টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ২৮২ রানের লক্ষ্যটা বড় স্কোরই বটে, আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল হিসেবে সেটির মাহাত্ম্য আরও বেশি। তবে একেবারেই যে অসম্ভব নয় সেটাই যেন প্রমাণে মরিয়া ১৯৯৮ সালের পর কোনো আইসিসি টুর্নামেন্ট না জেতা দক্ষিণ আফ্রিকা। এমনকি যেকোনো ফরম্যাটের বিশ্বকাপেই শীর্ষ চারের লড়াইয়ে হেরে নামের পাশে তারা ‘চোকার্স’ তকমাও জুটিয়েছিল। সেটি এবার ঝেড়ে ফেলে ইতিহাস গড়ার সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে!
ইংল্যান্ডের লর্ডসে চলমান বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২ উইকেটে ২১৩ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছে প্রোটিয়ারা। জয়ের জন্য তাদের আর দরকার ৬৯। দলটা দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই হয়তো এখনও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। বড় ম্যাচে চাপ সামলাতে না পারার নজির আছে তাদের। তবে এইডেন মার্করাম ও টেম্বা বাভুমার ব্যাটে প্রোটিয়ারা স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে। অষ্টম সেঞ্চুরি পূর্ণ করে অপরাজিত মার্করাম সম্ভবত এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস খেলছেন।
টেস্ট ক্রিকেটে যে পাঁচবার ২৫০ রানের বেশি তাড়া করে জেতার কীর্তি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার, এর তিনবারই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। এর মধ্যে ২০০৮ সালে পার্থে সর্বশেষটি জিতেছিল তারা ৪১৪ রান তাড়া করে। সেটাই হয়তো বাভুমার দল পুঁজি করে মাঠে নেমেছিল। যদিও তাদের তৃতীয় দিনটা ছিল বেশ চাপের। আগেরদিন ৮ উইকেটে ১৪৪ রান করা অস্ট্রেলিয়া গতকাল তৃতীয় দিনে নেমে আরও ৬৩ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে। একাধিক বিশ্বরেকর্ড গড়া মিচেল স্টার্ক খেললেন ৫৮ রানের ইনিংস। যা দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার পুঁজি নিয়ে যায় ২০৭–এ।
ব্যাটিংয়ে নামার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা জেনে গিয়েছিল তাদের লর্ডসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লক্ষ্য তাড়া করতে হবে। অথচ ওপেনিংয়ে এলেন আগের ইনিংসে ডাক নিয়ে আউট হওয়া মার্করাম। তবে এবার আর তিনি গড়বড় করেননি। সতীর্থ ওপেনার রায়ান রিকেলটন ফিরলেন তৃতীয় ওভারেই, দলীয় রান তখন মাত্র ৯। যা প্রথম ইনিংসে ১৩৮ রানেই গুটিয়ে যাওয়া প্রোটিয়াদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিল। ৬১ রানের জুটিতে সেই শঙ্কা কিছুটা কাটিয়েছেন মার্করাম ও উইয়ান মুল্ডারের জুটি।
মুল্ডার ক্রিজে থিতু হলেও একটা ভুলেই উইকেট হারিয়েছেন। স্টার্কের বলে মনোযোগ হারিয়ে শর্ট কভারে ক্যাচ দেন মার্নাস লাবুশেনের হাতে। এর আগে ৫০ বলে করেন ২৭ রান। এমতাবস্থায় বড় জুটিই প্রয়োজন ছিল প্রোটিয়াদের। তবে ক্রিজে এসেই ব্যক্তিগত ২ রানে অধিনায়ক বাভুমা ক্যাচ দেন স্লিপে। সেটি ধরতে গিয়ে চোটে পড়েছেন স্টিভ স্মিথ, হাত ফসকে গেছে ক্যাচও। নতুন জীবন পেয়ে মার্করামের সঙ্গে ১৪৩ রানের কার্যকরী জুটি গড়েন বাভুমা। ব্যাট করেছেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে। দিন শেষে বাভুমা ৬৫ এবং মার্করাম ১০২ রানে অপরাজিত আছেন।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে এই ইনিংসে দুটি উইকেটই নিয়েছেন স্টার্ক। বাকি বোলারদের দেখেশুনে সামলেছেন প্রোটিয়া ব্যাটাররা। এই মুহূর্তে জয়ের পাল্লাটা নিশ্চিতভাবেই ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন অজিদের বিপক্ষে। বড় কিছু না ঘটলে পুরো মোমেন্টাম নিজেদের পক্ষে আনা কঠিনই বটে! আজ চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই নিশ্চিত হতে পারে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের শিরোপা।