দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধিঃ পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলায় ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ। ফলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে কৃষক ও প্রান্তিক খামারিরা।
কোরবানির ঈদের আগে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় কৃষক ও খামারিদের ক্ষতির ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। এ রোগের প্রতিষেধক (ভ্যাকসিন) সরকারি পর্যায়ে সরবরাহ না থাকায় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন খামারিরা। তবে এ রোগ ছড়িয়ে পড়লেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের ক্ষুদ্র খামারি সহিদুল ইসলাম সরদার বলেন, তাঁর খামারে ছোট বড় মিলিয়ে ১৪টি গরু রয়েছে। চারদিকে যেভাবে রোগ ছড়াচ্ছে তাতে কোরবানি ঈদের জন্য ৫টি বিক্রয় যোগ্য থাকলেও হাটে নিতে ভয় পাচ্ছেন। এ রোগে আক্রান্ত হলে ঈদ কেন্দ্রিক গরু কেনা বেচায় ধস নামার আশংকা করে তিনি বলেন এতে ভীষণভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে খামারিরা।
দক্ষিণ শ্রীরামপুর গ্রামের খামারি রুহুল আমিন মৃধা বলেন, আমার একটি গাভীন ও একটি বাছুরের লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসা চলছে তবে একই গোয়ালে লক্ষাধিক টাকা দামের একটি বলদ গরু লালন পালন করি। এনিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা নিতে আসা চরবয়রা গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, এক মাস আগে আমার এই বাছুরটি আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে এসেছিলাম। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ ব্যবহার করলেও এখনও ভালো হয়নি।
উপজেলার পাঙ্গাসিয়া, লেবুখালী, মুরাদিয়া, আঙ্গারিয়া ও শ্রীরামপুর ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের গরু কম বেশি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের রুপাসিয়া গ্রামের একলাছুর রহমান, মোতালেব, ও শ্রীরামপুর ইউনিয়নের দুমকি গ্রামের সঞ্জীব শীল এর বাছুর মারা গেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আশিক হাজরা বলেন, গরুর লাম্পি স্কিন রোগের (এলএসডি) মৃত্যুর হার কম, প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের শরানাপন্ন হলে আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। এই রোগের সুনির্দিষ্ট ভ্যাকসিন সরকারিভাবে সরবরাহ নেই। শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই রোগ প্রতিরোধে অসুস্থ পশু আলাদা করতে হবে। খামারের ভেতরের এবং আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে মশা-মাছির উপদ্রব কমিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আক্রান্ত গরুকে খামারের শেড থেকে আলাদা করে অন্য স্থানে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখলে অন্য গরুতে সংক্রমণ হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আক্রান্ত গাভীর দুধ বাছুরকে খেতে না দিয়ে মাটি চাপা দেওয়া উচিত। আক্রান্ত গরুর ব্যবহার্য কোনো জিনিস সুস্থ গরুর কাছে আনা বা সেই গরুর খাবার অন্য গরুকে খেতে দেওয়া যাবে না। রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিপাইরেটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। নডিউল বা গুটি ফেটে গেলে বা সেকেন্ডারি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন দমন করার জন্য ক্ষত স্থানে পভিসেপ অথবা ভায়োডিন দিয়ে ড্রেসিং করে বোরিক পাউডার বা সালফানিলামাইড পাউডার লাগানো যেতে পারে।