ঢাকা ০২:০০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫

পটুয়াখালীর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১৪ মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ, জনবল সংকটে ভোগান্তিতে প্রান্তিক মানুষ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৬:৪১:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫
  • ৬ বার দেখা হয়েছে

 পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র (এফডব্লিউসি) থাকার কথা। পটুয়াখালীর ৭৭ ইউনিয়নের মধ্যে ৫৪টিতে এমন কেন্দ্র থাকলেও সেসব প্রতিষ্ঠানে গত ১৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ওষুধ সরবরাহ। একই সঙ্গে রয়েছে তীব্র জনবল সংকট। ফলে বিপাকে পড়েছেন গর্ভবতী নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
বৃহস্পতিবার সকালে গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা প্রেসক্রিপশন হাতে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে সেবা না পাওয়ায় হতাশ স্থানীয় মানুষ। জেলার অন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর চিত্রও এক।
বকুলবাড়িয়া গ্রামের লামিয়া বেগম (২৩) জানান, ‘আমার দেড় বছরের ছেলের জ্বর-সর্দি-কাশি। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়েছে, কিন্তু দেয়নি। বলেছে এখানে কোনো ওষুধ নেই। মাস দুই আগেও এসেছিলাম, তখনও পাইনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। বিনা খরচে চিকিৎসা আর ওষুধের আশায় এখানে আসি। কিন্তু এখন ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।’


একই গ্রামের গৃহবধূ সুমি আক্তার (২১) বলেন, ‘তিন মাস আগে এসেছিলাম, তখনও ওষুধ পাইনি। এবার ছেলেকে নিয়ে আসলাম, এবারও শুধু প্রেসক্রিপশন দিয়েছে। আমার স্বামী দিনমজুর। শহরে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া কষ্টকর আর ব্যয়বহুল।’
এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছয়টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও একজন এমএলএসএস। দুই বছর আগে বদলি হয়ে যাওয়া উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদটি তখন থেকে শূন্য। বর্তমানে পরিবার কল্যাণ সহকারী রঞ্জিতা একাই সব দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি আবার পাশের খারিজ্জমা ইউনিয়নেরও দায়িত্বে রয়েছেন।
রঞ্জিতা বলেন, ‘ওষুধ না থাকায় রোগীদের চাপ অনেক কমে গেছে। তবে গত এক মাসে ৩০টি স্বাভাবিক প্রসব করানো হয়েছে।’
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিত্র একই। সাতটি পদের মধ্যে পাঁচটি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। এখানকার নাসিমা বেগম বলেন, ‘আগে আমরা ২৩ রকম ওষুধ পেতাম। এখন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কিছুই আসছে না। ফলে রোগীদের শুধু পরামর্শ দিয়ে ফিরিয়ে দিতে হয়।’


পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সমান সংখ্যক স্যাকমো পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৩৩ জন। ২১টি ফার্মাসিস্ট পদের মধ্যে ১১টি খালি। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার ৭৮টি পদের ২৪টি এবং সহকারির ৩১৭টি পদের ৮৮টি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
পটুয়াখালী পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. মো. সামসুজ্জামান বলেন, ‘জনবল ও ওষুধ সংকটে সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে আশা করছি আগামী সপ্তাহে সব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহ করা যাবে।’

পটুয়াখালীর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১৪ মাস ধরে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ, জনবল সংকটে ভোগান্তিতে প্রান্তিক মানুষ

প্রকাশিত : ০৬:৪১:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

 পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র (এফডব্লিউসি) থাকার কথা। পটুয়াখালীর ৭৭ ইউনিয়নের মধ্যে ৫৪টিতে এমন কেন্দ্র থাকলেও সেসব প্রতিষ্ঠানে গত ১৪ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ওষুধ সরবরাহ। একই সঙ্গে রয়েছে তীব্র জনবল সংকট। ফলে বিপাকে পড়েছেন গর্ভবতী নারী, শিশু ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
বৃহস্পতিবার সকালে গলাচিপা উপজেলার বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা প্রেসক্রিপশন হাতে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে সেবা না পাওয়ায় হতাশ স্থানীয় মানুষ। জেলার অন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর চিত্রও এক।
বকুলবাড়িয়া গ্রামের লামিয়া বেগম (২৩) জানান, ‘আমার দেড় বছরের ছেলের জ্বর-সর্দি-কাশি। ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়েছে, কিন্তু দেয়নি। বলেছে এখানে কোনো ওষুধ নেই। মাস দুই আগেও এসেছিলাম, তখনও পাইনি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। বিনা খরচে চিকিৎসা আর ওষুধের আশায় এখানে আসি। কিন্তু এখন ওষুধ কিনতে হচ্ছে বাইরে থেকে।’


একই গ্রামের গৃহবধূ সুমি আক্তার (২১) বলেন, ‘তিন মাস আগে এসেছিলাম, তখনও ওষুধ পাইনি। এবার ছেলেকে নিয়ে আসলাম, এবারও শুধু প্রেসক্রিপশন দিয়েছে। আমার স্বামী দিনমজুর। শহরে গিয়ে চিকিৎসা নেয়া কষ্টকর আর ব্যয়বহুল।’
এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ছয়টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও একজন এমএলএসএস। দুই বছর আগে বদলি হয়ে যাওয়া উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদটি তখন থেকে শূন্য। বর্তমানে পরিবার কল্যাণ সহকারী রঞ্জিতা একাই সব দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। তিনি আবার পাশের খারিজ্জমা ইউনিয়নেরও দায়িত্বে রয়েছেন।
রঞ্জিতা বলেন, ‘ওষুধ না থাকায় রোগীদের চাপ অনেক কমে গেছে। তবে গত এক মাসে ৩০টি স্বাভাবিক প্রসব করানো হয়েছে।’
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিত্র একই। সাতটি পদের মধ্যে পাঁচটি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত। এখানকার নাসিমা বেগম বলেন, ‘আগে আমরা ২৩ রকম ওষুধ পেতাম। এখন এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কিছুই আসছে না। ফলে রোগীদের শুধু পরামর্শ দিয়ে ফিরিয়ে দিতে হয়।’


পরিবার পরিকল্পনা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সমান সংখ্যক স্যাকমো পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৩৩ জন। ২১টি ফার্মাসিস্ট পদের মধ্যে ১১টি খালি। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার ৭৮টি পদের ২৪টি এবং সহকারির ৩১৭টি পদের ৮৮টি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।
পটুয়াখালী পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. মো. সামসুজ্জামান বলেন, ‘জনবল ও ওষুধ সংকটে সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে আশা করছি আগামী সপ্তাহে সব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহ করা যাবে।’