কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ গড়েছেন হিন্দু ও মুসলিম ধর্মের মানুষরা। একই মাঠে এক পাশে চলছে মুসলমানদের নামাজ, অন্য পাশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা। দীর্ঘদিন ধরে এই বন্ধন অটুট রয়েছে।
একই মাঠে, মাত্র ৫০ গজ দূরত্বে এক পাশে ‘কাচারী মাঠ জামে মসজিদ’, অন্য পাশে ‘কাচারী মাঠ দুর্গাপূজা কেন্দ্রীয় মন্দির’। চলছে একসঙ্গে উলুধ্বনি, জিকির, আযান আর নামাজ। দুই ধর্মের উপাসনালয় হলেও বিরাজ করছে শান্তি ও সহাবস্থান।
স্থানীয়রা জানান, দেশ স্বাধীনের আগেই কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র ভপ বাহাদুর ফুলবাড়ীর চাকলায় দুর্গাপূজার জন্য একটি চালাঘর নির্মাণ করেন, যা এখন ‘কাচারী মাঠ’ নামে পরিচিত। এখানেই পরে গড়ে ওঠে উপজেলা ভূমি ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস। স্বাধীনতার পরপরই স্থানীয়দের উদ্যোগে একই মাঠে তৈরি হয় একটি ছোট টিনশেড নামাজঘর, যা সময়ের সঙ্গে বড় হয়ে এখন জামে মসজিদে পরিণত হয়েছে।
গত ৫০ বছর ধরে হিন্দু-মুসলিমরা পাশে থেকে নিজ নিজ ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন। কখনো কোনো অপ্রতিকর ঘটনা ঘটেনি, বরং একে অপরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে চলেছেন।
এবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে কাচারী মাঠে শারদীয় দুর্গাপূজা। আজ নবমীর দিন দেখা গেল হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রসাদ বিতরণ করছেন। দুপুরে জোহরের আজানের সময় বন্ধ থাকে ঢাক-ঢোলের বাজনা। নামাজ শেষে আবার শুরু হয় পূজা-অর্চনা, উলুধ্বনি ও ঢাকের তালে পূজার আয়োজন।
৭৮ বছর বয়সী স্থানীয় বাসিন্দা শুশীল চন্দ্র বর্ম্মন বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে এখানে পূজা হচ্ছে। পাশেই মসজিদ। আমরা কখনোই কোনো সমস্যা অনুভব করিনি। মুসলিম ভাইয়েরা আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেন।
মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার প্রভাষক আরাবুর রহমান বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই মসজিদ ও মন্দির পাশাপাশি দেখে আসছি। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা একে অন্যের ধর্মীয় উৎসবে সম্মান দেখাই।
মন্দির কমিটির সভাপতি বীরেন কুমার রায় বলেন, এটি বহু পুরনো মন্দির। মুসলিম ভাইয়েরা সবসময় সহযোগিতা করেন। কোনোদিন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, আমরা বিশ্বাস করি ভবিষ্যতেও ঘটবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেনুমা তারান্নম বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। ফুলবাড়ীতে হিন্দু-মুসলমান ধর্মপ্রাণ মানুষজন নিজ নিজ ধর্ম পালন করছেন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণভাবে। পূজা ও নামাজ দুটোই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে।