পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীতে দেশের নবম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ঘিরে নেমেছে কর্মচাঞ্চল্য। ৪১০ দশমিক ৭৮ একর জমির ওপর পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া গ্রামে স্থাপিত হচ্ছে এ ইপিজেড। ইতিমধ্যে ইপিজেড এলাকায় বালুভরাট, রাস্তা ও ভবন নির্মাণে ব্যস্ত এলাকাটি। সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে নির্মিত এ ইপিজেডে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। থাকবে ৩০৬টি শিল্প প্লট, কারখানা ও আবাসিক ভবন, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, সিইটিপি, হেলিপ্যাডসহ আধুনিক সুবিধা। স্থানীয়দের আশা-এটি বদলে দেবে দক্ষিণাঞ্চলের ভাগ্য।
এই প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে প্রায় তিন লাখ মানুষের। বিনিয়োগ আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি, রপ্তানি সম্ভাবনা বছরে ১৮৩ কোটি ডলার। পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্র ঘিরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বাড়ছে। প্রকল্প পরিচালক জানান, আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কয়েকজন বিনিয়োগকারীর হাতে প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর পটুয়াখালীতে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট পটুয়াখালী ইপিজেড প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।

পদ্মা সেতু ও পায়রা বন্দরের সংযোগে গতি পেয়েছে পটুয়াখালী ইপিজেড, যা এখন বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় রাজধানীর সঙ্গে পটুয়াখালীর সরাসরি সড়ক যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পটুয়াখালীতে গড়ে উঠেছে পায়রা সমুদ্রবন্দর। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দরে রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ইতিমধ্যে ১,৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছে। একই ক্ষমতা সম্পন্ন আরো একটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান কাজ এগিয়ে চলছে। বরগুনার তালতলী পায়রা নদীর তীরে ৩০৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটিও সচল রয়েছে। বাগেরহাটের রামপালেও বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এই সবকিছু বিবেচনায় রেখেই পটুয়াখালীতে ইপিজেড স্থাপনের প্রকল্প গ্রহন করা হয়।
সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে তৈরি এটি বরিশাল বিভাগের প্রথম ইপিজেড। এ ইপিজেডে ৩০৬টি শিল্প প্লট থাকবে। যেখানে বিপুল পরিমানে বিনিয়োগ আসার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী, স্থাপিত শিল্প-ইনফ্রাস্ট্রাকচার থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি পাবে নতুন গতি।
আর সেটি গড়ে তুলতে খরচ হচ্ছে ১ হাজার ৪৪২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ১ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। যার ৪০ শতাংশ মূলধনি বিনিয়োগ। অপর প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা আসবে বেপজার নিজস্ব তহবিল থেকে। আয়তনে পটুয়াখালী ইপিজেড দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইপিজেড। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে এ প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয়। কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের জুন মাসে।

ইপিজেড প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানায়, প্রকল্পের আওতায় রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ করার পাশাপাশি চারটি ছয়তলা কারখানা ভবন, তিনটি ১০ তলা, চারটি ছয় তলা আবাসিক ভবন, একটি ৬ তলা ও দুটি ৪ তলা অফিস ভবন এবং দুটি অন্যান্য ভবন নির্মাণ করা হবে এছাড়াও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১৪টি ১১/০.৪১৫ কেভি সাবস্টেশন, ১৫ কিলোমিটার ১১ কেভি এইচটি লাইন ও একটি ৩৩/১১ কেভি জিআইএস সাবস্টেশন নির্মাণ ও একটি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি), সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি), এমনকি বৃষ্টির জলাধার পর্যন্ত থাকছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য এ প্রকল্পে কুয়াকাটায় প্রায় ৮ একর জমির উপর আলাদা ক্লাবও তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।
পটুয়াখালী ইপিজেডে গড়ে উঠবে হালকা প্রকৌশল, আসবাব, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পোশাক তৈরি কারখানা, ইলেকট্রিক্যাল-ইলেকট্রনিকস থেকে শুরু করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শিল্প। এই ইপিজেড চালু হলে প্রত্যক্ষভাবে চাকরি পাবেন অন্তত এক লাখ মানুষ, আর পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হবে আরও দুই লাখের এবং ওই এলাকার লোকজনদের আর্থ-সামজিক উন্নয়ন হবে ।
ইপিজেডকে ঘীরে বিদেশি বিনিয়োগের হিসেবও চমকপ্রদ। পটুয়াখালীতে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা ১৫৩ কোটি ডলার বা ১৮ হাজার ৩৬০ কোটি টাকার বেশি। উৎপাদন শুরু হলে এখান থেকে বছরে রপ্তানি হবে ১৮৩ কোটি ডলার সমমূল্যের পণ্য। যা প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা।
পটুয়াখালী ইউপিজে’র প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ইপিজেড এলাকায় গ্যাস থাকলে তা বিনিয়োগের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা। গ্যাস ছাড়াও শিল্প স্থাপন সম্ভব। এর উদাহরণ উত্তরা ও মোংলা ইপিজেড। ভোলা থেকে বরিশালে গ্যাস আনার সরকারের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, সেটি বাস্তবায়িত হলে পটুয়াখালী ইপিজেডও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাস-সংযোগ পাবে। ইতোমধ্যে জ্বালানী উপদেষ্টা ভোলা এসে দেখে গেছেন। সে অনুযায়ী কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।
প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, প্রকল্প এলাকার প্রায় ৩০০ একর জমি ইতোমধ্যে বালু ফেলে প্রস্তুত করা হয়েছে। অভ্যন্তরের রাস্তা, রক্ষা প্রাচীরের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। যাদের জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫৪ জনের জন্য পূর্নবাসনের কাজও চলছে। অনেক বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বেশ কয়েকজনকে প্লট বুঝিয়ে দেয়া হবে। তারা যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে উৎপাদনে যেতে পারেন।

ডেস্ক রিপোর্ট 























