ঢাকা ০৩:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

ঢাবিতেও পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে সরব হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০১:২৯:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৪৯ বার দেখা হয়েছে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও অনশন আন্দোলনের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বা পোষ্য কোটা স্থগিত করেছে। রাবির এ সিদ্ধান্তের প্রভাব এসে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও (ঢাবি)। ঢাবির শিক্ষার্থীদের মধ্যেও জোরালো হচ্ছে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে রাবি প্রশাসনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে কোটা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশনরত অবস্থায় অসুস্থও হয়ে পড়েন।

এবার সেই আন্দোলনের হাওয়া এসে লেগেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’-এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘পোষ্য কোটা বাতিল চাই। শুধু শিক্ষক নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছেলে-মেয়ে, স্বামী বা স্ত্রীও কোটা পায়। এটা অযৌক্তিক। মুক্তিযোদ্ধা কোটাও এখনো চালু আছে অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান তো আর ভর্তি হতে আসে না। শুধু আই ওয়াশ করার জন্যই রাখা হয়েছে।’

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘রাবিতে পোষ্য কোটা স্থগিত হয়েছে, এবার ঢাবির পালা।’

হাফিজুল ইসলাম হাফিজ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঢাবিতেও অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে।’

এর আগে ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট দায়ের করেন ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার।

রিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ও রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়।

রিটকারীররা হলেন– মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ল এন্ড ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি), অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সরদার, অ্যাডভোকেট শাহেদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট খায়রুল বাশার, অ্যাডভোকেট লোকমান হাকিম, একজন ছাত্রের অভিভাবক মো. হোসেন আলী ও ব্যবসায়ী মাহফুজুল ইসলাম।

তার আগে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, নোটিশ পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে (ক) মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ (খ) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং (গ) শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ বহাল রেখে বাকি সব কোটা বাতিল করতে বলা হয়েছিল। নোটিশ গ্রহীতারা ব্যবস্থা না নিলে সুপ্রিম কোর্টে রিটসহ বিষয়টি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।

নোটিশে বলা হয়, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে হতে হবে এবং অন্য কোনো মানদণ্ডে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সাধারণত বৈষম্যমূলক, স্বেচ্ছাচারী এবং অযৌক্তিক, কোনো বৈধ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যের সঙ্গে কোনো যৌক্তিক সম্পর্ক নেই।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে মাত্র ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও এ রায় প্রয়োগ করতে হবে। নোটিশ পাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি, নাতনি কোটা বাতিল করা হলেও পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা বহাল রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত কোটা বাতিল করা হয়। সে সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছিলেন, ভর্তি পরীক্ষায় কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা রাখা হয়েছে। এটিকে তিনি ‘যৌক্তিক সংস্কার’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ঢাবির পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন উপাচার্য।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ ঢাকা পোস্টকে জানান, সুপ্রিম কোর্টে রিটের নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। আদালতে তা এখনো চলমান রয়েছে।

ঢাবিতেও পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে সরব হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত : ০১:২৯:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও অনশন আন্দোলনের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভর্তির ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা বা পোষ্য কোটা স্থগিত করেছে। রাবির এ সিদ্ধান্তের প্রভাব এসে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও (ঢাবি)। ঢাবির শিক্ষার্থীদের মধ্যেও জোরালো হচ্ছে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবি।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে রাবি প্রশাসনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে কোটা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন শিক্ষার্থী অনশনরত অবস্থায় অসুস্থও হয়ে পড়েন।

এবার সেই আন্দোলনের হাওয়া এসে লেগেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীদের ফেসবুক গ্রুপ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’-এ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মইনুল ইসলাম বলেন, ‘পোষ্য কোটা বাতিল চাই। শুধু শিক্ষক নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছেলে-মেয়ে, স্বামী বা স্ত্রীও কোটা পায়। এটা অযৌক্তিক। মুক্তিযোদ্ধা কোটাও এখনো চালু আছে অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান তো আর ভর্তি হতে আসে না। শুধু আই ওয়াশ করার জন্যই রাখা হয়েছে।’

ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘রাবিতে পোষ্য কোটা স্থগিত হয়েছে, এবার ঢাবির পালা।’

হাফিজুল ইসলাম হাফিজ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ঢাবিতেও অযৌক্তিক পোষ্য কোটা বাতিল করতে হবে।’

এর আগে ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য প্রযোজ্য পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা বাতিলের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট দায়ের করেন ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার।

রিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি (প্রশাসন), প্রো-ভিসি (শিক্ষা) ও রেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়।

রিটকারীররা হলেন– মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ল এন্ড ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার, ব্যারিস্টার মাহদী জামান (বনি), অ্যাডভোকেট বায়েজীদ হোসাইন, অ্যাডভোকেট নাঈম সরদার, অ্যাডভোকেট শাহেদ সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট খায়রুল বাশার, অ্যাডভোকেট লোকমান হাকিম, একজন ছাত্রের অভিভাবক মো. হোসেন আলী ও ব্যবসায়ী মাহফুজুল ইসলাম।

তার আগে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, নোটিশ পাওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে (ক) মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ (খ) ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং (গ) শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ বহাল রেখে বাকি সব কোটা বাতিল করতে বলা হয়েছিল। নোটিশ গ্রহীতারা ব্যবস্থা না নিলে সুপ্রিম কোর্টে রিটসহ বিষয়টি নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল।

নোটিশে বলা হয়, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে হতে হবে এবং অন্য কোনো মানদণ্ডে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সাধারণত বৈষম্যমূলক, স্বেচ্ছাচারী এবং অযৌক্তিক, কোনো বৈধ রাষ্ট্রীয় উদ্দেশ্যের সঙ্গে কোনো যৌক্তিক সম্পর্ক নেই।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে মাত্র ৫ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও এ রায় প্রয়োগ করতে হবে। নোটিশ পাওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি, নাতনি কোটা বাতিল করা হলেও পোষ্য কোটা ও খেলোয়াড় কোটা বহাল রেখেছেন কর্তৃপক্ষ।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের জন্য সংরক্ষিত কোটা বাতিল করা হয়। সে সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেছিলেন, ভর্তি পরীক্ষায় কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা রাখা হয়েছে। এটিকে তিনি ‘যৌক্তিক সংস্কার’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ঢাবির পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন উপাচার্য।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ ঢাকা পোস্টকে জানান, সুপ্রিম কোর্টে রিটের নিষ্পত্তি এখনো হয়নি। আদালতে তা এখনো চলমান রয়েছে।