ঢাকা ০১:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৬

শেরপুরে হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত : দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ১১:০৪:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ২ বার দেখা হয়েছে

শেরপুর প্রতিনিধি: ঘন কুয়াশা আর হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের জনজীবন। সেইসাথে ক্রমেই দুর্ভোগ বাড়ছে ছিন্নমূল মানুষের। পৌষের এমন শীতের প্রভাব সীমান্তবর্তী উপজেলা নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর গারো পাহাড়ি অঞ্চলসহ জেলাজুড়েই পড়েছে। বিশেষ করে তীব্র শীতের মাঝে হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলছে। অন্যদিকে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র প্রয়োজন হলেও সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সে অনুপাতে এখনও সহায়তা পাচ্ছেন না তারা।
জানা যায়, পৌষের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু হয় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা জেলা শেরপুরে শীতের তীব্রতা। বিশেষ করে গারো পাহাড়বেষ্টিত উপজেলাগুলো নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীতে শীতের প্রকোপ বেশি লক্ষ্য করা যায়। ফলে গারো পাহাড় এলাকার কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এর মধ্যে হিমেল বাতাস আর কনকনে ঠান্ডায় পাহাড়ি অঞ্চলের অনেক হতদরিদ্র মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বয়স্ক মানুষেরা। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাজকর্মও অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। এতেও দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে। মধ্য পৌষের শীতের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে দিনমজুর শ্রেণির মানুষের জীবনে। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলায় প্রতি বছরই শৈত্যপ্রবাহে হতদরিদ্র মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। এবারও তাদের মাঝে একই অবস্থা দেখা দিয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো শীতের দুর্ভোগ লাঘবে গরম কাপড় কিনতে পারলেও দরিদ্র পরিবারগুলো স্বল্প মূল্যের পুরাতন গরম কাপড়ও সংগ্রহ করতে পারছেন না। এজন্য তারা পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য দাবি তুলেছেন।


এদিকে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে ক্রমাগতভাবে। জেলা সদর হাসপাতালসহ ৫ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই বাড়ছে সর্দি, কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসকদের মতে, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। অপরদিকে প্রচন্ড শীতে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা।
সরেজমিনে ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি এলাকা ঘুরে ছিন্নমূল মানুষসহ স্থানীয়দের স্থবির জীবনের চিত্রই পাওয়া যায়। ওইসময় কাংশা ইউনিয়নের নাকশী এলাকার ব্যবসায়ী মো. খোরশেদ আলম জানান, গারো পাহাড়ি সীমান্তে শীতের তীব্রতা জনজীবনকে কার্যত অচল করে তুলেছে। পার্শ্ববর্তী বাকাকুড়া এলাকার মাইনু মিয়া ও হাবিল উদ্দিন জানান, শীতের তীব্রতার কারণে খেটে খাওয়া দরিদ্র লোকজন বেকার হয়ে ঘরে বসে পড়েছে। একদিকে ঘরে তাদের খাদ্যাভাব, অন্যদিকে শীতবস্ত্রের অভাবে তারা একেবারেই কাহিল হয়ে পড়ছেন। অথচ অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্রের কোন সহায়তাই মিলছে না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান জানান, তীব্র শীতের মাঝেও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য প্রয়োজন মোতাবেক শীতবস্ত্র বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তার মতে, একই চিত্র সীমান্তের অন্যান্য এলাকারও।
এদিকে শীতার্তদের মাঝে সরকারি সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন শেরপুর-৩ (ঝিনাইগাতী-শ্রীবরদী) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল। একই কথা জানিয়েছেন ওই আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা নুরুজ্জামান বাদল।
সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় শীতের তীব্রতার বিষয়টি নিশ্চিত করে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। তবে আরও পর্যাপ্ত কম্বলসহ শীতবস্ত্রের বরাদ্দ প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রুকনুজ্জামান বলেন, চলতি শীত মৌসুমে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হতে প্রথম পর্যায়ে ৫ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ পাওয়া যায়, যা ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে উপবরাদ্দমূলে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৩ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেলেও সেগুলো এখনও এসে পৌঁছেনি। পৌঁছলে দ্রুতই সেগুলো বিতরণ করা হবে।

জনপ্রিয় সংবাদ

শেরপুরে হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত : দুর্ভোগে খেটে খাওয়া মানুষ

প্রকাশিত : ১১:০৪:১৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

শেরপুর প্রতিনিধি: ঘন কুয়াশা আর হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের জনজীবন। সেইসাথে ক্রমেই দুর্ভোগ বাড়ছে ছিন্নমূল মানুষের। পৌষের এমন শীতের প্রভাব সীমান্তবর্তী উপজেলা নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর গারো পাহাড়ি অঞ্চলসহ জেলাজুড়েই পড়েছে। বিশেষ করে তীব্র শীতের মাঝে হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে তুলছে। অন্যদিকে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া ছিন্নমূল মানুষের পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র প্রয়োজন হলেও সরকারি, বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে সে অনুপাতে এখনও সহায়তা পাচ্ছেন না তারা।
জানা যায়, পৌষের প্রথম সপ্তাহ থেকেই শুরু হয় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা জেলা শেরপুরে শীতের তীব্রতা। বিশেষ করে গারো পাহাড়বেষ্টিত উপজেলাগুলো নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীতে শীতের প্রকোপ বেশি লক্ষ্য করা যায়। ফলে গারো পাহাড় এলাকার কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এর মধ্যে হিমেল বাতাস আর কনকনে ঠান্ডায় পাহাড়ি অঞ্চলের অনেক হতদরিদ্র মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে ছিন্নমূল মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বয়স্ক মানুষেরা। খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাজকর্মও অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। এতেও দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে। মধ্য পৌষের শীতের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে দিনমজুর শ্রেণির মানুষের জীবনে। প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে অনেকেই কাজে যেতে পারছেন না। সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলায় প্রতি বছরই শৈত্যপ্রবাহে হতদরিদ্র মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। এবারও তাদের মাঝে একই অবস্থা দেখা দিয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো শীতের দুর্ভোগ লাঘবে গরম কাপড় কিনতে পারলেও দরিদ্র পরিবারগুলো স্বল্প মূল্যের পুরাতন গরম কাপড়ও সংগ্রহ করতে পারছেন না। এজন্য তারা পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য দাবি তুলেছেন।


এদিকে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে ক্রমাগতভাবে। জেলা সদর হাসপাতালসহ ৫ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিনই বাড়ছে সর্দি, কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চিকিৎসকদের মতে, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। অপরদিকে প্রচন্ড শীতে বোরো ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা।
সরেজমিনে ঝিনাইগাতীর পাহাড়ি এলাকা ঘুরে ছিন্নমূল মানুষসহ স্থানীয়দের স্থবির জীবনের চিত্রই পাওয়া যায়। ওইসময় কাংশা ইউনিয়নের নাকশী এলাকার ব্যবসায়ী মো. খোরশেদ আলম জানান, গারো পাহাড়ি সীমান্তে শীতের তীব্রতা জনজীবনকে কার্যত অচল করে তুলেছে। পার্শ্ববর্তী বাকাকুড়া এলাকার মাইনু মিয়া ও হাবিল উদ্দিন জানান, শীতের তীব্রতার কারণে খেটে খাওয়া দরিদ্র লোকজন বেকার হয়ে ঘরে বসে পড়েছে। একদিকে ঘরে তাদের খাদ্যাভাব, অন্যদিকে শীতবস্ত্রের অভাবে তারা একেবারেই কাহিল হয়ে পড়ছেন। অথচ অসহায় মানুষের মাঝে শীতবস্ত্রের কোন সহায়তাই মিলছে না।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমান জানান, তীব্র শীতের মাঝেও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য প্রয়োজন মোতাবেক শীতবস্ত্র বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তার মতে, একই চিত্র সীমান্তের অন্যান্য এলাকারও।
এদিকে শীতার্তদের মাঝে সরকারি সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন শেরপুর-৩ (ঝিনাইগাতী-শ্রীবরদী) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, সাবেক সংসদ সদস্য মো. মাহমুদুল হক রুবেল। একই কথা জানিয়েছেন ওই আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাওলানা নুরুজ্জামান বাদল।
সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় শীতের তীব্রতার বিষয়টি নিশ্চিত করে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। তবে আরও পর্যাপ্ত কম্বলসহ শীতবস্ত্রের বরাদ্দ প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রুকনুজ্জামান বলেন, চলতি শীত মৌসুমে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় হতে প্রথম পর্যায়ে ৫ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ পাওয়া যায়, যা ইতোমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে উপবরাদ্দমূলে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ৩ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেলেও সেগুলো এখনও এসে পৌঁছেনি। পৌঁছলে দ্রুতই সেগুলো বিতরণ করা হবে।