ঢাকা ০৮:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

সিলেটের ‘সাদা পাথর’ এলাকায় পড়ে আছে শুধু ক্ষতগুলো

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০১:০২:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৫ বার দেখা হয়েছে

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর তীরবর্তী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য উদাহরণ সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র। একসময় যেখানে স্বচ্ছ নীল পানি, পাহাড়ি ঝরনা ও সাদা পাথরের অপূর্ব সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের মন মুগ্ধ করত, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে আজ সেই জায়গাটি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।

ধলাই নদীর তলদেশ থেকে শুরু করে উৎসমুখ পর্যন্ত বড় বড় পাথরগুলো অবাধে লুট হয়ে গেছে। নদীর তীরে বিশাল গর্ত, বালুচর জেগে উঠেছে, আর সেইসঙ্গে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ও বাস্তুতন্ত্র।

পর্যটকরা এখন নৌকায় ভ্রমণ করতে গিয়ে পরিবেশের পরিবর্তন ও বালুচরের কারণে কিছু অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেক পর্যটক বলেন, এই অবৈধ পাথর উত্তোলনের ফলে প্রকৃতির সৌন্দর্য ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং এটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করছে।

ময়মনসিংহ থেকে আসা শারমিন আক্তার নামে এক পর্যটক বলেন, আগে এখানে এসে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতাম। কিন্তু এখন পুরো পরিবেশ বদলে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে, কেউ খুবলে খেয়েছে, শুধু কঙ্কালটা পড়ে আছে। খুবই দুঃখজনক।

ঢাকা থেকে আসা আহমেদ ইমতিয়াজ নামে আরেক পর্যটক বলেন, পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি, কিন্তু এত বিশৃঙ্খলা ও পরিবেশ ধ্বংস দেখে মনটা বিষণ্ণ হলো। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিলেই হয়তো এখনও সৌন্দর্য টিকে থাকতে পারতো।

মোহাম্মদ রাশেদ নামে এক পরিবেশকর্মী বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ধলাই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও বাস্তুতন্ত্রকে ভেঙে দিয়েছে। নদীর তীর আর আগের অবস্থায় ফিরবে না। এর দায় অবশ্যই প্রশাসনকে নিতে হবে।

পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ ও নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ফিরিয়ে না আনলে ধলাইয়ের পাড়ের সৌন্দর্য চিরতরে হারিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজা  বলেন, সিলেটের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ সাদা পাথরসহ সিলেটের কয়েকটি স্পট থেকে যেভাবে বালু-পাথর লুট হচ্ছে তা নজিরবিহীন। মাত্র কয়েকদিনে একটি পর্যটনকেন্দ্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাদা পাথর শুধু একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, বরং জাতীয় সম্পদ ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এটি রক্ষা করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু সরকার তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদী তীর, জীববৈচিত্র্য ও ভৌগোলিক গঠন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তি ও সিন্ডিকেটকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫, এবং বালু ও পাথর উত্তোলন আইন ২০১০-এর আওতায় গ্রেপ্তার করে এদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাই। অবিলম্বে অবশিষ্ট বালু-পাথর রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে পাথরখেকোরা নির্বিঘ্নে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, নিয়মিত আমাদের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জেলা থেকে যৌথবাহিনীর মাধ্যমে অভিযান হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা নিয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে কাজ চলছে।

সিলেটের ‘সাদা পাথর’ এলাকায় পড়ে আছে শুধু ক্ষতগুলো

প্রকাশিত : ০১:০২:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদীর তীরবর্তী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য উদাহরণ সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র। একসময় যেখানে স্বচ্ছ নীল পানি, পাহাড়ি ঝরনা ও সাদা পাথরের অপূর্ব সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের মন মুগ্ধ করত, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে আজ সেই জায়গাটি মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।

ধলাই নদীর তলদেশ থেকে শুরু করে উৎসমুখ পর্যন্ত বড় বড় পাথরগুলো অবাধে লুট হয়ে গেছে। নদীর তীরে বিশাল গর্ত, বালুচর জেগে উঠেছে, আর সেইসঙ্গে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ও বাস্তুতন্ত্র।

পর্যটকরা এখন নৌকায় ভ্রমণ করতে গিয়ে পরিবেশের পরিবর্তন ও বালুচরের কারণে কিছু অসুবিধার মুখোমুখি হচ্ছেন। অনেক পর্যটক বলেন, এই অবৈধ পাথর উত্তোলনের ফলে প্রকৃতির সৌন্দর্য ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং এটি ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করছে।

ময়মনসিংহ থেকে আসা শারমিন আক্তার নামে এক পর্যটক বলেন, আগে এখানে এসে প্রকৃতির সান্নিধ্যে সময় কাটাতাম। কিন্তু এখন পুরো পরিবেশ বদলে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে, কেউ খুবলে খেয়েছে, শুধু কঙ্কালটা পড়ে আছে। খুবই দুঃখজনক।

ঢাকা থেকে আসা আহমেদ ইমতিয়াজ নামে আরেক পর্যটক বলেন, পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছি, কিন্তু এত বিশৃঙ্খলা ও পরিবেশ ধ্বংস দেখে মনটা বিষণ্ণ হলো। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিলেই হয়তো এখনও সৌন্দর্য টিকে থাকতে পারতো।

মোহাম্মদ রাশেদ নামে এক পরিবেশকর্মী বলেন, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ধলাই নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও বাস্তুতন্ত্রকে ভেঙে দিয়েছে। নদীর তীর আর আগের অবস্থায় ফিরবে না। এর দায় অবশ্যই প্রশাসনকে নিতে হবে।

পরিবেশবিদরা সতর্ক করেছেন, অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধ ও নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহ ফিরিয়ে না আনলে ধলাইয়ের পাড়ের সৌন্দর্য চিরতরে হারিয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাসমির রেজা  বলেন, সিলেটের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ সাদা পাথরসহ সিলেটের কয়েকটি স্পট থেকে যেভাবে বালু-পাথর লুট হচ্ছে তা নজিরবিহীন। মাত্র কয়েকদিনে একটি পর্যটনকেন্দ্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, যা আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। সাদা পাথর শুধু একটি পর্যটনকেন্দ্র নয়, বরং জাতীয় সম্পদ ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এটি রক্ষা করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। কিন্তু সরকার তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, নদী তীর, জীববৈচিত্র্য ও ভৌগোলিক গঠন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তি ও সিন্ডিকেটকে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫, এবং বালু ও পাথর উত্তোলন আইন ২০১০-এর আওতায় গ্রেপ্তার করে এদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাই। অবিলম্বে অবশিষ্ট বালু-পাথর রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসনের উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে পাথরখেকোরা নির্বিঘ্নে লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও মাঝে মাঝে অভিযান চালানো হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

এদিকে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, নিয়মিত আমাদের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জেলা থেকে যৌথবাহিনীর মাধ্যমে অভিযান হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা নিয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে কাজ চলছে।