ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে একাট্টা হচ্ছে বিভিন্ন দেশ। ক্রীড়াঙ্গনও এর বাইরে নয়। তারই অংশ হিসেবে গত ১৪ সেপ্টেম্বর স্পেনে এক লাখ ‘প্রো-প্যালেস্টিনিয়ান’ (ফিলিস্তিনপন্থী) মানুষ সাইক্লিংয়ের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কিন্তু ‘স্প্যানিশ ভুয়েল্টা’ নামের সেই সাইক্লিং ট্যুর চূড়ান্ত ধাপে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। উভয়পক্ষের সংঘর্ষ বাধে সেখানে।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে খেলার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইভেন্টেও ইসরায়েলকে বাইরে রাখার দাবি তুলেছেন স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। তার প্রশ্ন– ‘রাশিয়াকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিষিদ্ধ করা হলে, ইসরায়েলকে কেন নয়? এখনই ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক খেলায় বয়কটের সময়, যতক্ষণ না তারা গাজায় বর্বরতা বন্ধ করে।’ এর একদিন পরই ইউরোপের তিনটি দেশ থেকে ‘ইউরোভিশন সং কনটেস্টে’ ইসরায়েলিদের প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে। তবে সানচেজের মতো অন্য কোনো বিশ্বনেতা এখনও খেলায় ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের আওয়াজ তোলেনি।
এর আগে থেকেই হলিউডের নির্মাতা, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও কলাকুশলীদের অনেকে ইসরায়েলের সিনেমা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বয়কটের দাবি তুলে আসছেন। একইভাবে রাশিয়ার মতো খেলায়ও তাদের নিষিদ্ধের দাবি ওঠার পর আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টোফ দুবি জানান, ‘দুটি ভিন্ন বিষয়।’ সংবাদ সংস্থা এপি’র তথ্যমতে, এর আগেও আইওসি এবং ফিফা রাশিয়ার মতো ইসরায়েলকে কেন নিষিদ্ধ করা হবে না, তার পেছনে যুক্তি আছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু ওই মতামতের স্বপক্ষে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।
আইওসি’র ব্যাখ্যা ছিল, ‘রাশিয়া যেমন পশ্চিম ইউক্রেনের কিছু এলাকা দখল করে অলিম্পিক বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে, ইসরায়েল তেমনটা করেনি। ইউরোপিয়ান সকার ফেডারেশন কিংবা কোনো ক্লাবের পক্ষ থেকেও ইসরায়েলি প্রতিপক্ষের সঙ্গে খেলা নিয়ে আপত্তি জানায়নি।’ অন্যদিকে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত সাড়ে ছয়শ’র বেশি অ্যাথলেট নিহতের দাবিতে দেশটিকে নিষেধাজ্ঞার আহবান জানিয়েছিল ফিলিস্তিন সকার অ্যাসোসিয়েশন। তবে এর বিপরীতে এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি ফিফা।
এদিকে, ইউরোপা লিগে আগামী ৬ নভেম্বর অ্যাস্টন ভিলার সঙ্গে ইসরায়েলি ক্লাব মাকাবি তেলআবিবেরর ম্যাচ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এক ব্রিটিশ সংসদ সদস্য জননিরাপত্তা ও সামাজিক সম্প্রীতি নিশ্চিতের লক্ষ্যে উয়েফাকে ম্যাচটি বাতিলের আহবান জানান। যদিও সংস্থাটি এখনও কিছু জানায়নি। ইউরোপের বেশ কয়েকটি ক্রীড়া সংস্থার অভিযোগ– ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নিষিদ্ধ না করায় তাদের দলের বিপক্ষে না খেলার উপায় নেই।
প্রায় নিয়মিতভাবেই ইউরোপীয় ফুটবলে স্টেডিয়ামের ভেতরে কিংবা গ্যালারিতে ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রতিবাদ দেখা যায়। গত মে মাসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে পিএসজি সমর্থকরা ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করো’ লেখা ব্যানার প্রদর্শন করেছিল। আগস্টে পিএসজি ও টটেনহ্যামের সুপার কাপ ম্যাচ শুরুর আগে উদিনেতে মাঠে ‘শিশু হত্যা বন্ধ করো, বেসামরিক হত্যা বন্ধ করো’ লেখা ব্যানার দেখানো হয়। টেনিসেও একই পরিস্থিতি। গত সপ্তাহে কানাডায় নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে দর্শকবিহীন কোর্টে ডেভিস কাপের ম্যাচ হয়েছিল। যেখানে প্রতিযোগী ছিলেন এক ইসরায়েলি। এর আগে শতাধিক কানাডীয় ক্রীড়াবিদ ও শিক্ষাবিদ ম্যাচ বাতিল করতে টেনিস কানাডাকে অনুরোধ করেছিলেন।