ঢাকা ১২:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৭:৩৩:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫
  • ১০ বার দেখা হয়েছে

পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর মেরে হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টা ৩০ মিনিটে কলেজের হলপাড়া থেকে মিছিলটি শুরু হয়। সায়েন্সল্যাব ঘুরে নীলক্ষেত মোড় হয়ে এটি কলেজের মূল ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং রাজনীতিতে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি ও ‘নব্য ফ্যাসিবাদ’।

এসময় তাদের ‘দশ মাসে দেড়শ খুন, বিএনপির অনেক গুণ’, ‘আমার ভাই খুন কেন, তারেক রহমান জবাব দে’, ‘খুনিদের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, খুনিদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়ে বলেন, রাজনীতির নামে খুন ও চাঁদাবাজি চালিয়ে কোনো স্বৈরাচার দেশের ক্ষমতা দখল করতে চাইলে তা রুখে দিতে আমরা রাজপথে নামব। স্বাধীন বাংলাদেশে মধ্যযুগীয় বর্বরতা চলতে পারে না। এবারের জুলাই হবে প্রতিরোধের জুলাই।

জিহাদ হোসাইন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড বাংলার বুকে আবার ফিরে আসবে, সেটা আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। বাংলার জমিন থেকে জুলুম উচ্ছেদের জন্যই জুলাইয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল। চাঁদাবাজি, হত্যা, ধর্ষণ—এসব শেখ হাসিনার সময়েও দেখেছি। আবার কেউ যদি নব্য হাসিনা হয়ে ওঠে, তাহলে ছাত্রজনতা রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি আল নাহিয়ান রেহমান রাহাত বলেন, চাঁদার দাবিতে পাথর নিক্ষেপে মানুষ হত্যা করে জুলাই রক্তাক্ত করা হয়েছে। যদি এ অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে ছাত্রসমাজ ‘আবারও জুলাই’ যুদ্ধ শুরু করবে। বিগত কয়েক মাস ধরে দেশে চাঁদাবাজি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী। প্রশাসন নির্বিকার। এই বিচারহীনতা নব্য স্বৈরাচারকে উসকে দিচ্ছে। এই সুযোগ নিয়ে যদি আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার কৌশল নেওয়া হয়, ছাত্রসমাজ তা মেনে নেবে না।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা কলেজ শাখার আহ্বায়ক আফজাল হোসেন রাকিব বলেন, আজকের এই ঘটনা জাহিলী যুগকেও হার মানিয়েছে। যদি নতুন করে স্বৈরাচার কায়েম হয়, ছাত্রজনতা রাজপথে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। লন্ডনে বসে কেউ যদি আবারও দেশকে ফ্যাসিবাদের দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে ছাত্রসমাজ তা প্রতিহত করবে।

এমন ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে উল্লেখ কনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য গাজী হোসাইন মাহমুদ বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় একজন সাধারণ ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে হত্যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে ছাত্রদল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সন্ত্রাস শুরু করেছে। তারা শিক্ষার্থীদের জন্য অশনিসংকেত। এই নব্য ফ্যাসিবাদ যদি গড়ে ওঠে, তাহলে আবারও ‘জুলাই আন্দোলন’ সংঘটিত হবে

প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি রাজনৈতিক সংগঠনের স্থানীয় কর্মীরা চাঁদা না পাওয়ায় এই হামলা চালায়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একদল যুবক ব্যবসায়ীর মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে এবং তাকে মারধর করছে। পরে স্থানীয়রা দ্রুত সোহাগকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টির ভিডিও আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রকাশিত : ০৭:৩৩:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে পাথর মেরে হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত সাড়ে ৯টা ৩০ মিনিটে কলেজের হলপাড়া থেকে মিছিলটি শুরু হয়। সায়েন্সল্যাব ঘুরে নীলক্ষেত মোড় হয়ে এটি কলেজের মূল ফটকের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং রাজনীতিতে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি ও ‘নব্য ফ্যাসিবাদ’।

এসময় তাদের ‘দশ মাসে দেড়শ খুন, বিএনপির অনেক গুণ’, ‘আমার ভাই খুন কেন, তারেক রহমান জবাব দে’, ‘খুনিদের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘আমার সোনার বাংলায়, খুনিদের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়ে বলেন, রাজনীতির নামে খুন ও চাঁদাবাজি চালিয়ে কোনো স্বৈরাচার দেশের ক্ষমতা দখল করতে চাইলে তা রুখে দিতে আমরা রাজপথে নামব। স্বাধীন বাংলাদেশে মধ্যযুগীয় বর্বরতা চলতে পারে না। এবারের জুলাই হবে প্রতিরোধের জুলাই।

জিহাদ হোসাইন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড বাংলার বুকে আবার ফিরে আসবে, সেটা আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। বাংলার জমিন থেকে জুলুম উচ্ছেদের জন্যই জুলাইয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল। চাঁদাবাজি, হত্যা, ধর্ষণ—এসব শেখ হাসিনার সময়েও দেখেছি। আবার কেউ যদি নব্য হাসিনা হয়ে ওঠে, তাহলে ছাত্রজনতা রাজপথে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা কলেজ শাখার সভাপতি আল নাহিয়ান রেহমান রাহাত বলেন, চাঁদার দাবিতে পাথর নিক্ষেপে মানুষ হত্যা করে জুলাই রক্তাক্ত করা হয়েছে। যদি এ অবস্থা চলতে থাকে, তাহলে ছাত্রসমাজ ‘আবারও জুলাই’ যুদ্ধ শুরু করবে। বিগত কয়েক মাস ধরে দেশে চাঁদাবাজি, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী। প্রশাসন নির্বিকার। এই বিচারহীনতা নব্য স্বৈরাচারকে উসকে দিচ্ছে। এই সুযোগ নিয়ে যদি আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার কৌশল নেওয়া হয়, ছাত্রসমাজ তা মেনে নেবে না।

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ঢাকা কলেজ শাখার আহ্বায়ক আফজাল হোসেন রাকিব বলেন, আজকের এই ঘটনা জাহিলী যুগকেও হার মানিয়েছে। যদি নতুন করে স্বৈরাচার কায়েম হয়, ছাত্রজনতা রাজপথে নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। লন্ডনে বসে কেউ যদি আবারও দেশকে ফ্যাসিবাদের দিকে ঠেলে দেয়, তাহলে ছাত্রসমাজ তা প্রতিহত করবে।

এমন ঘটনা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে উল্লেখ কনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য গাজী হোসাইন মাহমুদ বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় একজন সাধারণ ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে হত্যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে ছাত্রদল বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সন্ত্রাস শুরু করেছে। তারা শিক্ষার্থীদের জন্য অশনিসংকেত। এই নব্য ফ্যাসিবাদ যদি গড়ে ওঠে, তাহলে আবারও ‘জুলাই আন্দোলন’ সংঘটিত হবে

প্রসঙ্গত, গত ৯ জুলাই পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হয় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি রাজনৈতিক সংগঠনের স্থানীয় কর্মীরা চাঁদা না পাওয়ায় এই হামলা চালায়। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একদল যুবক ব্যবসায়ীর মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে এবং তাকে মারধর করছে। পরে স্থানীয়রা দ্রুত সোহাগকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টির ভিডিও আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।