ঢাকা ১১:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৭ হাজার কোটি টাকা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৯:২৪:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • ১ বার দেখা হয়েছে

দে‌শের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে বড় দরপতন দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে, কমেছে তার ২১ গুণ বেশি সংখ্যকের। এই বড় দরপতনে এক সপ্তাহেই এক্সচেঞ্জ সবগুলো মূল্যসূচক প্রায় ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এক্সচেঞ্জটির দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। আর বাজার মূলধন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা কমেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে এই বড় দরপতনের পেছনে বেশ কিছু বিষয় নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের দাম শূন্য ঘোষণা করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির করা মার্জিন ঋণ–সংক্রান্ত নতুন বিধান এবং নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ অন্যতম। বিশেষ করে মার্জিন ঋণ ও ‘লকডাউন’ বড় নেতিবাচক ভূমিকায় ছিল। লকডাউনের কারণে শেষ দিনে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল কম। তার ওপরে মার্জিন ঋণ আতঙ্কে কম দামে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা দেখা গেছে। এসব কারণে সপ্তাহটিতে বাজারে বড় পতন হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৮৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির, কমেছে ৩৬৩টির ও দর অপরিবর্তিত ছিল ৩টির। আর লেনদেন হয়নি ৩০টির।

দরবৃদ্ধির চেয়ে ২১ গুণ বেশি সিকিউরিটিজের দরপতন হওয়ায় গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৬৫ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ৪ হাজার ৭০৩ পয়েন্টে নেমেছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৪ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে।

অন্য সূচকগুলোর মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৮৯ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮৫১ পয়েন্টে নেমেছে। এ ছাড়া, ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস সপ্তাহের ব্যবধানে ৬২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে ৯৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউস ইবিএল সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ইসলামী ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, রেনাটা পিএলসি ও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার।

ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে দৈনিক গড়ে ৩৫৪ কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৪৮৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ২৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৬ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

খাতভিত্তিক লেনদেনে গত সপ্তাহে প্রকৌশল খাতের আধিপত্য ছিল। লেনদেনচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে ছিল প্রকৌশল খাত। ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ব্যাংক খাত ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তালিকার চতুর্থ অবস্থানে ছিল। আর ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তালিকার পঞ্চম অবস্থানে ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত।

ডিএসইতে গত সপ্তাহে সব খাতের শেয়ারেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে জীবন বীমা খাতে। এ ছাড়া কাগজ ও মুদ্রণ খাতে ১৭, পাট খাতে ১৫ দশমিক ৩, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১২ দশমিক ৮৭ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন ছিল।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই গত সপ্তাহে ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৪০১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর সিএসসিএক্স সূচকটি সপ্তাহের ব্যবধানে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৩১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সিএসইতে গত সপ্তাহে ৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৯৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। আলোচ্য সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৯টির, কমেছে ২৩৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৭টির।

ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৭ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত : ০৯:২৪:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

দে‌শের পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহে বড় দরপতন দেখা গেছে। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) যে কয়টি শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে, কমেছে তার ২১ গুণ বেশি সংখ্যকের। এই বড় দরপতনে এক সপ্তাহেই এক্সচেঞ্জ সবগুলো মূল্যসূচক প্রায় ৫ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এক্সচেঞ্জটির দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। আর বাজার মূলধন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা কমেছে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারে এই বড় দরপতনের পেছনে বেশ কিছু বিষয় নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারের দাম শূন্য ঘোষণা করা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির করা মার্জিন ঋণ–সংক্রান্ত নতুন বিধান এবং নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ঘোষিত ‘লকডাউন’ অন্যতম। বিশেষ করে মার্জিন ঋণ ও ‘লকডাউন’ বড় নেতিবাচক ভূমিকায় ছিল। লকডাউনের কারণে শেষ দিনে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল কম। তার ওপরে মার্জিন ঋণ আতঙ্কে কম দামে শেয়ার বিক্রির প্রবণতা দেখা গেছে। এসব কারণে সপ্তাহটিতে বাজারে বড় পতন হয়েছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৮৩টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির, কমেছে ৩৬৩টির ও দর অপরিবর্তিত ছিল ৩টির। আর লেনদেন হয়নি ৩০টির।

দরবৃদ্ধির চেয়ে ২১ গুণ বেশি সিকিউরিটিজের দরপতন হওয়ায় গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৬৫ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। সপ্তাহ শেষে সূচকটির অবস্থান ৪ হাজার ৭০৩ পয়েন্টে নেমেছে। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৪ হাজার ৯৬৮ পয়েন্টে।

অন্য সূচকগুলোর মধ্যে নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ৮৯ পয়েন্ট বা ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮৫১ পয়েন্টে নেমেছে। এ ছাড়া, ডিএসইর শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস সপ্তাহের ব্যবধানে ৬২ পয়েন্ট বা ৫ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে ৯৭৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউস ইবিএল সিকিউরিটিজের তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ইসলামী ব্যাংক, বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, রেনাটা পিএলসি ও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার।

ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে দৈনিক গড়ে ৩৫৪ কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৪৮৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এক্সচেঞ্জটির দৈনিক গড় লেনদেন কমেছে ২৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকায়। আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১৬ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা বা ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

খাতভিত্তিক লেনদেনে গত সপ্তাহে প্রকৌশল খাতের আধিপত্য ছিল। লেনদেনচিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৪ দশমিক ১৪ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে ছিল প্রকৌশল খাত। ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। তৃতীয় অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ব্যাংক খাত ৮ দশমিক ৭৩ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তালিকার চতুর্থ অবস্থানে ছিল। আর ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তালিকার পঞ্চম অবস্থানে ছিল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত।

ডিএসইতে গত সপ্তাহে সব খাতের শেয়ারেই নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে জীবন বীমা খাতে। এ ছাড়া কাগজ ও মুদ্রণ খাতে ১৭, পাট খাতে ১৫ দশমিক ৩, মিউচুয়াল ফান্ড খাতে ১২ দশমিক ৮৭ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ১১ দশমিক ৪২ শতাংশ নেতিবাচক রিটার্ন ছিল।

দেশের আরেক পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই গত সপ্তাহে ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ কমে ১৩ হাজার ৪০১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর সিএসসিএক্স সূচকটি সপ্তাহের ব্যবধানে ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৩১৯ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

সিএসইতে গত সপ্তাহে ৮০ কোটি ৩৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, আগের সপ্তাহে যা ছিল ৯৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। আলোচ্য সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৯টির, কমেছে ২৩৬টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৭টির।