বাংলাদেশের ডিজিটাল ও জনপরিসরে সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতা, ডিজিটাল দমন-পীড়ন এবং লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য ছড়ানোর মতো ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় চালু হলো নতুন ওয়েব পোর্টাল “সিভিক ডিফেন্ডারস অব বাংলাদেশ”। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল অধিকার ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা রক্ষা করাই এই প্ল্যাটফর্মের মূল লক্ষ্য।
সোমবার ঢাকার মোহাম্মদপুরের ওয়াই ডাবলিউ সিএ মিলনায়তনে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওয়েব পোর্টালটি গণমাধ্যম, মানবাধিকারকর্মী, উন্নয়ন সহযোগী ও সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হয়। বেসরকারি অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ‘ভয়েস’ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্য নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর গণতান্ত্রিক অধিকার ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ কাঠামো গঠনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আলোচকদের মধ্যে ছিলেন নীতি পর্যালোচক ড. অনন্য রায়হান, নারীবাদী অধিকার কর্মী সামিনা ইয়াসমিন, উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ টনি মাইকেল গোমেজ এবং আদিবাসী অধিকার কর্মী ডালিয়া চাকমা।
ড. অনন্য রায়হান বলেন, “ডিজিটাল ও নাগরিক পরিসরে অধিকার লঙ্ঘনের শিকার ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা জোরদার করার জন্য বাংলাদেশে কিছু আইনগত সংস্কার বা কাঠামো প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে এই ধরনের ওয়েব পোর্টাল আইনব্যবস্থার সাহায্যকারী পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে।”
সামিনা ইয়াসমিন বলেন, নারীবাদী আন্দোলন ও নারী অধিকার সংগঠনগুলো এই পোর্টালকে ব্যবহার করে লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্যমূলক ক্যাম্পেইনের ক্ষতিকর দিক মোকাবিলা করতে পারে, নিরাপদ ডিজিটাল পরিসরের পক্ষে সোচ্চার হতে পারে এবং নাগরিক জীবনে অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে। শুধু তাই নয়, নারী সাংবাদিকদের জন্যেও এই প্ল্যাটফর্মটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সংবাদ মাধ্যমে আমরা নারী ও পুরুষের সংবাদের ভিন্নতা দেখি। এই বৈষম্যসহ অপতথ্যগুলো এই ওয়েব পোর্টালে উঠে আসা উচিত।
উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ টনি মাইকেল গোমেজ বলেন, এই ওয়েব পোর্টালটি একটি অ্যাডভোকেসি ও ক্ষমতায়নের হাতিয়ার। এমন প্ল্যাটফর্মগুলোকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে যাতে যুবসমাজ, তৃণমূল ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং বৃহত্তর নাগরিক পরিসরে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রতিরোধে অবদান রাখতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মটি একটি ইনফরমেশন টুল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।
ডালিয়া চাকমা বলেন, ওয়েব পোর্টালটির অন্যতম শক্তিশালী দিক হলো- জনপরিসরের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো যাচাই করে নথিভুক্ত করা হয়েছে। বাস্তব জীবনের ডিজিটাল ও নাগরিক পরিসরে অধিকার লঙ্ঘন এবং লিঙ্গভিত্তিক অপতথ্যের কেস স্টাডিগুলো শুধুমাত্র সচেতনতা বাড়াতেই নয়, বরং বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, এমনকি নীতিনির্ধারকদের অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।
প্রকল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন ভয়েসের উপ-পরিচালক মুশাররাত মাহেরা। ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, এই ওয়েব পোর্টালটি একটি প্রযুক্তিভিত্তিক নথির ভান্ডার হিসেবে কাজ করবে, যা আসলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জনপরিসরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর দলিল। আগামীর গবেষক এবং অধিকারকর্মীদের জন্য এতে সমন্বিত তথ্যাবলি অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে আমি আশা রাখি।