।

আটক হওয়ার সময় রুস্তম কসাই তার ৮ বছর বয়সী শিশু কন্যাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন শিশুটি বাবাকে ধরে কান্না করতে থাকে। পুলিশ শিশুটিকে আলাদা করে নিয়ে যায়। রুস্তম কসাই স্বীকার করেন, তিনি বিক্রির পাশাপাশি প্রতিদিন নিজে চারটি করে ইয়াবা সেবন করেন।

পুলিশ বলছে, রুস্তম কসাই মূল সড়কে খুচরা মাদক বিক্রি করার পাশাপাশি পাইকারি মাদক কারবারিদের কাছ থেকেও মাদক সংগ্রহ করেন। গত কয়েক বছরে মোহাম্মদপুর, মিরপুর, শেরে বাংলা নগরসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় মাদক বিক্রির অভিযোগে পুলিশের হাতে কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় প্রায় ১৭টির বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলার কপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।

এদিকে এ ঘটনার আগের দিন ওই এলাকার আরেক মাদক কারবারি ইসতেখারও গ্রেপ্তার হন। প্রথমে তিনি দাবি করেছিলেন শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি জেনেভা ক্যাম্পের বি ব্লকের ১৬২ নম্বর বাসায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম মৃত ওজির আহমেদ। শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন এমন দাবি মিথ্যা। তিনি আগে খুচরা মাদক বিক্রি করতেন। কয়েক বছর ধরে পাইকারিতে মাদক বিক্রি শুরু করেছেন। জেনেভা ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় খুচরা মাদক বিক্রেতাদের কাছে ইয়াবা সরবরাহ করছেন তিনি। গ্রেপ্তারের দিন তিনি আল-ফালাহ মেডিকেলের গলিতে রুহী নামে এক নারীর কাছে মাদক সরবরাহ করার সময় ধরা পড়েন। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ৭-৮টি মামলা রয়েছে।

পুলিশ ও জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, শিশু ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যবহার করা মাদক কারবারিদের নতুন কৌশল। তারা এই কৌশল অবলম্বন করে গ্রেপ্তার এড়ানো এবং পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, মাদক কারবারিরা শিশু ও পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের সামনে ঠেলে দিয়ে নিজেদের নির্দোষ দেখানোর চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটিরও তদন্ত চলছে।

তিনি বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে সপ্তাহের পাঁচ দিনই মারামারি, ককটেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি ককটেল বিস্ফোরণে এক যুবক মারাও গেছেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী আলাদা অভিযান চালিয়ে বিপুল ককটেল, গান পাউডার ও অস্ত্র জব্দ করেছে। মাদকবিরোধী এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মতিঝিল-শাহবাগ রুটে চলছে মেট্রোরেল

মাদক কারবারিরা সহানুভূতি পেতে পরিবারকে ব্যবহার করছে

প্রকাশিত : ০৪:০৯:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারিরা গ্রেপ্তার এড়াতে নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করছেন বলে মনে করছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহানুভূতি পেতে তারা নিজের শিশু সন্তান এবং পরিবারের অসুস্থ বা বৃদ্ধ সদস্যকে সামনে এনে ব্যবহার করছেন বলে দাবি করছেন পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সম্প্রতি জেনেভা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, এক শিশু তার বাবাকে আঁকড়ে ধরে কাঁদছে, যখন পুলিশ তাকে আটক করে। একই সময়ে পুলিশের একজন সদস্য আটক ব্যক্তির গালে চড় দেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম রুস্তম কসাই, যিনি জেনেভা ক্যাম্পের একজন খুচরা মাদক কারবারি। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি মূল সড়কের ময়লার ভাগাড়ের পাশে ইয়াবা বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হন। তল্লাশি করে তার পকেট থেকে প্রায় ৫০টি ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করে পুলিশ।

আটক হওয়ার সময় রুস্তম কসাই তার ৮ বছর বয়সী শিশু কন্যাকে নিজের কাছে নিয়ে আসেন। তখন শিশুটি বাবাকে ধরে কান্না করতে থাকে। পুলিশ শিশুটিকে আলাদা করে নিয়ে যায়। রুস্তম কসাই স্বীকার করেন, তিনি বিক্রির পাশাপাশি প্রতিদিন নিজে চারটি করে ইয়াবা সেবন করেন।

পুলিশ বলছে, রুস্তম কসাই মূল সড়কে খুচরা মাদক বিক্রি করার পাশাপাশি পাইকারি মাদক কারবারিদের কাছ থেকেও মাদক সংগ্রহ করেন। গত কয়েক বছরে মোহাম্মদপুর, মিরপুর, শেরে বাংলা নগরসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় মাদক বিক্রির অভিযোগে পুলিশের হাতে কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় প্রায় ১৭টির বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলার কপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে।

এদিকে এ ঘটনার আগের দিন ওই এলাকার আরেক মাদক কারবারি ইসতেখারও গ্রেপ্তার হন। প্রথমে তিনি দাবি করেছিলেন শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিনি জেনেভা ক্যাম্পের বি ব্লকের ১৬২ নম্বর বাসায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। তাঁর বাবার নাম মৃত ওজির আহমেদ। শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন এমন দাবি মিথ্যা। তিনি আগে খুচরা মাদক বিক্রি করতেন। কয়েক বছর ধরে পাইকারিতে মাদক বিক্রি শুরু করেছেন। জেনেভা ক্যাম্পের বিভিন্ন জায়গায় খুচরা মাদক বিক্রেতাদের কাছে ইয়াবা সরবরাহ করছেন তিনি। গ্রেপ্তারের দিন তিনি আল-ফালাহ মেডিকেলের গলিতে রুহী নামে এক নারীর কাছে মাদক সরবরাহ করার সময় ধরা পড়েন। তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় ৭-৮টি মামলা রয়েছে।

পুলিশ ও জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, শিশু ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ব্যবহার করা মাদক কারবারিদের নতুন কৌশল। তারা এই কৌশল অবলম্বন করে গ্রেপ্তার এড়ানো এবং পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

মোহাম্মদপুর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জুয়েল রানা বলেন, মাদক কারবারিরা শিশু ও পরিবারের অসুস্থ সদস্যদের সামনে ঠেলে দিয়ে নিজেদের নির্দোষ দেখানোর চেষ্টা করছেন। আমরা তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটিরও তদন্ত চলছে।

তিনি বলেন, জেনেভা ক্যাম্পে সপ্তাহের পাঁচ দিনই মারামারি, ককটেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি ককটেল বিস্ফোরণে এক যুবক মারাও গেছেন। পুলিশ ও সেনাবাহিনী আলাদা অভিযান চালিয়ে বিপুল ককটেল, গান পাউডার ও অস্ত্র জব্দ করেছে। মাদকবিরোধী এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে।