আতঙ্কিত মানুষজন দ্রুত ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ভূমিকম্পে রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকায় ধসে পড়া একটি সীমানা দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে শিশু ফাতেমা। গুরুতর আহত হয়েছেন শিশুটির মা কুলসুম বেগম এবং প্রতিবেশী জেসমিন বেগম। তারা একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আড়াইহাজার উপজেলায় হাইজাদী ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন গ্রামে একাধিক বাড়ির দেয়াল ভেঙে গেছে। এতে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন। এ সময় আহতদের একজন মোহন বলে জানা গেছে। বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি।
এ সময় সবচেয়ে বেশী ক্ষতগ্রস্থ হয় আড়াইহাজারের হাইজাদী ইউনিয়নের কয়েকটি বাড়ি। সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ভূমিকম্পে স্কুল মাদরাসাসহ একাধিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। সিদ্দিকিয়া মাদরাসার ভবনের দেয়াল ধসে যায়।

সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল হিরাঝিল বাংলা শাখা ভবনে ফাটল দেখা দেয়। ভূমিকম্পের সময় ওই ভবনে ভেনাস এডুকেশন সোসাইটির আয়োজনে বৃত্তি পরীক্ষা ছিল, যেখানে বিভিন্ন স্কুলের ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এ সময় দ্রুত শিক্ষার্থীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।
এছাড়াও হাউজিং এলাকা, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা, আল ইসলাম নগর, রনি সিটির ৪ নম্বর গলি ও ৫ নম্বর রোড এসব জায়গায় বহু ভবনের দেওয়াল, কলাম, সিঁড়ি ও সাইড দেয়ালে ফাটল দেখা গেছে। কিছু ভবনের সাইড দেওয়াল ভেঙে পাশের টিনশেড ঘরের ওপর পড়েছে।
নারায়ণগঞ্জের কাচপুর এলাকার ব্যাবসায়ী মোখলেস জানান, আমার জীবনে এত দীর্ঘস্থায়ী ও এত ভয়ংকর ভূমিকম্প আর কোন দিন অনূভূত হয় নি।আল্লাহ তালা বাচাইসেন আমাদেরকে।আমার দুকানের সব মালামাল পড়ে গেছে।আরেকটু হলে।বিল্ডিং পড়ে যেত মনে হয়।
অপর এক স্থানীয় বাসিন্দা সুমন বলেন,এত ভয়ানক ভূমিকম্প আমার জীবনে দেখি নাই।আল্লাহ তালা আমাদেরকে হেফাযত করেছেন।ভূমিকম্পের জন্য আতঙ্কিত হয়ে এ এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা ভবন ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছোটাছুটি শুরু করে।

এসকোয়্যার কম্পানির কর্মচারী সালমান মিয়া জানান,আল্লাহ তালা নিজ কুদরতে আমাদেরকে বাচিয়েছেন।আমাদের অফিসের বিল্ডিং হেলে পড়েছে।
তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন।
এদিকে ফতুল্লার শিল্পাঞ্চল বিসিক এলাকায় কয়েকটি রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান চালু থাকায় শ্রমিকরাও নিরাপদ স্থানে বেরিয়ে আসেন।
এদিকে ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও প্রকৌশলীরা ভবনগুলোর ঝুঁকির মাত্রা যাচাই করতে জরুরি পরিদর্শন শুরু করেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে প্রবেশ না করতে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আশপাশের আরও ভবনেও ফাটল দেখা দিয়েছে এসব ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ দলের দ্রুত পরিদর্শন জরুরি।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা খানপুর হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক আবুল বাশার জানান, আদমজি ইপিজেডের ৩ জন শ্রমিকসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ৫ জন আতঙ্কগ্রস্থ রোগী খানপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন জানান, এটা প্রাকৃতিক দূর্যোগ। আল্লাহর রহমতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি নারায়ণগঞ্জ জেলায় হয়নি।

যারা বহুতল ভবনের বাসিন্দা তারা ভূমিকম্পের সময় নিচে নামবেন না। ঘরের ভেতর ভবনের কলাম এর পাশে দাড়াবেন অথবা সিড়িকোঠার নীচে থাকবেন। আর নিচতলার বাসিন্দারা বাইরে চলে যাবেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবির বলেন, ইতিমধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন ভবনের ফাটল নিয়ে একাধিক টিম মাঠে কাজ শুরু করেছে। তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
কোনো ভবন বসবাসের অযোগ্য হলে ওই ভবন থেকে বাসিন্দারের সরিয়ে নেয়া হবে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ডেস্ক রিপোর্ট 






















