ঢাকা ০২:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

ঢাকার উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিভে গেল আলোকবর্তিকা মাসুকার জীবন

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৭:৫৫:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
  • ৪৬ বার দেখা হয়েছে

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিভে গেল এক আলোকবর্তিকার জীবন। থেমে গেল এক স্নেহময়, নির্লোভ শিক্ষকতার পথচলা। তিনি হলেন মাইলস্টোন কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা মাসুকা বেগম নিপু (৩৪)। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

দীর্ঘ সাত বছর ধরে মাইলস্টোন কলেজে শিক্ষকতা করে আসছিলেন মাসুকা বেগম। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তিনি শুধু শিক্ষকই নন, ছিলেন একজন বন্ধু, অভিভাবক, অনুপ্রেরণার উৎস। সততা, বিনয় আর দায়িত্ববোধে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী একজন মানুষ।

দুর্ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (২১ জুলাই) দুপুরের দিকে। একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান জরুরি অবতরণের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবনের উপর পড়ে এবং মুহূর্তেই সেখানে আগুন ধরে যায়। ওই সময় মাসুকা বেগম ক্লাস শেষ করে শিক্ষক কক্ষে ফিরছিলেন। আকস্মিকভাবে আগুনে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। দ্রুত তাকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রাত ১২টা ২০ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।

মাসুকা বেগম ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের চিলিকোট গ্রামের সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর কন্যা। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। বাবার সঙ্গে বসবাস করতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা এলাকার সবুজবাগ এলাকায়।

জীবনের শেষ সময়েও ছিলেন বাস্তব ও শান্ত স্বভাবের মানুষ। মৃত্যুর আগে সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন—‘আমার মৃত্যুর পর যেন লাশটি প্রথমে আমার বড় বোন পাপড়ি রহমানের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং আমাকে আমাদের গ্রামের মাটি, সোহাগপুরেই দাফন করা হয়।’

এমন আবেগঘন কথা জানিয়েছেন মাসুকার ভাগ্নি নিধি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, খালার ব্যবহার ছিল মায়ের মতো। কখনো ঝগড়া-বিবাদে জড়াতেন না। সবসময় ছিলেন শান্ত ও সংবেদনশীল। সবসময় সবার ভালো চাইতেন।

তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর খালার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি। শরীরের প্রায় ৪৫% পুড়ে গেছে। রাত ১২টা ২০ মিনিটে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানতে পারি, খালা আর বেঁচে নেই।

মাসুকা বেগমের বড় জামাতা খলিলুর রহমান বলেন, আমি যখন মাসুকার বড় বোনকে বিয়ে করি, তখন মাসুকার বয়স ছিল মাত্র ৫-৬ বছর। আমি তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতাম। কখনো কল্পনাও করিনি, এমনভাবে তাকে চিরবিদায় জানাতে হবে।

মাসুকার শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে আনা হয়। বোন-জামাতার বাড়ি থেকে নেওয়া হয় গ্রামের খানবাড়ি এলাকায়। পরে সোহাগপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বাদ আসর জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

ঢাকার উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনায় নিভে গেল আলোকবর্তিকা মাসুকার জীবন

প্রকাশিত : ০৭:৫৫:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিভে গেল এক আলোকবর্তিকার জীবন। থেমে গেল এক স্নেহময়, নির্লোভ শিক্ষকতার পথচলা। তিনি হলেন মাইলস্টোন কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা মাসুকা বেগম নিপু (৩৪)। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

দীর্ঘ সাত বছর ধরে মাইলস্টোন কলেজে শিক্ষকতা করে আসছিলেন মাসুকা বেগম। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে তিনি শুধু শিক্ষকই নন, ছিলেন একজন বন্ধু, অভিভাবক, অনুপ্রেরণার উৎস। সততা, বিনয় আর দায়িত্ববোধে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী একজন মানুষ।

দুর্ঘটনাটি ঘটে মঙ্গলবার (২১ জুলাই) দুপুরের দিকে। একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান জরুরি অবতরণের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাইলস্টোন কলেজের একটি ভবনের উপর পড়ে এবং মুহূর্তেই সেখানে আগুন ধরে যায়। ওই সময় মাসুকা বেগম ক্লাস শেষ করে শিক্ষক কক্ষে ফিরছিলেন। আকস্মিকভাবে আগুনে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারাত্মকভাবে দগ্ধ হন। দ্রুত তাকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলেও চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে রাত ১২টা ২০ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।

মাসুকা বেগম ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের চিলিকোট গ্রামের সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর কন্যা। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। বাবার সঙ্গে বসবাস করতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মেড্ডা এলাকার সবুজবাগ এলাকায়।

জীবনের শেষ সময়েও ছিলেন বাস্তব ও শান্ত স্বভাবের মানুষ। মৃত্যুর আগে সহকর্মীদের জানিয়েছিলেন—‘আমার মৃত্যুর পর যেন লাশটি প্রথমে আমার বড় বোন পাপড়ি রহমানের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং আমাকে আমাদের গ্রামের মাটি, সোহাগপুরেই দাফন করা হয়।’

এমন আবেগঘন কথা জানিয়েছেন মাসুকার ভাগ্নি নিধি। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, খালার ব্যবহার ছিল মায়ের মতো। কখনো ঝগড়া-বিবাদে জড়াতেন না। সবসময় ছিলেন শান্ত ও সংবেদনশীল। সবসময় সবার ভালো চাইতেন।

তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর খালার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে জানা যায়, তিনি বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে ভর্তি। শরীরের প্রায় ৪৫% পুড়ে গেছে। রাত ১২টা ২০ মিনিটে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জানতে পারি, খালা আর বেঁচে নেই।

মাসুকা বেগমের বড় জামাতা খলিলুর রহমান বলেন, আমি যখন মাসুকার বড় বোনকে বিয়ে করি, তখন মাসুকার বয়স ছিল মাত্র ৫-৬ বছর। আমি তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসতাম। কখনো কল্পনাও করিনি, এমনভাবে তাকে চিরবিদায় জানাতে হবে।

মাসুকার শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে আনা হয়। বোন-জামাতার বাড়ি থেকে নেওয়া হয় গ্রামের খানবাড়ি এলাকায়। পরে সোহাগপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে বাদ আসর জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।