ঢাকা ১০:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে রাবনাবাদ নদীতে বিলীন হচ্ছে বেড়িবাঁধ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৪:২৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
  • ৪৩ বার দেখা হয়েছে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
সাগরে সৃষ্ট নিন্মচাপ ও অমাবশ্যার প্রভাবে উপকূলীয় পটুয়াখালীর জেলায় নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার কলাপাড়ায় রাবনাবাদ নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে করমজাতলায় বেড়িবাঁধ আবার নতুন করে ভাঙতে শুরু করেছে। শুক্র ও শনিবার এই দুইদিনের বাঁধের অন্তত ৪০০ ফুট নদীতে ধসে পড়েছে। যে কোন সময়ে ভেঙে বিচ্ছিন্ন হতে পারে এই বাঁধ। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বাঁধ সংলগ্ন চার গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কলাপাড়ার চম্পাপুর ইউনিয়নের করমজাতলা এলাকার বেড়িবাঁধ প্রতিবছরই রাবনাবাদ নদীর ভাঙনের শিকার হয়। এই বাঁধ ঘিরে এলাকার চম্পাপুর , করমজাতলা, দেবপুর ও উত্তর দেবপুরসহ আশপাশ এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করছে। প্রতিবছরই ভাঙনে লবনপানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্থ হতো এলাকার কৃষিফসল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাতমাস আগে করমজাতলায় এক কিলোমিটারের বেশি ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ জরুরী সুরক্ষার জন্য জিও টিউব ও জিও ব্যাপ স্থাপনের কাজ শেষ করে।
এদিকে দুইদিনের উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সেই বাঁধের অন্তত ৪০০ ফুট মূলবাঁধসহ নদীর পাড়ের অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এই বাঁধ। যে কোন সময়ে বিচ্ছন্ন হয়ে বাঁধ সংলগ্ন চারগ্রামসহ আশপাশ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. রেজাউল জানান জানান, শুক্রবারের জলোচ্ছ্বাসে জিও টিউব জিওব্যাগসহ অন্তত ৪০০ ফুট বাঁধের উপরের অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঢেউয়ের ঝাপটায় বাঁধ ধসে পড়ছে। শনিবার দুপুরের জোয়ারের সময়ও একই অবস্থা বিনাজ করছে। যে কোন সময়ে বাঁধ ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাঁধের মধ্যে পানি ঢুকে প্লাবিত হবে পুরো এলাকা। ফলে তাঁদের বসতিও টিকবে না। লোনা পানিতে প্লাবিত হবে ফসলের খেত। স্থানীয়রা জানায়, বছরের পর বছর রাবনাবাদ নদী থেকে অসংখ্য ড্রেজার দিয়ে বালু কাটে উত্তোলন করার ফলে তাদের জীবন রক্ষাকারী বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকি বহুগুনে বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, কলাপাড়া উপজেলার করমজাতলা এলাকায় ৫৪/এ পোল্ডারের ১৩ দশমিক শুণ্য কিলোমিটার থেকে ১৪ দশমিক ১২০ তম কিলোমিটার পর্যন্ত এক হাজার ১২০ মিটার বেড়িবাঁধের ভাঙনরোধে জরুরি প্রতিরক্ষার জন্য জিওটিউব ও জিওব্যাগ স্থাপন করা হয়। এজন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।
এ কাজের মনিটরিংএ নিয়োজিত পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যা রতন সরকার জানান, এমনিতেই আবহাওয়া জনিত কারণ ছাড়াও জোয়ারের রাবনাবাদের উত্তাল হয়ে ওঠে। নদীর ঢেউয়ের আঘাত পড়ে বাঁধের ওপর। বেড়িবাঁধের ভাঙনরোধে জরুরী প্রতিরক্ষার দেওয়ার জন্য জিওটিউব ও জিওব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। মাটির সংকট ছিল। অনেকদূর থেকে মাটি সংগ্রহ করতে হয়েছে। তারপরও সুন্দরভাবে করা হয়েছে। প্রায় সাত মাস আগে কাজটি করা হয়েছে। তিনি জানান, মূলত করমজাতলার ওই পয়েন্টটি খুবই ঝুকিপূর্ণ এলাকা। এজন্য ব্লক ফেলে স্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।
পাউবো জানায়, সাগরে সৃস্ট নিন্মচাপ ও অমাবশ্যার প্রভাবে নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার দুপুরের জোয়ারে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
বাঁধ ধসে পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহআলম জানান, মূলত ওই জায়গাটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ । মাটি ও প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। এই অবস্থায় ওখানটায় স্থায়ী সুরক্ষার জন্য বিকল্প বেড়িবাঁধ করতে হবে। ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ ব্যাপারে দ্রুত উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।

জনপ্রিয় সংবাদ

জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে রাবনাবাদ নদীতে বিলীন হচ্ছে বেড়িবাঁধ

প্রকাশিত : ০৪:২৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
সাগরে সৃষ্ট নিন্মচাপ ও অমাবশ্যার প্রভাবে উপকূলীয় পটুয়াখালীর জেলায় নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার কলাপাড়ায় রাবনাবাদ নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। জোয়ারের জলোচ্ছ্বাসে করমজাতলায় বেড়িবাঁধ আবার নতুন করে ভাঙতে শুরু করেছে। শুক্র ও শনিবার এই দুইদিনের বাঁধের অন্তত ৪০০ ফুট নদীতে ধসে পড়েছে। যে কোন সময়ে ভেঙে বিচ্ছিন্ন হতে পারে এই বাঁধ। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে বাঁধ সংলগ্ন চার গ্রামের মানুষ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কলাপাড়ার চম্পাপুর ইউনিয়নের করমজাতলা এলাকার বেড়িবাঁধ প্রতিবছরই রাবনাবাদ নদীর ভাঙনের শিকার হয়। এই বাঁধ ঘিরে এলাকার চম্পাপুর , করমজাতলা, দেবপুর ও উত্তর দেবপুরসহ আশপাশ এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা নির্ভর করছে। প্রতিবছরই ভাঙনে লবনপানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্থ হতো এলাকার কৃষিফসল।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সাতমাস আগে করমজাতলায় এক কিলোমিটারের বেশি ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ জরুরী সুরক্ষার জন্য জিও টিউব ও জিও ব্যাপ স্থাপনের কাজ শেষ করে।
এদিকে দুইদিনের উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সেই বাঁধের অন্তত ৪০০ ফুট মূলবাঁধসহ নদীর পাড়ের অংশ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এই বাঁধ। যে কোন সময়ে বিচ্ছন্ন হয়ে বাঁধ সংলগ্ন চারগ্রামসহ আশপাশ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. রেজাউল জানান জানান, শুক্রবারের জলোচ্ছ্বাসে জিও টিউব জিওব্যাগসহ অন্তত ৪০০ ফুট বাঁধের উপরের অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঢেউয়ের ঝাপটায় বাঁধ ধসে পড়ছে। শনিবার দুপুরের জোয়ারের সময়ও একই অবস্থা বিনাজ করছে। যে কোন সময়ে বাঁধ ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাঁধের মধ্যে পানি ঢুকে প্লাবিত হবে পুরো এলাকা। ফলে তাঁদের বসতিও টিকবে না। লোনা পানিতে প্লাবিত হবে ফসলের খেত। স্থানীয়রা জানায়, বছরের পর বছর রাবনাবাদ নদী থেকে অসংখ্য ড্রেজার দিয়ে বালু কাটে উত্তোলন করার ফলে তাদের জীবন রক্ষাকারী বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকি বহুগুনে বেড়েছে বলে মনে করছেন তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, কলাপাড়া উপজেলার করমজাতলা এলাকায় ৫৪/এ পোল্ডারের ১৩ দশমিক শুণ্য কিলোমিটার থেকে ১৪ দশমিক ১২০ তম কিলোমিটার পর্যন্ত এক হাজার ১২০ মিটার বেড়িবাঁধের ভাঙনরোধে জরুরি প্রতিরক্ষার জন্য জিওটিউব ও জিওব্যাগ স্থাপন করা হয়। এজন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।
এ কাজের মনিটরিংএ নিয়োজিত পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার উপসহকারী প্রকৌশলী বিদ্যা রতন সরকার জানান, এমনিতেই আবহাওয়া জনিত কারণ ছাড়াও জোয়ারের রাবনাবাদের উত্তাল হয়ে ওঠে। নদীর ঢেউয়ের আঘাত পড়ে বাঁধের ওপর। বেড়িবাঁধের ভাঙনরোধে জরুরী প্রতিরক্ষার দেওয়ার জন্য জিওটিউব ও জিওব্যাগ স্থাপন করা হয়েছে। মাটির সংকট ছিল। অনেকদূর থেকে মাটি সংগ্রহ করতে হয়েছে। তারপরও সুন্দরভাবে করা হয়েছে। প্রায় সাত মাস আগে কাজটি করা হয়েছে। তিনি জানান, মূলত করমজাতলার ওই পয়েন্টটি খুবই ঝুকিপূর্ণ এলাকা। এজন্য ব্লক ফেলে স্থায়ী সুরক্ষা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।
পাউবো জানায়, সাগরে সৃস্ট নিন্মচাপ ও অমাবশ্যার প্রভাবে নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার দুপুরের জোয়ারে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
বাঁধ ধসে পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহআলম জানান, মূলত ওই জায়গাটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ । মাটি ও প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। এই অবস্থায় ওখানটায় স্থায়ী সুরক্ষার জন্য বিকল্প বেড়িবাঁধ করতে হবে। ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ ব্যাপারে দ্রুত উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।