ঢাকা ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫

এক মাসে সাপের কামড়ে সাতজনের মৃত্যু চাঁপাইনবাবগঞ্জে

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ১০:২১:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৪ বার দেখা হয়েছে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিষধর সাপের দাপট উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এতে জেলাজুড়ে জুলাই মাসে সাতজন সাপে কেটে মারা গেছে এবং একের পর এক মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে বর্ষায় পানি জমে থাকা জায়গা, ধানখেত, খোলা মাঠ ও বসতবাড়ির আশপাশে সাপের উপস্থিতি বেড়েছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে জেলায় পর্যাপ্ত অ্যান্টি ভেনম মজুদ আছে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও জেলা হাসপাতালের তথ্যমতে, এ জেলায় ২০২৫ সালে সাপে কেটে মোট ৯০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতলে ভর্তি হয়েছেন ৬২ জন। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬ জনকে রের্ফাড করা হয়েছে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন একজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১১ জুলাই গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের ভিম কুমার ঘোষ নামের এক যুবক বাড়ির পাশে ঘাস কাটছিলেন। হঠাৎ তাকে সাপে ছবল মারে এবং আশপাশের লোকজন তাকে বাড়ির পাশের ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করান। পরে বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

২১ জুলাই সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঘুঘুডিমা এলাকার রুস্তম আলী গৃহপালিত পশুর জন্য ঘাস কাটার উদ্দেশ্যে হাসুয়ায় ধার দেওয়ার জন্য গোয়াল ঘরে ঢোকেন। সেখানেই এক বিষধর সাপ তাকে ছোবল দেয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিষিষ্ট জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

২৩ জুলাই নাচোল উপজেলা ফতেপুর ইউনিয়নে ভোর ৫ টার দিকে বাড়ির পাশে জমিয়ে রাখা বালু আনতে যান গৃহবধু সাহিদা বেগম। সেখানেই তাকে সাপে ছোবল মারে এবং বাড়ির লোকজন দেড় কিলোমিটার দূরের ওঝার কাছে যান ঝাড়ফুঁক করার জন্য এবং ঝাড়ফুক করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় সাহিদা বেগমকে। পরে বিষক্রিয়ায় ঝটপট করতে থাকলে তাকে রাজশাহী মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই দিনে একই উপজেলার লতিফা খাতুনকে সাপে কামড় দেয় এবং তাকেও রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।

এছাড়া ১৫ জুলাই  গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর এলাকার আবেদ আলী (৫৫), একই উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের নাঈমা খাতুন (১৯) এবং ২১ জুলাই নাচোল উপজেলার সানপুর গ্রামের কাসেম আলী (৪২) এর সাপের কামরে মৃত্যু হয়।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাপে কাটা রোগীরা প্রথমে স্থানীয়ভাবে ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে চিকিৎসায় বিলম্ব হচ্ছে এবং রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটছে। কেউ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হলে ঝাড়ফুঁকে সময় নষ্ট না করে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে অ্যান্টিভেনম নিতে হবে।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্তবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ জানান, জেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমানে অ্যান্টি ভেনম আছে। সাপে কেটে যারা চিকিৎসা নিতে আসছে তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন এ.কে.এম শাহাব উদ্দিন বলেন, বর্ষা মৌসুমের কারণে ঝোপঝাড়ে থাকা সাপগুলো লোকলয়ে চলে এসেছে। একারনে সম্পতি সময়ে সাপের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তাই কাউকে সাপে কাটলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইএইচওদের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানা হচ্ছে। যাতে করে গ্রামের মানুষ আরোও সচেতন হয়। এছাড়া জেলার পাঁচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জেলা হাসপাতলে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি ভেনম মজুদ আছে।

এক মাসে সাপের কামড়ে সাতজনের মৃত্যু চাঁপাইনবাবগঞ্জে

প্রকাশিত : ১০:২১:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ অগাস্ট ২০২৫

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিষধর সাপের দাপট উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এতে জেলাজুড়ে জুলাই মাসে সাতজন সাপে কেটে মারা গেছে এবং একের পর এক মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে বর্ষায় পানি জমে থাকা জায়গা, ধানখেত, খোলা মাঠ ও বসতবাড়ির আশপাশে সাপের উপস্থিতি বেড়েছে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অফিস জানিয়েছে জেলায় পর্যাপ্ত অ্যান্টি ভেনম মজুদ আছে।

জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও জেলা হাসপাতালের তথ্যমতে, এ জেলায় ২০২৫ সালে সাপে কেটে মোট ৯০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে হাসপাতলে ভর্তি হয়েছেন ৬২ জন। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে রাজশাহী মেডেকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৬ জনকে রের্ফাড করা হয়েছে। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন একজন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১১ জুলাই গোমস্তাপুর উপজেলার বাঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের ভিম কুমার ঘোষ নামের এক যুবক বাড়ির পাশে ঘাস কাটছিলেন। হঠাৎ তাকে সাপে ছবল মারে এবং আশপাশের লোকজন তাকে বাড়ির পাশের ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করান। পরে বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

২১ জুলাই সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঘুঘুডিমা এলাকার রুস্তম আলী গৃহপালিত পশুর জন্য ঘাস কাটার উদ্দেশ্যে হাসুয়ায় ধার দেওয়ার জন্য গোয়াল ঘরে ঢোকেন। সেখানেই এক বিষধর সাপ তাকে ছোবল দেয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিষিষ্ট জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

২৩ জুলাই নাচোল উপজেলা ফতেপুর ইউনিয়নে ভোর ৫ টার দিকে বাড়ির পাশে জমিয়ে রাখা বালু আনতে যান গৃহবধু সাহিদা বেগম। সেখানেই তাকে সাপে ছোবল মারে এবং বাড়ির লোকজন দেড় কিলোমিটার দূরের ওঝার কাছে যান ঝাড়ফুঁক করার জন্য এবং ঝাড়ফুক করে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় সাহিদা বেগমকে। পরে বিষক্রিয়ায় ঝটপট করতে থাকলে তাকে রাজশাহী মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই দিনে একই উপজেলার লতিফা খাতুনকে সাপে কামড় দেয় এবং তাকেও রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন।

এছাড়া ১৫ জুলাই  গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌর এলাকার আবেদ আলী (৫৫), একই উপজেলার পার্বতীপুর ইউনিয়নের নাঈমা খাতুন (১৯) এবং ২১ জুলাই নাচোল উপজেলার সানপুর গ্রামের কাসেম আলী (৪২) এর সাপের কামরে মৃত্যু হয়।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাপে কাটা রোগীরা প্রথমে স্থানীয়ভাবে ঝাড়ফুঁকের আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে চিকিৎসায় বিলম্ব হচ্ছে এবং রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটছে। কেউ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হলে ঝাড়ফুঁকে সময় নষ্ট না করে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে অ্যান্টিভেনম নিতে হবে।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালের তত্তবধায়ক ডা. মাসুদ পারভেজ জানান, জেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমানে অ্যান্টি ভেনম আছে। সাপে কেটে যারা চিকিৎসা নিতে আসছে তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিভিল সার্জন এ.কে.এম শাহাব উদ্দিন বলেন, বর্ষা মৌসুমের কারণে ঝোপঝাড়ে থাকা সাপগুলো লোকলয়ে চলে এসেছে। একারনে সম্পতি সময়ে সাপের কামড়ে আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তাই কাউকে সাপে কাটলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইএইচওদের মাধ্যমে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানা হচ্ছে। যাতে করে গ্রামের মানুষ আরোও সচেতন হয়। এছাড়া জেলার পাঁচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জেলা হাসপাতলে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি ভেনম মজুদ আছে।