কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের বাকী দুটি আসনে মনোনয়ন ঘোষণা করেছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিশোরগঞ্জের দুটি আসনসহ ৩৬ টি আসনে মনোনয়ন ঘোষণা করেন। এতে কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর) আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম এবং কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন পেলেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মজিবর রহমান ইকবাল। এর মধ্যদিয়ে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো। মনোনয়ন ঘোষণার পর দু’টি আসনের মনোনীত দুই প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস দেখা গেলেও মনোনয়ন প্রত্যাশী অপরাপর প্রার্থীদের মধ্যে ছিল ক্ষোভ ও হতাশা আর সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল শুনশান নীরবতা । দু’টি আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশিরভাগ মানুষ নিরব ছিলেন। তবে তাঁদের চোখেমুখে ছিল ক্ষোভ ও হতাশার চিত্র। কারণ হিসেবে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ ১ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক বিভাগীয় স্পেশাল জজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব রেজাউল করিম খান চুন্নু ২০০৭ ও ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন পেলেও ২০০৭ সালে নির্বাচন হয়নি এবং ২০১৮ সালে রাতের ভোটে হেরে গেলেও মাত্র ৩ ঘন্টার নির্বাচনে রেজাউল করিম খান চুন্নু ৭৬ হাজার ভোট পান ।

যা ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ভোট। স্বাভাবিক ভাবেই এই এলাকার ভোটাররা ধরেই নিয়েছিলেন যে, চুন্নুই মনোনয়ন পাচ্ছেন। অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জ ৫ আসনে আরও একবছর আগেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদাকে গ্রীন সিগন্যাল দেয়া বিএনপি এবং তাঁকে সহযোগিতার কথাও বলে দলটি। তারপর থেকেই বিএনপির একটি অংশকে নিয়ে ব্যাপক গনসংযোগ করে আসছিলেন এহসানুল হুদা। যার ফলে ৩ নভেম্বর ৪ টি আসনে মনোনয়ন ঘোষণা করে ২ টি আসনে মনোনয়ন ঘোষণা স্থগিত রাখলে সবার আলাদা নজর ছিল ওই দুটি আসনে। এ ছাড়া প্রথম ধাপে বিএনপি’র ঘোষিত তালিকায় ওই আসন দুটি স্থগিত রাখায় রাজনীতির মাঠে শুরু হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। প্রত্যাশিত প্রার্থীদের পাশাপাশি হঠাৎ করেই অপরাপর প্রার্থীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামের পক্ষে জোরালো দাবি নিয়ে মাঠে নামে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। অনুরূপভাবে শেখ মজিবর রহমান ইকবালকে বিএনপি’র মনোনয়ন দেয়ার দাবিতে রাজপথে নামেন নিকলী বাজিতপুরের নেতাকর্মীরা। বাজিতপুর থেকে নিকলী দীর্ঘ মানববন্ধন, শোডাউন ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে তারা কেন্দ্রকে বার্তা দেন ইকবালের পক্ষে। আর মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামের পক্ষে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন লিখিতভাবে কেন্দ্রকে অনুরোধ করেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার দলীয় প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ সদরে মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম এবং নিকলী বাজিতপুরে শেখ মজিবর রহমান ইকবালের নাম ঘোষণার মধ্যদিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান হলে হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার মনোনয়ন ঘোষণার কিশোরগঞ্জ সদর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী রেজাউল করিম খান চুন্নু কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলার তাঁর সমর্থিত নেতাকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং সর্বস্তরের জনগণের উদ্দেশ্যে এক ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন,
“কিশোরগঞ্জ-১ আসনের আমার প্রাণপ্রিয় ভাইবোনেরা। আমার শুভেচ্ছা নিন। আমি জানি সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ আমাকে কী পরিমান ভালোবাসেন। স্বাধীনতার পর কিশোরগঞ্জবাসী এই আসনের সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে তেমন কিছু পায় নি। আমি চেয়েছিলাম, জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও কিশোরগঞ্জবাসীর জন্য কিছু করতে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমার মনোবাসনা পূরণ করবেন। আমি আপনাদের সকলের ভালোবাসা ও দোয়া প্রার্থী।
তাই সকলের প্রতি অনুরোধ, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ বিবেচনা করে সকলে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধারণসহ ম্যাডামের সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন।

এখন ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে ম্যাডামের জীবন জনগন ও রাষ্ট্রের কাছে অনেক বেশি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। আমি আপনাদের পাশে আছি ও আমৃত্যু থাকব, ইনশা আল্লাহ।”
রেজাউল করিম খান চুন্নুর এমন স্ট্যাটাসে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের মধ্যে। তাঁর সমর্থিত নেতাকর্মী ও সমর্থক শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকিয়ে আছেন, আজ শনিবার কিশোরগঞ্জ এসে তিনি তাঁর নতুন কোনো সিদ্ধান্ত জানান কিনা ।

ডেস্ক রিপোর্ট 






















