ঢাকা ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

ভোজ্যতেলে ফেরেনি স্বস্তি, স্থিতিশীল মাছ ও সবজি

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ১১:০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
  • ৫৯ বার দেখা হয়েছে

রমজান মাসে ভোজ্যতেলের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে মরিয়া জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। গত ৪ মার্চ খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারণ ও ব্যবসায়ীদের কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েও হচ্ছে না কাজ। উল্টো এখনো ভোক্তার পকেট কাটতে মরিয়া খুচরা ব্যবসায়ীরা। বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে বাড়িতে দরে। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কমে এলেও মাছ, সবজি বিক্রি হচ্ছে আগের দরেই।

চট্টগ্রাম মহানগরের খুলশী এলাকায় থাকেন নারী উদ্যোক্তা আসমা বেগম। তিনি গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাসার নিচের দোকান থেকে দুই লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেল কেনেন। বোতলের গায়ে ৩৫০ টাকা লেখা থাকলেও দোকানি তার কাছ থেকে ৪০০ টাকা দাম রেখেছেন।

আসমা বেগম বলেন, ‘আমি দুই লিটার বোতলজাত তেলের দাম রাখতে দোকানিকে ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে ১০০ টাকা ফেরত দিলেন। অথচ বোতলের গায়ে লেখা আছে ৩৫০ টাকা। বাজারে তেলের সংকটের অজুহাত দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেল এখনো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতির শিকার। এসব কি দেখার কেউ নেই?’

আসমা বেগমের মতো প্রতিদিন এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন হাজারও ভোক্তা। বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ কম। লিটারপ্রতি ১৭৫ টাকা বিক্রির কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। এদিকে প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও মিলছে না সুফল। খুচরা পর্যায়ে লিটারপ্রতি ১৬০ টাকা বিক্রির কথা বলা হলেও বাস্তবচিত্র উল্টো। নগরের হালিশহর, ঈদগা, উত্তর আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ এবং কাজীর দেউড়ি এলাকার অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে, এসব দোকানে আগে খোলা সয়াবিন ১৯৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকারের অভিযানেও মিলছে না সফলতা।

অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযান পরিচালনার সময় সবাই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু অভিযান শেষে কর্মকর্তারা চলে গেলে সবকিছু আগের মতো হয়ে ওঠে। কাজেই ব্যবসায়ীদেরই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, ন্যায়-নীতি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা অভিযানে দেখছি, দোকানিরা মূল্য তালিকা রাখছেন না। অন্যদিকে নির্ধারিত দরে তেল বিক্রি করছেন না। আমরা জরিমানা ও সতর্ক করছি। এরপরও যদি তারা একই আচরণ করেন, তাহলে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে বাধ্য হব।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমাদের দেশে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীর মাথায় একটা বিষয় খুব ভালোভাবে গেঁথে গেছে, সারা বছরের মুনাফা এই রমজান মাসে করতে হবে। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সমাধান মিলবে না। ব্যবসায়ীদের দায়িত্ববান হতে হবে। আর ক্রেতাদেরও প্রয়োজনের বাইরে পণ্য নেওয়া বন্ধ করতে হবে।’

এদিকে ঈদগা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে ১০ ও সোনালি মুরগিতে ২০ টাকা কমেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি মুরগি আগের ৫৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতি কেজি হাড়সহ গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, হাড় ছাড়া গরুর মাংস ৯০০ টাকা ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

বাজারটিতে সবজি ও মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের দরেই। বর্তমানে প্রতি কেজি বেগুন ৪০ টাকা, টমেটো ২০, গাজর ৪০, শিম ৪০, শালগম ৩০, ফুলকপি ৩০, আলু ২০, কচুর মুখী ৫০, পেঁপে ৪০, পটোল ৭০, চিচিঙা ৫০, ধুন্দল ৫০, ঝিঙা ৬০ , বরবটি ৮০, ঢেঁড়স ৭০, মিষ্টি কুমড়া ৪০ ও কাঁচামরিচ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তা ছাড়া প্রতি কেজি রুই ২৮০ টাকা, কাতলা ৩০০, কাঁচকি ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০, টেংরা মাছ ৮০০, বোয়াল ৬০০ টাকা, শোল ৭০০ টাকা, পাঙাশ ১৮০ টাকা ও রূপচাঁদা মাছ ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মুদি দোকানে প্যাকেট চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট আটা ১১৫ টাকা, ছোলা ১২০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) ১১০ টাকা, মসুর ডাল (ছোট) ১৩৫ টাকা, প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, চায়না রসুন ২৩০ টাকা ও কেরালা আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভোজ্যতেলে ফেরেনি স্বস্তি, স্থিতিশীল মাছ ও সবজি

প্রকাশিত : ১১:০৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

রমজান মাসে ভোজ্যতেলের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখতে মরিয়া জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। গত ৪ মার্চ খোলা সয়াবিনের দাম নির্ধারণ ও ব্যবসায়ীদের কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েও হচ্ছে না কাজ। উল্টো এখনো ভোক্তার পকেট কাটতে মরিয়া খুচরা ব্যবসায়ীরা। বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে বাড়িতে দরে। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির দাম কমে এলেও মাছ, সবজি বিক্রি হচ্ছে আগের দরেই।

চট্টগ্রাম মহানগরের খুলশী এলাকায় থাকেন নারী উদ্যোক্তা আসমা বেগম। তিনি গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাসার নিচের দোকান থেকে দুই লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন তেল কেনেন। বোতলের গায়ে ৩৫০ টাকা লেখা থাকলেও দোকানি তার কাছ থেকে ৪০০ টাকা দাম রেখেছেন।

আসমা বেগম বলেন, ‘আমি দুই লিটার বোতলজাত তেলের দাম রাখতে দোকানিকে ৫০০ টাকা দিয়েছিলাম। তিনি আমাকে ১০০ টাকা ফেরত দিলেন। অথচ বোতলের গায়ে লেখা আছে ৩৫০ টাকা। বাজারে তেলের সংকটের অজুহাত দেখিয়ে আমার কাছ থেকে ৫০ টাকা নেওয়া হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেল এখনো বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতির শিকার। এসব কি দেখার কেউ নেই?’

আসমা বেগমের মতো প্রতিদিন এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন হাজারও ভোক্তা। বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ কম। লিটারপ্রতি ১৭৫ টাকা বিক্রির কথা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা। এদিকে প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও মিলছে না সুফল। খুচরা পর্যায়ে লিটারপ্রতি ১৬০ টাকা বিক্রির কথা বলা হলেও বাস্তবচিত্র উল্টো। নগরের হালিশহর, ঈদগা, উত্তর আগ্রাবাদ, নাসিরাবাদ এবং কাজীর দেউড়ি এলাকার অলিগলি ঘুরে দেখা গেছে, এসব দোকানে আগে খোলা সয়াবিন ১৯৫ টাকায় বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন বা ভোক্তা অধিকারের অভিযানেও মিলছে না সফলতা।

অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভিযান পরিচালনার সময় সবাই ভালো হয়ে যায়। কিন্তু অভিযান শেষে কর্মকর্তারা চলে গেলে সবকিছু আগের মতো হয়ে ওঠে। কাজেই ব্যবসায়ীদেরই দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে, ন্যায়-নীতি মেনে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, ‘আমরা অভিযানে দেখছি, দোকানিরা মূল্য তালিকা রাখছেন না। অন্যদিকে নির্ধারিত দরে তেল বিক্রি করছেন না। আমরা জরিমানা ও সতর্ক করছি। এরপরও যদি তারা একই আচরণ করেন, তাহলে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে বাধ্য হব।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমাদের দেশে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীর মাথায় একটা বিষয় খুব ভালোভাবে গেঁথে গেছে, সারা বছরের মুনাফা এই রমজান মাসে করতে হবে। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সমাধান মিলবে না। ব্যবসায়ীদের দায়িত্ববান হতে হবে। আর ক্রেতাদেরও প্রয়োজনের বাইরে পণ্য নেওয়া বন্ধ করতে হবে।’

এদিকে ঈদগা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে ১০ ও সোনালি মুরগিতে ২০ টাকা কমেছে। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭৫ ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি দেশি মুরগি আগের ৫৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতি কেজি হাড়সহ গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, হাড় ছাড়া গরুর মাংস ৯০০ টাকা ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১০০ টাকায়।

বাজারটিতে সবজি ও মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের দরেই। বর্তমানে প্রতি কেজি বেগুন ৪০ টাকা, টমেটো ২০, গাজর ৪০, শিম ৪০, শালগম ৩০, ফুলকপি ৩০, আলু ২০, কচুর মুখী ৫০, পেঁপে ৪০, পটোল ৭০, চিচিঙা ৫০, ধুন্দল ৫০, ঝিঙা ৬০ , বরবটি ৮০, ঢেঁড়স ৭০, মিষ্টি কুমড়া ৪০ ও কাঁচামরিচ ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তা ছাড়া প্রতি কেজি রুই ২৮০ টাকা, কাতলা ৩০০, কাঁচকি ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০, টেংরা মাছ ৮০০, বোয়াল ৬০০ টাকা, শোল ৭০০ টাকা, পাঙাশ ১৮০ টাকা ও রূপচাঁদা মাছ ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে মুদি দোকানে প্যাকেট চিনি ১২৫ টাকা, খোলা চিনি ১২০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট আটা ১১৫ টাকা, ছোলা ১২০ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) ১১০ টাকা, মসুর ডাল (ছোট) ১৩৫ টাকা, প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, চায়না রসুন ২৩০ টাকা ও কেরালা আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।