ঢাকা ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫

মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্ত্রী-তিন সন্তানের পর অবশেষে চলে গেলেন নিজেও, শোকে পাথর বৃদ্ধা মা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৮:২৯:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
  • ৪২ বার দেখা হয়েছে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

জীবিকার খোঁজে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর যুগিরহাওলা গ্রামের রিপন প্যাদা (৪০)। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো থাকাটাই ছিল তার চোখে বড় স্বপ্ন । বছরতিনেক আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন তিনি। ভ্যান চালিয়ে করছিলেন জীবিকা নির্বাহ। তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন ছোট্ট এক সুখের সংসার। কিন্তু এক ভয়াবহ আগুন সেই সুখের সংসারকে ছাই করে দিয়েছে। এক সপ্তাহে একে একে নিঃশেষ হয়ে গেছে স্ত্রী-তিন সন্তানসহ পুরো পরিবার।
রিপনের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের যুগিরহাওলা গ্রামে। জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় আসা-যাওয়া করে অনিয়মিতভাবে শ্রমজীবি হিসেবে কাজ করতো রিপন। ৭ বছর আগে জীবিকার তাগিদে স্থায়ীভাবে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। ভ্যান চালিয়ে শুরু করেন আয়-রোজগার। তিন বছর আগে স্ত্রী চাঁদনী বেগম (৩৫) এবং দুই ছেলে তামিম (১৫) ও রোকন (১৩)-কে ঢাকায় নিয়ে যান। দেড় বছর আগে তাদের সংসারে আসে ফুটফুটে কন্যা সন্তান আয়েশা।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ঢাকার সূত্রাপুরের কাগজি টোলায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন এই পরিবারটি। গত ১১ জুলাই রাত আনুমানিক ১টার দিকে সেই বাসায় ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাÐ। তখন সবাই ছিলেন গভীর ঘুমে। দগ্ধ হন পরিবারের সবাই-রিপন , স্ত্রী চাঁদনী (৩০), দুই ছেলে তামিম ও রোকন এবং দেড় বছরের কন্যা সন্তান আয়েশাও। দগ্ধ অবস্থায় সবাইকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসারত অবস্থায় একে একে মৃত্যু হয় পরিবারের পাঁচ সদস্যের।

রিপন-চাঁদনী দম্পতির স্বজনেরা জানায়, গত ১৪ জুলাই প্রথম মারা যায় দেড় বছরের আয়েশা। জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। দুইদিন পর ১৬ জুলাই মারা যায় দুই ছেলে তামিম ও রোকন। ছেলেদের মরদেহ নিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান মা চাঁদনী বেগম। ওইদিন দুপুরে তামিম ও রোকনকে বাবার বাড়ি জুগির হাওলা গ্রামে, আর চাঁদনীকে তার বাবার বাড়ি উপজেলার সামুদাবাদ গ্রামে দাফন করা হয়। একইদিন রাতেই খবর আসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পরিবারের শেষ সদস্য রিপন প্যাদা। শুক্রবার বিকেল তিনটায় জানাজা শেষে তাকে তার দুই ছেলের পাশেই দাফন করা হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, রিপন খুব পরিশ্রমী ছেলে ছিল। সংসার আর সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ঢাকায় গিয়েছিল। কিন্তু তার স্বপ্নটা পুড়ে ছাই হয়ে গেল আগুনে। নিহত রিপনের ফুফাতো ভাই সিরাজ হোসেন বলেন, ‘সূত্রাপুরের কাগজি টোলায় পাঁচতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন তারা। রাতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় অগ্নিকান্ড তারা দগ্ধ হন। পরে একে একে সবাই মারা যান।’ আত্মীয়-স্বজনরা বলছেন, কিভাবে অগ্নিকান্ড ঘটনাটি ঘটেছেতা এখনও কেউ জানতে পারেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘হৃদয়বিদারক একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এখন অসহায় রিপনের মায়ের পাশে যেন সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়-এই প্রত্যাশা করছি।’

রিপনের বৃদ্ধা মা জরিনা বেগম থাকেন গ্রামের বাড়িতে। একমাত্র ছেলে রিপনের পাঠানো টাকা দিয়েই চলতো সংসার। শুক্রবার রিপনের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুতে গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকে পাথর হয়ে গেছেন রিপনের মা। চার সন্তানের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, একমাত্র রিপনই ছিলেন তার শেষ আশ্রয়। এখন সেই ছেলেও নেই। শোকে পাথর এই মায়ের আর কথা বলার শক্তিও নেই। চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও, বুকের হাহাকার থেমে নেই। বিলাপ করে তিনি বলছিলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আমার আর কেউ নাই।’

মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় স্ত্রী-তিন সন্তানের পর অবশেষে চলে গেলেন নিজেও, শোকে পাথর বৃদ্ধা মা

প্রকাশিত : ০৮:২৯:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

জীবিকার খোঁজে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর যুগিরহাওলা গ্রামের রিপন প্যাদা (৪০)। পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো থাকাটাই ছিল তার চোখে বড় স্বপ্ন । বছরতিনেক আগে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন তিনি। ভ্যান চালিয়ে করছিলেন জীবিকা নির্বাহ। তিল তিল করে গড়ে তুলেছিলেন ছোট্ট এক সুখের সংসার। কিন্তু এক ভয়াবহ আগুন সেই সুখের সংসারকে ছাই করে দিয়েছে। এক সপ্তাহে একে একে নিঃশেষ হয়ে গেছে স্ত্রী-তিন সন্তানসহ পুরো পরিবার।
রিপনের বাড়ি পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার সদর ইউনিয়নের যুগিরহাওলা গ্রামে। জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই ঢাকায় আসা-যাওয়া করে অনিয়মিতভাবে শ্রমজীবি হিসেবে কাজ করতো রিপন। ৭ বছর আগে জীবিকার তাগিদে স্থায়ীভাবে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। ভ্যান চালিয়ে শুরু করেন আয়-রোজগার। তিন বছর আগে স্ত্রী চাঁদনী বেগম (৩৫) এবং দুই ছেলে তামিম (১৫) ও রোকন (১৩)-কে ঢাকায় নিয়ে যান। দেড় বছর আগে তাদের সংসারে আসে ফুটফুটে কন্যা সন্তান আয়েশা।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ঢাকার সূত্রাপুরের কাগজি টোলায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন এই পরিবারটি। গত ১১ জুলাই রাত আনুমানিক ১টার দিকে সেই বাসায় ঘটে ভয়াবহ অগ্নিকাÐ। তখন সবাই ছিলেন গভীর ঘুমে। দগ্ধ হন পরিবারের সবাই-রিপন , স্ত্রী চাঁদনী (৩০), দুই ছেলে তামিম ও রোকন এবং দেড় বছরের কন্যা সন্তান আয়েশাও। দগ্ধ অবস্থায় সবাইকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসারত অবস্থায় একে একে মৃত্যু হয় পরিবারের পাঁচ সদস্যের।

রিপন-চাঁদনী দম্পতির স্বজনেরা জানায়, গত ১৪ জুলাই প্রথম মারা যায় দেড় বছরের আয়েশা। জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয় তাকে। দুইদিন পর ১৬ জুলাই মারা যায় দুই ছেলে তামিম ও রোকন। ছেলেদের মরদেহ নিয়ে বৃহস্পতিবার বাড়ি ফেরার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান মা চাঁদনী বেগম। ওইদিন দুপুরে তামিম ও রোকনকে বাবার বাড়ি জুগির হাওলা গ্রামে, আর চাঁদনীকে তার বাবার বাড়ি উপজেলার সামুদাবাদ গ্রামে দাফন করা হয়। একইদিন রাতেই খবর আসে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পরিবারের শেষ সদস্য রিপন প্যাদা। শুক্রবার বিকেল তিনটায় জানাজা শেষে তাকে তার দুই ছেলের পাশেই দাফন করা হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, রিপন খুব পরিশ্রমী ছেলে ছিল। সংসার আর সন্তানদের মুখে হাসি ফোটাতে ঢাকায় গিয়েছিল। কিন্তু তার স্বপ্নটা পুড়ে ছাই হয়ে গেল আগুনে। নিহত রিপনের ফুফাতো ভাই সিরাজ হোসেন বলেন, ‘সূত্রাপুরের কাগজি টোলায় পাঁচতলা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে ভাড়া থাকতেন তারা। রাতে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় অগ্নিকান্ড তারা দগ্ধ হন। পরে একে একে সবাই মারা যান।’ আত্মীয়-স্বজনরা বলছেন, কিভাবে অগ্নিকান্ড ঘটনাটি ঘটেছেতা এখনও কেউ জানতে পারেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘হৃদয়বিদারক একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এখন অসহায় রিপনের মায়ের পাশে যেন সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়-এই প্রত্যাশা করছি।’

রিপনের বৃদ্ধা মা জরিনা বেগম থাকেন গ্রামের বাড়িতে। একমাত্র ছেলে রিপনের পাঠানো টাকা দিয়েই চলতো সংসার। শুক্রবার রিপনের গ্রামের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, এক পরিবারের পাঁচ সদস্যের মৃত্যুতে গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকে পাথর হয়ে গেছেন রিপনের মা। চার সন্তানের মধ্যে তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, একমাত্র রিপনই ছিলেন তার শেষ আশ্রয়। এখন সেই ছেলেও নেই। শোকে পাথর এই মায়ের আর কথা বলার শক্তিও নেই। চোখের পানি শুকিয়ে গেলেও, বুকের হাহাকার থেমে নেই। বিলাপ করে তিনি বলছিলেন, ‘আল্লাহ ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আমার আর কেউ নাই।’