ঢাকা ১২:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

শতকোটি টাকার সরকারি জমি বিক্রি, দুদকের অভিযানের পর দলিল স্থগিত

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৬:৪৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫
  • ৫৮ বার দেখা হয়েছে

ময়মনসিংহ নগরীর টাউন মৌজার সরকারের ১/১ খতিয়ানের ৮৪ শতক জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে গত ১ জুন সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৮৪৮৯ নম্বর দলিলে মাত্র ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সম্পাদন করা হয়। তবে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঘটনার তদন্তে নামলে তড়িঘড়ি দলিলটি স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন সিনিয়র সহকারী জজ সদর আদালত।

গতকাল রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক পবন চন্দ্র বর্মন বিতর্কিত এই দলিলটির সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন সাময়িকভাবে স্থগিত করার নির্দেশ দেন।

ওই আদেশে বলা হয়- রোববার (২৪ আগস্ট) নথি উপস্থাপনসহ দলিল বাতিলের জন্য ছানি মোকাদ্দমা দায়ের করা হয়েছে। দরখাস্ত মঞ্জুর করা হলো এবং গত ২৭ এপ্রিলের ডিক্রি স্থগিতসহ দলিলের কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।

এর আগে ঘটনাটি ফাঁস হওয়ায় জনমনে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হলে জমিটির মালিকানা হাতবদলে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। এতে প্রশ্ন ওঠে- সরকারি সম্পত্তি কীভাবে ব্যক্তি মালিকানায় বিক্রি হলো? এতে মামলার বাদী-বিবাদী, আদালত এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও অভিযোগ ওঠে।

এর আগে রোববার সকালে সরকারি জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রির ঘটনা সরেজমিনে তদন্তে আসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসাইনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি টিম। এ সময় সদর সাব-রেজিস্ট্রার, জুটমিল কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় এবং জেলা জজ আদালতের সদর কোর্টের বেঞ্চ সহকারীর কার্যালয়ে বিভিন্ন নথিপত্র ঘেটে দেখেন তারা।

খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসাইন বলেন, আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। এতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পেয়েছি। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে আদালত থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে দলিল ও ডিক্রি স্থগিত করার জন্য। তবে এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে আরও অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আজিম উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় আদালতে একটি ছানি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই মামলায় বিতর্কিত দলিল ও ডিক্রি স্থগিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, আরওআর রেকর্ডে এই জমিটি মূলত রেবতী মোহন দাসের মালিকানাধীন ছিল। তবে ১৯৬৩ সালে আইনি প্রক্রিয়ায় আদমজী জুট মিলস লিমিটেডের নামে এই জমিটি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জুট মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে জমিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং বিআরএস জরিপে এটি সরকারি সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। এ ঘটনার প্রায় ৬০ বছর পর ২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের পলাতক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের নেতৃত্বে একটি চক্র জমিটি হাতিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ওই পরিকল্পনা মতে রবীন্দ্র মোহন দাস নামের এক ব্যক্তি নিজেকে রেবতী মোহন দাসের ছেলে দাবি করে জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং-৫১৪/২২) দায়ের করেন। কিন্তু আদালত ২০২৪ সালের ৮ মে মামলাটি খারিজ করে দেন।

কিন্তু বিগত সরকারের ক্ষমতাসীন চক্রটি নতুন  ফন্দি এঁটে  মামলা খারিজ হওয়ার আগেই রবীন্দ্র মোহন দাস আওয়ামী লীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের ঘনিষ্ঠভাজন জনৈক মিরাশ উদ্দিন সুমনকে আমমোক্তারনামা (মামলা পরিচালনার ক্ষমতা) দেন। এরপর তিনি মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে নতুন করে ছানি মামলা দায়ের করেন। এ সময় একাধিক মামলা চলমান থাকা অবস্থাতেই চলতি বছরের ১ জুন ৮৪ শতক জমি মাত্র ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি দেখিয়ে একটি দলিল সম্পাদিত হয়। অথচ জমিটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় শতকোটি টাকা।  একই সঙ্গে এই দলিলে দাতা হিসেবে রবীন্দ্র মোহন দাসের নাম থাকলেও তার পক্ষে স্বাক্ষর করেন সদর জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ পবন চন্দ্র বর্মণ।

এদিকে ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে তড়িঘড়ি তদন্ত শুরু করে জেলা প্রশাসন। এতে তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আজিম উদ্দিন আদালতের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায় আড়াল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এরই মাঝে ঘটনাটি দুদকে গড়ালে শেষমেশ জেলা প্রশাসন নিজেদের রক্ষা করতে আদালতে ছানি মামলা করতে বাধ্য হন। এরপরই আদালত বিতর্কিত এই দলিল ও ডিক্রি স্থগিতের নির্দেশ দেয়।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান কবির সাজু বলেন, আপাতত আদালতের নির্দেশে দলিলটির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত হওয়ায় শতকোটি টাকার এই সরকারি সম্পত্তি বেহাত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। না হলে অপরাধীরা আড়ালেই থেকে যাবে।

শতকোটি টাকার সরকারি জমি বিক্রি, দুদকের অভিযানের পর দলিল স্থগিত

প্রকাশিত : ০৬:৪৬:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

ময়মনসিংহ নগরীর টাউন মৌজার সরকারের ১/১ খতিয়ানের ৮৪ শতক জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে গত ১ জুন সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ৮৪৮৯ নম্বর দলিলে মাত্র ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় সম্পাদন করা হয়। তবে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঘটনার তদন্তে নামলে তড়িঘড়ি দলিলটি স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন সিনিয়র সহকারী জজ সদর আদালত।

গতকাল রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক পবন চন্দ্র বর্মন বিতর্কিত এই দলিলটির সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন সাময়িকভাবে স্থগিত করার নির্দেশ দেন।

ওই আদেশে বলা হয়- রোববার (২৪ আগস্ট) নথি উপস্থাপনসহ দলিল বাতিলের জন্য ছানি মোকাদ্দমা দায়ের করা হয়েছে। দরখাস্ত মঞ্জুর করা হলো এবং গত ২৭ এপ্রিলের ডিক্রি স্থগিতসহ দলিলের কার্যক্রম স্থগিত করা হলো।

এর আগে ঘটনাটি ফাঁস হওয়ায় জনমনে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হলে জমিটির মালিকানা হাতবদলে জাল-জালিয়াতির বিষয়টি সামনে আসে। এতে প্রশ্ন ওঠে- সরকারি সম্পত্তি কীভাবে ব্যক্তি মালিকানায় বিক্রি হলো? এতে মামলার বাদী-বিবাদী, আদালত এবং সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সংশ্লিষ্টতা নিয়েও অভিযোগ ওঠে।

এর আগে রোববার সকালে সরকারি জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রির ঘটনা সরেজমিনে তদন্তে আসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসাইনের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি টিম। এ সময় সদর সাব-রেজিস্ট্রার, জুটমিল কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় এবং জেলা জজ আদালতের সদর কোর্টের বেঞ্চ সহকারীর কার্যালয়ে বিভিন্ন নথিপত্র ঘেটে দেখেন তারা।

খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে দুদকের সহকারী পরিচালক রাজু মোহাম্মদ সারোয়ার হোসাইন বলেন, আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। এতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পেয়েছি। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে আদালত থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে দলিল ও ডিক্রি স্থগিত করার জন্য। তবে এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে আরও অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঘটনার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আজিম উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় আদালতে একটি ছানি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই মামলায় বিতর্কিত দলিল ও ডিক্রি স্থগিত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, আরওআর রেকর্ডে এই জমিটি মূলত রেবতী মোহন দাসের মালিকানাধীন ছিল। তবে ১৯৬৩ সালে আইনি প্রক্রিয়ায় আদমজী জুট মিলস লিমিটেডের নামে এই জমিটি হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে জুট মিলটি বন্ধ হয়ে গেলে জমিটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং বিআরএস জরিপে এটি সরকারি সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। এ ঘটনার প্রায় ৬০ বছর পর ২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের পলাতক সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের নেতৃত্বে একটি চক্র জমিটি হাতিয়ে নেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ওই পরিকল্পনা মতে রবীন্দ্র মোহন দাস নামের এক ব্যক্তি নিজেকে রেবতী মোহন দাসের ছেলে দাবি করে জেলা প্রশাসক ও বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে একটি মামলা (নং-৫১৪/২২) দায়ের করেন। কিন্তু আদালত ২০২৪ সালের ৮ মে মামলাটি খারিজ করে দেন।

কিন্তু বিগত সরকারের ক্ষমতাসীন চক্রটি নতুন  ফন্দি এঁটে  মামলা খারিজ হওয়ার আগেই রবীন্দ্র মোহন দাস আওয়ামী লীগ নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলের ঘনিষ্ঠভাজন জনৈক মিরাশ উদ্দিন সুমনকে আমমোক্তারনামা (মামলা পরিচালনার ক্ষমতা) দেন। এরপর তিনি মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে নতুন করে ছানি মামলা দায়ের করেন। এ সময় একাধিক মামলা চলমান থাকা অবস্থাতেই চলতি বছরের ১ জুন ৮৪ শতক জমি মাত্র ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি দেখিয়ে একটি দলিল সম্পাদিত হয়। অথচ জমিটির বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় শতকোটি টাকা।  একই সঙ্গে এই দলিলে দাতা হিসেবে রবীন্দ্র মোহন দাসের নাম থাকলেও তার পক্ষে স্বাক্ষর করেন সদর জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ পবন চন্দ্র বর্মণ।

এদিকে ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে তড়িঘড়ি তদন্ত শুরু করে জেলা প্রশাসন। এতে তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আজিম উদ্দিন আদালতের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায় আড়াল করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এরই মাঝে ঘটনাটি দুদকে গড়ালে শেষমেশ জেলা প্রশাসন নিজেদের রক্ষা করতে আদালতে ছানি মামলা করতে বাধ্য হন। এরপরই আদালত বিতর্কিত এই দলিল ও ডিক্রি স্থগিতের নির্দেশ দেয়।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহজাহান কবির সাজু বলেন, আপাতত আদালতের নির্দেশে দলিলটির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত হওয়ায় শতকোটি টাকার এই সরকারি সম্পত্তি বেহাত হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। না হলে অপরাধীরা আড়ালেই থেকে যাবে।