চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রচারণায়। এবারের নির্বাচনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দৃষ্টি কেড়েছে সুফি ভাবধারার অনুসারী, ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেলের প্রার্থীরা।
ভোটার, প্রার্থী ও বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামে সুন্নি মতাদর্শের উল্লেখযোগ্য সমর্থক রয়েছে। এই মতাদর্শের অনেক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করছেন। সুফি মতাদর্শের অনুসারীরা সংঘাত বা সহিংসতায় বিশ্বাস করেন না। তাই ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চত্বর ও বুদ্ধিজীবী চত্বরে প্যানেলের প্রার্থীরা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এ সময় ভিপি পদে মনোনীত মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম ও এজিএস পদপ্রার্থী শহীদুল ইসলাম শাহেদের পাশাপাশি প্যানেলের অন্যান্য পদপ্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।
ভিপি পদপ্রার্থী মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনে একটি গ্রহণযোগ্য ফলাফল আসবে। তিনি বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতেই আমরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। চাই, শিক্ষার্থীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। শেষ মুহূর্তে আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচারণা চালিয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আশা করি, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্যানেলের নির্বাহী সদস্য পদপ্রার্থী মুহাম্মদ সাব্বির রহমান জানান, শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়েছে। তিনি বলেন, আমরা সবার কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আশা করি, শিক্ষার্থীরা আমাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।
এর আগে, ৯ অক্টোবর অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল সহিংসতা বিরোধী মূল্যবোধকে ধারণ করে ১৬ দফা ইশতেহার ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা ও গবেষণার একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে এই ইশতেহার প্রকাশ করা হয়।
১৬ দফায় উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকারসমূহ হলো- চাকসু নির্বাচনকে নিয়মিত করতে একে কার্যকর একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষার্থী পরিচয়ে বৈষম্যমূলক নীতি পরিহার, ক্যাম্পাসে দলীয় আধিপত্য ও দখলদারিত্ব রোধ, মানসম্মত শিক্ষা ও ইনসাফপূর্ণ ফলাফল নিশ্চিতে শিক্ষক মূল্যায়ন চালু, শাটল ট্রেনের শিডিউল বৃদ্ধি, নতুন হল নির্মাণের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিত করা, খাবারের মানে রেটিং সিস্টেম চালু, নারীদের জন্য সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্র বিনামূল্যে সংশোধনের সুযোগ তৈরি, চাকসু ভবনে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন এবং ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে নিরাপত্তা বুথ ও নিরবচ্ছিন্ন ওয়াই-ফাই জোন স্থাপন।
তাছাড়া, মেধাভিত্তিক বৃত্তির পরিমাণ ও অর্থ বৃদ্ধি, আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের সহায়তা, অ্যাম্বুলেন্স সেবা বৃদ্ধি ও দ্রুততার সঙ্গে প্রদান, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ সব হলের মাঠ সংস্কার ও খেলাধুলার আয়োজন, শিক্ষার্থীদের হতাশা, দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা দূরীকরণে অভিজ্ঞ মনোবিজ্ঞানীদের মাধ্যমে নিয়মিত কাউন্সেলিং এবং অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল নির্বাচিত হলে মাসিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে প্রতিটি প্রতিনিধি শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করবেন- এমন প্রতিশ্রুতিও রয়েছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টায় চবির বুদ্ধিজীবী চত্বরে ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। সম্পাদকীয় পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন- খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে খায়রুল আমীন হৃদয়, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক মুহাম্মদ ফয়সাল হোসেন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক মুহাম্মদ এহছানুল হক, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক মুহাম্মদ ইমরান হোসেন, দপ্তর সম্পাদক এস এম আলী হোসাইন জিসান, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ ইব্রাহীম রুবেল, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক মুরিদুল হাসান মুরাদ।
এছাড়াও বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা সুরাইয়া হোসাইন, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুন নাঈম খুকি, সহ-ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক মিফতাহুল জান্নাত, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ তারেক হাসান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ জহির উদ্দীন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জুলহাসনাঈন সায়েম, যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক ইসমাইল ফাহিম, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ আল-মামুন, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ ইমাম হোসাইন এবং পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক মোহাইমিনুল কবির।
নির্বাহী সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন- দৌলতুল ইসলাম সাকলাইন, তাউছিফুর রহমান, হানিফ ইসলাম, মুহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এবং মুহাম্মদ সাব্বির রহমান।