ঢাকা ০৫:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

প্রত্যাশা ছাড়িয়ে পাঁচ শিল্পীর চিত্রকর্ম

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০২:৫৯:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫
  • ৪৩ বার দেখা হয়েছে

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিশ্বখ্যাত নিলাম প্রতিষ্ঠান সদবি’সের নিলামে বাংলাদেশের পাঁচ শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছে। এর মধ্যে শিল্পী শহীদ কবির ও কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্ম রেকর্ড করেছে।

গত মঙ্গলবার ‘দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকলা’র এই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার শিল্পীদের চিত্রকর্ম স্থান পায়। মোট ৫৪টি লট দিয়ে সদবি’সের এই নিলাম আয়োজন করা হয়।

সদবি’সের নিলামে বাংলাদেশের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শহীদ কবির, মোহাম্মদ কিবরিয়া, রশিদ চৌধুরী ও কালিদাস কর্মকারের মোট সাতটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে শহীদ কবির ও কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্ম এবারই প্রথম এ নিলামে ওঠে।

এ নিলাম সম্পর্কে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সদবি’সের দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকলা বিভাগের কো-ওয়ার্ল্ডওয়াইড হেড মঞ্জরি সিহারে সুতিন বলেন, দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকর্ম বিভাগের ৩০ বছরের ইতিহাসে এবারের নিলামে শিল্পকর্ম বিক্রি করে সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এবারের নিলামে সাতটি নতুন রেকর্ড হয়েছে।

জয়নুলের চিত্রকর্ম

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার ৮০০ পাউন্ডে (প্রায় ৮৩ লাখ টাকা)। যা ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে বলে প্রত্যাশা ছিল। সদবি’সের ওয়েবসাইটে এই চিত্রকর্মের কোনো শিরোনাম উল্লেখ করা হয়নি। এটি ১৯৬০ সালে কাগজের ওপর জলরঙে আঁকা হয়েছিল।

২০২৪ সালে লন্ডনে সদবি’সের দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকলার নিলামে বিক্রি হয়েছিল জয়নুল আবেদিনের ১৯৭০ সালে আঁকা একটি চিত্রকর্ম। ওই চিত্রকর্মটির আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ হাজার পাউন্ড। তবে বিক্রি হয় ৫ লাখ ১৬ হাজার পাউন্ডে (প্রায় সোয়া ৮ কোটি টাকা)। এটি এখন পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হওয়া জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মের সর্বোচ্চ মূল্য।

একই দামে বিক্রি কিবরিয়া ও রশিদের চিত্রকর্ম

শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া ও রশিদ চৌধুরীর যে দুটি চিত্রকর্ম নিলামে বিক্রি হয়েছে, সেগুলোরও কোনো শিরোনাম উল্লেখ করেনি সদবি’স। এর মধ্যে ২০০৩ সালে ক্যানভাসের ওপর তেলরঙে আঁকা মোহাম্মদ কিবরিয়ার চিত্রকর্মটি বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৬০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা)। সেটি আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১২ থেকে ১৮ হাজার পাউন্ড।

আর রশিদ চৌধুরীর চিত্রকর্মটি ১৯৮২ সালে ক্যানভাসের ওপর তেলরঙে আঁকা। সেটিও বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৬০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা)। ইন্দোনেশিয়ার এক সংগ্রাহকের কাছ থেকে নিলামে তোলা এই চিত্রকর্মটির আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ হাজার পাউন্ড।

শহীদ কবিরের তিন চিত্রকর্ম

শহীদ কবিরের তিনটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৪০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৮৭ লাখ টাকা)। নিলামের আগে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল, সেগুলো সাড়ে সাত হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে।

নিলামে বিক্রি হওয়া শহীদ কবিরের ওই চিত্রকর্ম তিনটি হলো ‘মসজিদ, লালন ও মন্দির’, ‘সাদা ঘোড়ার ওপরে লালন’ এবং ‘কালের যাত্রামঞ্চ’। তিনটি চিত্রকর্মই বোর্ডে টেম্পেরায় আঁকা। চিত্রকর্মগুলো নিলামে এসেছে স্পেনের এক সংগ্রাহকের কাছ থেকে। তাঁর নাম প্রকাশ করেনি সদবি’স।

নিলামের আগে এই তিন চিত্রকর্ম সম্পর্কে সদবি’সের কর্মকর্তা মঞ্জরি সিহারে সুতিন ই-মেইলে পাঠানো প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘এই মাস্টারওয়ার্কগুলো সুফি সাধক লালনের প্রতি একটি উদ্‌যাপন। লালন ছিলেন ১৮-১৯ শতকের একজন মরমী, যিনি সব পটভূমির মানুষকে স্বাগত জানাতেন এবং জাতি, শ্রেণি ও ধর্মীয় বিভাজন প্রত্যাখ্যান করতেন।’

কালিদাসের চিত্রকর্ম

নিলামে কালিদাস কর্মকারের যে চিত্রকর্মটি বিক্রি হয়েছে সেটির শিরোনাম ‘পবিত্র যুদ্ধ’। ১৯৭৮-৭৯ সালে কলম, কালি, গোয়াশ ও কোলাজে চিত্রকর্মটি আঁকা হয়েছে। এটি স্পেনের এক সংগ্রাহকের কাছ থেকে নিলামে এসেছে। নিলামে কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্মটি দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। তবে সেটি বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৩৫০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা)।

নিলামে নতুন ৭ রেকর্ড

আন্তর্জাতিক নিলামে একজন শিল্পীর শিল্পকর্মের বিক্রয়মূল্য যখন আগে নিলামে তোলা তাঁর অন্য কোনো শিল্পকর্মের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্যকে ছাড়িয়ে যায়, তখন তাকে বৈশ্বিক নিলাম রেকর্ড বলে। সদবি’সের এবারের নিলামে নতুন রেকর্ড করা সাতজন হলেন—শহীদ কবির (বাংলাদেশ), কালিদাস কর্মকার (বাংলাদেশ), ফ্রান্সিস নিউটন সুজা (ভারত), গণেশ পাইন (ভারত), লক্ষ্মণ শ্রেষ্ঠা (ভারত), লক্ষ্মণ পাই (ভারত) ও আদিলা সুলেমান (পাকিস্তান)।

এবার মোট ৫৪টি ছবির লট দিয়ে সদবি’সের নিলাম আয়োজন করা হয়। নিলামকারী প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী—এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সংগ্রাহকেরা এই নিলামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাঁদের এক–তৃতীয়াংশই ছিলেন নতুন অংশগ্রহণকারী।

প্রত্যাশা ছাড়িয়ে পাঁচ শিল্পীর চিত্রকর্ম

প্রকাশিত : ০২:৫৯:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিশ্বখ্যাত নিলাম প্রতিষ্ঠান সদবি’সের নিলামে বাংলাদেশের পাঁচ শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছে। এর মধ্যে শিল্পী শহীদ কবির ও কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্ম রেকর্ড করেছে।

গত মঙ্গলবার ‘দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকলা’র এই নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। নিলামে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার শিল্পীদের চিত্রকর্ম স্থান পায়। মোট ৫৪টি লট দিয়ে সদবি’সের এই নিলাম আয়োজন করা হয়।

সদবি’সের নিলামে বাংলাদেশের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, শহীদ কবির, মোহাম্মদ কিবরিয়া, রশিদ চৌধুরী ও কালিদাস কর্মকারের মোট সাতটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে শহীদ কবির ও কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্ম এবারই প্রথম এ নিলামে ওঠে।

এ নিলাম সম্পর্কে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সদবি’সের দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকলা বিভাগের কো-ওয়ার্ল্ডওয়াইড হেড মঞ্জরি সিহারে সুতিন বলেন, দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকর্ম বিভাগের ৩০ বছরের ইতিহাসে এবারের নিলামে শিল্পকর্ম বিক্রি করে সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া এবারের নিলামে সাতটি নতুন রেকর্ড হয়েছে।

জয়নুলের চিত্রকর্ম

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের একটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার ৮০০ পাউন্ডে (প্রায় ৮৩ লাখ টাকা)। যা ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে বলে প্রত্যাশা ছিল। সদবি’সের ওয়েবসাইটে এই চিত্রকর্মের কোনো শিরোনাম উল্লেখ করা হয়নি। এটি ১৯৬০ সালে কাগজের ওপর জলরঙে আঁকা হয়েছিল।

২০২৪ সালে লন্ডনে সদবি’সের দক্ষিণ এশীয় আধুনিক ও সমকালীন শিল্পকলার নিলামে বিক্রি হয়েছিল জয়নুল আবেদিনের ১৯৭০ সালে আঁকা একটি চিত্রকর্ম। ওই চিত্রকর্মটির আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ হাজার পাউন্ড। তবে বিক্রি হয় ৫ লাখ ১৬ হাজার পাউন্ডে (প্রায় সোয়া ৮ কোটি টাকা)। এটি এখন পর্যন্ত নিলামে বিক্রি হওয়া জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্মের সর্বোচ্চ মূল্য।

একই দামে বিক্রি কিবরিয়া ও রশিদের চিত্রকর্ম

শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়া ও রশিদ চৌধুরীর যে দুটি চিত্রকর্ম নিলামে বিক্রি হয়েছে, সেগুলোরও কোনো শিরোনাম উল্লেখ করেনি সদবি’স। এর মধ্যে ২০০৩ সালে ক্যানভাসের ওপর তেলরঙে আঁকা মোহাম্মদ কিবরিয়ার চিত্রকর্মটি বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৬০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা)। সেটি আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১২ থেকে ১৮ হাজার পাউন্ড।

আর রশিদ চৌধুরীর চিত্রকর্মটি ১৯৮২ সালে ক্যানভাসের ওপর তেলরঙে আঁকা। সেটিও বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার ৫৬০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৫৮ লাখ টাকা)। ইন্দোনেশিয়ার এক সংগ্রাহকের কাছ থেকে নিলামে তোলা এই চিত্রকর্মটির আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ হাজার পাউন্ড।

শহীদ কবিরের তিন চিত্রকর্ম

শহীদ কবিরের তিনটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে ৫৩ হাজার ৩৪০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ৮৭ লাখ টাকা)। নিলামের আগে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছিল, সেগুলো সাড়ে সাত হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে।

নিলামে বিক্রি হওয়া শহীদ কবিরের ওই চিত্রকর্ম তিনটি হলো ‘মসজিদ, লালন ও মন্দির’, ‘সাদা ঘোড়ার ওপরে লালন’ এবং ‘কালের যাত্রামঞ্চ’। তিনটি চিত্রকর্মই বোর্ডে টেম্পেরায় আঁকা। চিত্রকর্মগুলো নিলামে এসেছে স্পেনের এক সংগ্রাহকের কাছ থেকে। তাঁর নাম প্রকাশ করেনি সদবি’স।

নিলামের আগে এই তিন চিত্রকর্ম সম্পর্কে সদবি’সের কর্মকর্তা মঞ্জরি সিহারে সুতিন ই-মেইলে পাঠানো প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘এই মাস্টারওয়ার্কগুলো সুফি সাধক লালনের প্রতি একটি উদ্‌যাপন। লালন ছিলেন ১৮-১৯ শতকের একজন মরমী, যিনি সব পটভূমির মানুষকে স্বাগত জানাতেন এবং জাতি, শ্রেণি ও ধর্মীয় বিভাজন প্রত্যাখ্যান করতেন।’

কালিদাসের চিত্রকর্ম

নিলামে কালিদাস কর্মকারের যে চিত্রকর্মটি বিক্রি হয়েছে সেটির শিরোনাম ‘পবিত্র যুদ্ধ’। ১৯৭৮-৭৯ সালে কলম, কালি, গোয়াশ ও কোলাজে চিত্রকর্মটি আঁকা হয়েছে। এটি স্পেনের এক সংগ্রাহকের কাছ থেকে নিলামে এসেছে। নিলামে কালিদাস কর্মকারের চিত্রকর্মটি দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার পাউন্ডে বিক্রি হতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিল। তবে সেটি বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৩৫০ পাউন্ডে (প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা)।

নিলামে নতুন ৭ রেকর্ড

আন্তর্জাতিক নিলামে একজন শিল্পীর শিল্পকর্মের বিক্রয়মূল্য যখন আগে নিলামে তোলা তাঁর অন্য কোনো শিল্পকর্মের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্যকে ছাড়িয়ে যায়, তখন তাকে বৈশ্বিক নিলাম রেকর্ড বলে। সদবি’সের এবারের নিলামে নতুন রেকর্ড করা সাতজন হলেন—শহীদ কবির (বাংলাদেশ), কালিদাস কর্মকার (বাংলাদেশ), ফ্রান্সিস নিউটন সুজা (ভারত), গণেশ পাইন (ভারত), লক্ষ্মণ শ্রেষ্ঠা (ভারত), লক্ষ্মণ পাই (ভারত) ও আদিলা সুলেমান (পাকিস্তান)।

এবার মোট ৫৪টি ছবির লট দিয়ে সদবি’সের নিলাম আয়োজন করা হয়। নিলামকারী প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী—এশিয়া, উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের সংগ্রাহকেরা এই নিলামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। তাঁদের এক–তৃতীয়াংশই ছিলেন নতুন অংশগ্রহণকারী।