ঢাকা ১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগী বাড়ছে, চিকিৎসক সংকট নিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৬:৩৬:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ৪ বার দেখা হয়েছে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর উপকূলের গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । গলাচিপাসহ পাশ্ববর্তী দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীবাসি চিকিৎসা সেবা নিয়ে প্রথমেই ছুটে আসেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ৫০ শয্যায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রতিদিন গড়ে এক’শর মতো রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসক সংকট কাটেনি।

এদিকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেণক্সের একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা , ১১ জন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মোট ৩৮ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসকের ১০ টি পদই শূন্য। বর্তমানে কর্মরত আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা, একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং দুই আবাসিক মেডিকেল অফিসার। এই অবস্থায় পাশ্ববর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলা ও গলাচিপা উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রর নিয়োগকৃত ৩ জন চিকিৎসক এনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা চলছে। বর্তমানে মোট ৭ জন চিকিৎসক দিয়ে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা চলছে ।

গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্র সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালের ১ জুলাই গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। তখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যার ছিল। ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর এটাকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পুরোনো ভবনে লাগোয় আরেকটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে। এখানে নারী ও শিশু রোগী বেশি হওয়ায় ৩১ শয্যার পুরোনো ভবনে নারী ও শিশুদের ওয়ার্ড এবং নতুন ভবনে পুরুষদের ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

শনিবার সকালে সরেজমিন গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনে নারী ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে দায়িত্বরত টিকিৎসক , সেবিকারা শিশুর সেবা দিতে ব্যস্ত রয়েছেন। পাশ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গাবালীর চর মোন্তাজ থেকে এসে এই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০ দিন বয়সের নবজাতকসহ নিপা বেগম (১৯) নামে এক মা। গ্রামে স্বাভাবিক প্রসবে মা হয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রচুর রক্ষক্ষরণের কারণে সে অসুস্থ হয়ে এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক লোকমান পারভেজ বলেন, আসলে চরাঞ্চলে বেশির ভাগ মানুষই গ্রাম্য চিকিৎসকের উপর নির্ভরশীল। তাই সমস্য দেখা দিলে।ি এরা ছুটে আসেন এখানে। চিকিৎসক সংকট থাকলেও তারা তাদের সামর্থ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া সূর্য ভানু (৭০) নামে এক রোগীর শরীরে স্যালাইন চলছে। ওই মহিলার ছেলের বৌ খাদিজা বেগম শ্বাশুড়ির পাশে শয্যায় বসে রয়েছেন। তিনি জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় শুক্রবার তিনি তার স্ত্রীকে এখানে এনে ভর্তি করিয়েছে। হাসপাতাল থেকেই স্যালাইনসহ ওয়ুধ দেওয়া হচ্ছে। এখন অনেকটা সুস্থ তিনি।

এদিকে জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মোন্তাজ থেকে ৮ বছরের শিশু কন্যা আসমাকে নিয়ে ১৯অক্টোবর সকালে এই উপজেলা স্বাস্থকমপ্লেক্সে এসেছেন মা-বাবা আসমা বেগম ও রুবেল হাওলাদার । শিশুটির মা আসমা বেগম বলেন, ‘ জ্বর গা পুড়ে যাচ্ছিল। চর মোন্তজ বাজারে ডাক্তারের কথা মতো এই হাসপাতালে আইছি। ডাক্তার ভর্তি কইরা ওষুধ দিছে। এখন অনেকটা ভালো মনে হচ্ছে।


এদিকে পুরোনো ভবনের দ্বিতল তলা থেকে নতুন ভবনে যাওয়ার বারান্দায়ও নিচে বিছানা পেতে রোগী সেবা নিতে দেখা গেছে। হাসপাতালের সেবিকা অনামিকা হাওলাদার জানায়, পাশাপাশি দুই উপজেলার মানুষ সেবা নিয়ে প্রথমেই ছুটে আসেন এখানে। তারা এখানে রোগীদের সেবা দিতে হিমসিম থেকে হচ্ছে।

শনিবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে ১৪ জন ও বহিবিভাগে ৩৩৮ জনসেবা নিয়েছেন। আন্ত বিভাগে রোগী ভর্তি রয়েছে ১০২ জন। ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গড়ে ১০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের পরিসংখান বিভাগ জানায়, জানুয়ারি থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই ১০ মাসে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স্রের আন্ত বিভাগে ৯ হাজার ৪৭৩ জন , জরুরী বিভাগে ১১ হাজার ৬৬৩ জন এবং বহিবিভাগে ৬৯ হাজার ৭৮৬ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছে।

এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৮ জন। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১১ জন ( সার্জারি, মেডিসিন, গাইনী এন্ড অবসঃ, চক্ষু, ইএনটি, কার্ডিওলজি, অর্থোপেটিকস, শিশু, এ্যানেসথিযয়া, চর্মও যৌন)। এছাড়াও আবাসিক মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজিষ্ট, মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন(ইএমও) , এ্যানোসথেস্টিক, মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার /সহকারী সার্জন(আইএমও)সহ ১০ জন মেডিকেল অফিসার , একজন ডেন্টাল ও একজন আয়ুর্বেদী চিকিৎসকসহ মোট ২৭ টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এদের মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তিনি প্রশাসনিক কাজ ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। ১১ জন জুনিয়ন কনস্যালটেন্টের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন একজন। ১০ টি পদই শূন্য । অপর দুই আবাসিক মেডিকেল অফিসার সেবা দিচ্ছেন।
এদিকে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক রোগী সেবা নিতে আসায় এখানে রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন চিকিৎস এনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৭ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে এই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেটি।
এনিয়ে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্বিক অবস্থা জানতে চাইলে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, তিনি ২০২৩ সালের ৩ মে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করে দেখেছেন চিকিৎসক সংকট । এর আগে এক বছর আগ থেকেই এখানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের চিকিৎসক এনে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। চিকিৎসকসহ নানা সংকটের মধ্যেও আমরা যেটুকু জনবল আছে তা দিয়েই আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তিনি জানান, হাসপাতালের বহিবিভাগে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪৫০ জন রোগী সেবা গ্রহন করছেন। গাইনী ও এনেস্থেশিয়া কনসালটেন্ট পদায়িত হলে হাসপাতালে সিজারিয়ান সুবিধা চালু করা যাবে। হর্ভবতী মায়েদের সেবা সহজতর ও সাশ্রয়ী হবে। ৫০ শয্যা এই হাসপাতালে সব সময়ই ১০০ এর উপরে রোগী ভর্তি থাকে।
তিনি আবো জানান, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় মানুষের জন্য এই হাসপাতালটি দ্রুত ১০০ শয্যায় উন্নীত করাসহ নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, আসলে গলাচিপায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে নতুন ভবন নির্মাণ হবে। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি মন্ত্রনালয়ে অবহিত করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।

জনপ্রিয় সংবাদ

গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগী বাড়ছে, চিকিৎসক সংকট নিয়েই চলছে স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশিত : ০৬:৩৬:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

পটুয়াখালীর উপকূলের গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স । গলাচিপাসহ পাশ্ববর্তী দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীবাসি চিকিৎসা সেবা নিয়ে প্রথমেই ছুটে আসেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ৫০ শয্যায় এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে প্রতিদিন গড়ে এক’শর মতো রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও চিকিৎসক সংকট কাটেনি।

এদিকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেণক্সের একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা , ১১ জন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মোট ৩৮ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই জুনিয়র কনসালটেন্ট চিকিৎসকের ১০ টি পদই শূন্য। বর্তমানে কর্মরত আছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা, একজন জুনিয়র কনসালটেন্ট এবং দুই আবাসিক মেডিকেল অফিসার। এই অবস্থায় পাশ্ববর্তী রাঙ্গাবালী উপজেলা ও গলাচিপা উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রর নিয়োগকৃত ৩ জন চিকিৎসক এনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা চলছে। বর্তমানে মোট ৭ জন চিকিৎসক দিয়ে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা সেবা চলছে ।

গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্র সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালের ১ জুলাই গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। তখন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যার ছিল। ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর এটাকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পুরোনো ভবনে লাগোয় আরেকটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে। এখানে নারী ও শিশু রোগী বেশি হওয়ায় ৩১ শয্যার পুরোনো ভবনে নারী ও শিশুদের ওয়ার্ড এবং নতুন ভবনে পুরুষদের ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

শনিবার সকালে সরেজমিন গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের পুরোনো ভবনে নারী ও শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডে দায়িত্বরত টিকিৎসক , সেবিকারা শিশুর সেবা দিতে ব্যস্ত রয়েছেন। পাশ্ববর্তী উপজেলা রাঙ্গাবালীর চর মোন্তাজ থেকে এসে এই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০ দিন বয়সের নবজাতকসহ নিপা বেগম (১৯) নামে এক মা। গ্রামে স্বাভাবিক প্রসবে মা হয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রচুর রক্ষক্ষরণের কারণে সে অসুস্থ হয়ে এখানে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক লোকমান পারভেজ বলেন, আসলে চরাঞ্চলে বেশির ভাগ মানুষই গ্রাম্য চিকিৎসকের উপর নির্ভরশীল। তাই সমস্য দেখা দিলে।ি এরা ছুটে আসেন এখানে। চিকিৎসক সংকট থাকলেও তারা তাদের সামর্থ অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া সূর্য ভানু (৭০) নামে এক রোগীর শরীরে স্যালাইন চলছে। ওই মহিলার ছেলের বৌ খাদিজা বেগম শ্বাশুড়ির পাশে শয্যায় বসে রয়েছেন। তিনি জানান, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় শুক্রবার তিনি তার স্ত্রীকে এখানে এনে ভর্তি করিয়েছে। হাসপাতাল থেকেই স্যালাইনসহ ওয়ুধ দেওয়া হচ্ছে। এখন অনেকটা সুস্থ তিনি।

এদিকে জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চর মোন্তাজ থেকে ৮ বছরের শিশু কন্যা আসমাকে নিয়ে ১৯অক্টোবর সকালে এই উপজেলা স্বাস্থকমপ্লেক্সে এসেছেন মা-বাবা আসমা বেগম ও রুবেল হাওলাদার । শিশুটির মা আসমা বেগম বলেন, ‘ জ্বর গা পুড়ে যাচ্ছিল। চর মোন্তজ বাজারে ডাক্তারের কথা মতো এই হাসপাতালে আইছি। ডাক্তার ভর্তি কইরা ওষুধ দিছে। এখন অনেকটা ভালো মনে হচ্ছে।


এদিকে পুরোনো ভবনের দ্বিতল তলা থেকে নতুন ভবনে যাওয়ার বারান্দায়ও নিচে বিছানা পেতে রোগী সেবা নিতে দেখা গেছে। হাসপাতালের সেবিকা অনামিকা হাওলাদার জানায়, পাশাপাশি দুই উপজেলার মানুষ সেবা নিয়ে প্রথমেই ছুটে আসেন এখানে। তারা এখানে রোগীদের সেবা দিতে হিমসিম থেকে হচ্ছে।

শনিবার বেলা ১২ টা পর্যন্ত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জরুরী বিভাগে ১৪ জন ও বহিবিভাগে ৩৩৮ জনসেবা নিয়েছেন। আন্ত বিভাগে রোগী ভর্তি রয়েছে ১০২ জন। ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গড়ে ১০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের পরিসংখান বিভাগ জানায়, জানুয়ারি থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত এই ১০ মাসে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স্রের আন্ত বিভাগে ৯ হাজার ৪৭৩ জন , জরুরী বিভাগে ১১ হাজার ৬৬৩ জন এবং বহিবিভাগে ৬৯ হাজার ৭৮৬ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছে।

এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৮ জন। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১১ জন ( সার্জারি, মেডিসিন, গাইনী এন্ড অবসঃ, চক্ষু, ইএনটি, কার্ডিওলজি, অর্থোপেটিকস, শিশু, এ্যানেসথিযয়া, চর্মও যৌন)। এছাড়াও আবাসিক মেডিকেল অফিসার, প্যাথলজিষ্ট, মেডিকেল অফিসার/সহকারী সার্জন(ইএমও) , এ্যানোসথেস্টিক, মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার /সহকারী সার্জন(আইএমও)সহ ১০ জন মেডিকেল অফিসার , একজন ডেন্টাল ও একজন আয়ুর্বেদী চিকিৎসকসহ মোট ২৭ টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এদের মধ্যে একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। তিনি প্রশাসনিক কাজ ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। ১১ জন জুনিয়ন কনস্যালটেন্টের পদ থাকলেও কর্মরত আছেন একজন। ১০ টি পদই শূন্য । অপর দুই আবাসিক মেডিকেল অফিসার সেবা দিচ্ছেন।
এদিকে প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক রোগী সেবা নিতে আসায় এখানে রাঙ্গাবালী ও গলাচিপা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজন চিকিৎস এনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ৭ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে এই স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সেটি।
এনিয়ে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্বিক অবস্থা জানতে চাইলে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, তিনি ২০২৩ সালের ৩ মে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করে দেখেছেন চিকিৎসক সংকট । এর আগে এক বছর আগ থেকেই এখানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রের চিকিৎসক এনে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। চিকিৎসকসহ নানা সংকটের মধ্যেও আমরা যেটুকু জনবল আছে তা দিয়েই আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তিনি জানান, হাসপাতালের বহিবিভাগে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪৫০ জন রোগী সেবা গ্রহন করছেন। গাইনী ও এনেস্থেশিয়া কনসালটেন্ট পদায়িত হলে হাসপাতালে সিজারিয়ান সুবিধা চালু করা যাবে। হর্ভবতী মায়েদের সেবা সহজতর ও সাশ্রয়ী হবে। ৫০ শয্যা এই হাসপাতালে সব সময়ই ১০০ এর উপরে রোগী ভর্তি থাকে।
তিনি আবো জানান, চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উপকূলীয় মানুষের জন্য এই হাসপাতালটি দ্রুত ১০০ শয্যায় উন্নীত করাসহ নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন মোহাম্মদ খালেদুর রহমান মিয়া বলেন, আসলে গলাচিপায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যার হাসপাতাল করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে নতুন ভবন নির্মাণ হবে। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি মন্ত্রনালয়ে অবহিত করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান।