আগামী ১ নভেম্বর থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ২ হাজার করে পর্যটক আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন।
শেখ বশির উদ্দীন বলেন, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে শুধু দিনের বেলা সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করা যাবে। আর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে রাতে অবস্থান করতে পারবেন পর্যটকরা। পর্যটকদের যাওয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে এই সফটওয়্যার পরিচালিত হবে। যদিও সফটওয়্যারের কাজ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
পর্যটন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দারা এই ঘোষণার অপেক্ষায় ছিলেন। ঘোষণা আসার পর প্রবাল দ্বীপে পর্যটন খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নয় পূর্ণ ৪ মাসই রাত্রিযাপনের সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে জাহাজ চলাচলের পরিস্থিতি না থাকায় কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজগুলোকে যাত্রা করতে হবে। কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন-কক্সবাজার রুটে দিনে গিয়ে দিনে ফেরত আসা পর্যটকদের জন্য কষ্টসাধ্য বলে জানান সী ক্রুজ অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (স্কোয়াব) এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর।
তিনি বলেন, ঢাকা থেকে ১২ ঘণ্টা জার্নি করে এসে প্রথমে কক্সবাজার, আবার কক্সবাজার থেকে ৬-৯ ঘণ্টা জার্নি করে সেন্ট মার্টিন, তারপর আবারও ৬-৯ ঘণ্টা জার্নি করে কক্সবাজার চলে আসাটা পর্যটকদের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
পূর্ণ ৪ মাসই পর্যটকদের রাত্রিযাপন করার সুযোগ দিলে নানা সমস্যায় জর্জরিত দ্বীপবাসীর জন্য স্বস্তির সংবাদ হবে মনে করেন সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম। মুঠোফোনে সেন্ট মার্টিন থেকে তিনি বলেন, আমরা দ্বীপবাসীরা নানা কারণে কষ্ট পাচ্ছি। পর্যটক না আসলে আমাদের দিনযাপন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এছাড়াও বিধিনিষেধ তো আছেই। সরকার যদি ৪ মাসই পর্যটকদের এখানে রাতে থাকার সুযোগ দেয় তাহলে দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রায় গতি আসবে। সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করলে আমরা খুশি হবো।
গতবছর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠন করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় সেন্টমার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। পরে নয় মাস ভ্রমণের জন্য সেন্ট মার্টিনে যাওয়া যাবে না বলে জানানো হয়।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সেসময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতেই ভ্রমণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, সেন্ট মার্টিনকে স্থানীয় জনগণ কেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্রে রূপ দেয়া হবে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাঁচানোর প্রয়াসকে ভিত্তিহীন কথা দিয়ে ভিন্নপথে পরচালিত করার সুযোগ নেই, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাঁচাতে বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকার নতুন কিছু নয় বরং বহু পুরনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে।