উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে ৪ অক্টোবর থেকে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন নদ-নদী, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমারে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পায়। ফলে কুড়িগ্রাম সদর, রাজিবপুর, রৌমারী, ফুলবাড়ী, উলিপুর, রাজারহাট, ভুরুঙ্গামারী ও চিলমারী উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বর্তমানে পানি নামতে শুরু করলেও স্পষ্ট হয়ে উঠছে ফসলের ক্ষতির চিত্র।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বন্যা ও হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে জেলায় প্রায় ১ হাজার ৭৮৭ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রোপা আমন ধান, মৌসুমি সবজি ও অন্যান্য ফসলের। অনেক ক্ষেত্রেই ধানগাছ পানিতে ডুবে পচে গেছে, আবার কোথাও জমে থাকা পলির স্তরে সবজিক্ষেত পানিতে ডুবে মরে গেছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামালগ্রাম, চর নুচনি, ফান্দেরচর, নতুন সুইচগেট, কমলারকুটি এবং বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সিটমালিয়ানি এলাকায় পানি নামলেও ফসলের উপর পুরু পলির আস্তরণ জমে রয়েছে। এতে ধানগাছ চাপা পড়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই গাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
স্থানীয় কৃষক জাহিদুল ইসলাম (৭০) বলেন, অসময়ে পানি আসায় আমার চার বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। গাছ পচে গেছে, এখন আর ধান হওয়ার কোনো আশা নেই।
ধাউরারকুটির আরেক কৃষক রজ্জাক আলী (৬০) বলেন, ভারতের দিক থেকে হঠাৎ করে পানি ছেড়ে দেওয়ায় পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। শুধু পানি নয়, কাঠের গুঁড়িও ভেসে এসে ধানের গাছ ভেঙে ফেলেছে। সব ফসল শেষ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (পিপি) কৃষিবিদ তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, প্রাথমিক হিসেবে আমরা দেখছি প্রায় ১ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমি পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। এখন পানি নেমে গেছে, মাঠ পর্যায়ে তদন্ত চলছে। চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ খুব শিগগিরই জানা যাবে।
তিনি আরও বলেন, পানি নেমে যাওয়ার পর অনেক জায়গায় পলির স্তরে ফসল ঢেকে গেছে। গাছের পচন রোধে আগে পরিষ্কার পানি দিয়ে পলি ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর সঠিকভাবে সার প্রয়োগ করলে কিছুটা ফলন উদ্ধার করা সম্ভব হতে পারে।