ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল মুক্তির ৭৮তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘ফিরে দেখা আজাদি’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন আলমগীর হোসেন।
সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৪৭ সালের এই দিনে ভারতবর্ষের মুসলমানরা দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অর্জন করেছিল, যা ছিল দুইশ বছরের ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির দিন। কিন্তু আমাদেরকে সেই ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। অথচ আমাদের শেখানো হয়– হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাস শুরু হয়েছে বায়ান্ন থেকে।
লেখক, বুদ্ধিজীবী ও মনোচিকিৎসক ডা. ফাহমিদ-উর-রহমান বলেন, আজকের দিনে আমরা শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা পাইনি, মুসলিম জাতিসত্তার স্বীকৃতি পেয়েছিলাম। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পেছনে বাংলার মুসলমানদের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি মোহর আলীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ১৭৫৭ সালের পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতন শুধু নবাব পরিবারের পতন ছিল না, বরং ইউরোপের কাছে সমগ্র এশিয়ার পরাজয় ছিল।
ডা. ফাহমিদ-উর-রহমান আরও বলেন, ৪৭-কে যারা অস্বীকার করে, তারা আসলে বাংলাদেশের জন্মকেও অস্বীকার করে। দ্বিজাতিতত্ত্বকে শুধু জিন্নাহ বা নবাব সলিমুল্লাহর দায় হিসেবে দেখা ভুল। উনিশ শতকের হিন্দু মেলা, শিবাজী উৎসব, অনুশীলন, যুগান্তরের মতো হিন্দুয়ানি সংস্কৃতিগুলোও দ্বিজাতিতত্ত্বের বীজ বপন করেছিল।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. বিলাল হোসাইন বলেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলায় শুধু রাজনৈতিক দখলই নেয়নি, বরং হিন্দু জমিদারদের সঙ্গে মিলে একটি ‘দ্বৈত উপনিবেশ’ তৈরি করেছিল। ছিয়াত্তরের মন্বন্তরসহ নানা দুর্ভিক্ষ ছিল তাদের শোষণনীতির ফল।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম মনজুর মনে করেন, কায়েদে আজম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে ইতিহাসে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জিন্নাহ, আল্লামা ইকবালরা ছিলেন মুসলমানদের রাজনৈতিক মুক্তির ধারাবাহিক সংগ্রামের মূল প্রেরণা।
বক্তারা আরও বলেন, ১৯৪৭ সালের আজাদির ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে স্বাধীন বাংলাদেশ। বঙ্গবিজয় থেকে ফরায়েজি আন্দোলন, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, সিপাহী বিদ্রোহ, সাতচল্লিশ, একাত্তর ও চব্বিশের সংগ্রাম– সবই এই অঞ্চলের মানুষের শোষণবিরোধী ধারাবাহিক লড়াইয়ের অংশ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশের ইতিহাসকে ‘ফিকশন’ বা পক্ষপাতদুষ্ট বর্ণনা থেকে মুক্ত করার আহ্বান জানান এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সব ধরনের আধিপত্যবাদ ও হেজিমনির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।

ডেস্ক রিপোর্ট 























