ঢাকা ০৩:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

দেশেই বিশ্বমানের লিফট তৈরি করছে আরএফএল’র প্রপার্টি লিফটস

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৮:৩৮:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫
  • ৬৮ বার দেখা হয়েছে

এখন আর মানসম্মত বিশ্বমানের লিফট পাওয়ার জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর হতে হচ্ছে না। দেশে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের সাশ্রয়ী লিফট। বর্তমানে এ খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি লিফটস। প্রতিষ্ঠানটি এরইমধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগও করেছে।

১৯৮৮ সালে লিফট আমদানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও ২০১৮ সাল থেকে নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আন্তর্জাতিক সেফটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে নিজস্ব কারখানায় লিফট উৎপাদন শুরু করে আরএফএল। শুরুতে আমদানি করা কম্পোনেন্ট দিয়ে লিফট তৈরি হলেও পরে নিজস্ব কারখানায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে ধীরে ধীরে কম্পোনেন্ট উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। উন্নত প্রযুক্তির মোটর ও কন্ট্রোল প্যানেলের পাশাপাশি মান পরীক্ষার জন্য আধুনিক ল্যাব, ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি ও অন্যান্য সুবিধাসহ আধুনিক কারখানা গড়ে তুলেছে প্রোপার্টি লিফট। এর ফলে আমদানি করা লিফটের তুলনায় দাম সাশ্রয়ী হলেও মান ও নিরাপত্তায় গ্লোবাল ব্র্যান্ডের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার (২৩ আগস্ট) নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ঘুরিয়ে দেখানো হয় সাংবাদিকদের। এ সময় আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল, প্রপার্টি লিফটসের চিফ অপারেটিং অফিসার মঈনুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রপার্টি লিফটস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

তারা জানান, বর্তমানে পায়রা থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট, কোরিয়ান ইপিজেড, বে ইকোনমিক জোন, ইউএনআইএলও অফিস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড, চট্টগ্রাম আর্মি মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রোপার্টি লিফট ব্যবহার হচ্ছে। দেশীয় বাজারে ওয়ালটনও লিফট উৎপাদন করছে। তবে এখনো ৭০–৮০ শতাংশ লিফট আমদানি করতে হয়। দেশীয় কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিকমান বজায় রেখে উৎপাদন শুরু করায় আমদানির ওপর নির্ভরতা দ্রুত কমছে।

বর্তমানে বাজারে প্যাসেঞ্জার লিফট, কার্গো লিফট, হাসপাতাল লিফট, হোম লিফট, ক্যাপসুল লিফট, হাইড্রোলিক লিফট ও সিজার লিফট পাওয়া যাচ্ছে। ধারণক্ষমতা ও ফিচারের ওপর নির্ভর করে এসব লিফটের দাম ১৫ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা লিফটের তুলনায় দেশীয় লিফট ৫–৭ লাখ টাকা কম দামে পাওয়া যায়।

দেশের লিফট বাজারের আকার বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার। বছরে গড়ে ৪৫০০ থেকে ৫০০০ ইউনিট বিক্রি হয়। প্রবৃদ্ধি হার ১০–১৫ শতাংশ হলেও, উৎপাদন বাড়লে আগামী পাঁচ বছরে তা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় লিফটের চাহিদা ৪৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২০ শতাংশ। দাম কমলে এবং ব্যাপক উৎপাদন শুরু হলে সারাদেশেই লিফটের ব্যবহার বাড়বে।

দেশীয় উৎপাদনের পাশাপাশি প্রপার্টি লিফটস বিশ্বখ্যাত কোনে, ম্যাকপুয়ার্সা ও এসআরএইচ লিফটের বাংলাদেশে একমাত্র পরিবেশক। বর্তমানে প্রপার্টি লিফটস প্রায় ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করছে। আগামী পাঁচ বছরে ৮০ শতাংশ কম্পোনেন্ট স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরইমধ্যে আধুনিক টেস্টিং টাওয়ার, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মোটর এবং প্রশিক্ষিত ইনস্টলেশন টিম গড়ে তুলেছে।

 

বর্তমানে নরসিংদীর কারখানায় ২১০ জন কাজ করছেন। ইনস্টলেশন ও সার্ভিসিংয়ের কাজে যুক্ত আছেন আরও এক হাজারের বেশি জনবল। শিগগিরই সারাদেশে নিরাপদ লিফট স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে ৫ হাজার জনকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। ভবিষ্যতে মোটর ও কন্ট্রোল প্যানেলও দেশে তৈরি করে বিনিয়োগ বাড়াবে প্রোপার্টি লিফট।

প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, সরকারি নীতি সহায়তা ছাড়া দেশীয় লিফট শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। এজন্য সরকারি প্রকল্পে দেশীয় লিফট ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। মানুষ এখনো লিফটকে জটিল পণ্য হিসেবে দেখে, কিন্তু আরএফএল প্রমাণ করেছে দেশেই বিশ্বমানের লিফট তৈরি সম্ভব।

দেশীয় বাজার ছাড়াও রপ্তানির দিকেও নজর দিচ্ছে প্রপার্টি লিফটস। এ বছর থেকেই জার্মানি, ইউরোপ ও আমেরিকার মেলায় অংশগ্রহণ করবে তারা। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাস, সঠিক নীতি সহায়তা ও সচেতনতা তৈরি হলে বাংলাদেশ শুধু লিফটে স্বনির্ভরই হবে না, বৈশ্বিক বাজারেও শক্ত অবস্থান করে নিতে পারবে। লিফট এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বহুতল ভবনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ায় অফিস, হাসপাতাল, শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবনে লিফটের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে ব্যাপকভাবে উৎপাদন শুরু হলে দাম কমে যাবে, ফলে রাতারাতি চাহিদা আরও বাড়বে।

আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল বলেন, ক্রেতারা বিশ্বমানের সেফটি নিশ্চিত করে এমন লিফট চান, তবে দামও যেন তাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে। একসময় কেবল আমদানি করা লিফটই পাওয়া যেত, যার দাম বেশি এবং পুরোনো ভবনে বসানোর সুযোগও সীমিত ছিল। এজন্য দেশেই লিফট উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি। দেশে মূল্য সংযোজন বাড়ানোর ফলে এখন ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড লিফট সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে।

তিনি বলেন, একসময় বাংলাদেশে জাপানি পণ্য ব্যাপকভাবে আমদানি হতো। ছোটখাটো কলম পর্যন্ত জাপান থেকে আসতো। কিন্তু জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও শিল্পের দিক পরিবর্তনের কারণে জাপান লো-ভ্যালু পণ্য উৎপাদন থেকে সরে এসে হাই-ভ্যালু সেক্টরে চলে যায়। সেই শূন্যস্থান পূরণ করে চীন, যারা মাত্র দুই দশকে লো-ভ্যালু পণ্যের বিশ্ববাজার দখল করে নেয়। তবে একই পথ চীনেরও হবে। একসময় তারা লো-ভ্যালু প্রোডাক্ট থেকে সরে আসবে। তখন নতুন উৎপাদনশীল দেশগুলো, যেমন বাংলাদেশ, সেই বাজার দখল করবে। ইতোমধ্যে গার্মেন্টস ও প্লাস্টিক খাতে বাংলাদেশ চীনের জায়গা নিতে শুরু করেছে, যা আমাদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে।

এখন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্থানীয় বাজার পুরোপুরি দখল করা এবং উৎপাদনে কোয়ালিটি, সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করে গ্লোবাল মান অর্জন করা। তবে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে সরকারি ক্রয় নীতিতে অনেক সময় নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করা হয়। এটি অন্য শিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। সরকারের উচিত কেবল স্পেসিফিকেশন, মান ও মূল্যমান নির্ধারণ করা; ব্র্যান্ড নির্দিষ্ট করা নয়। ব্র্যান্ড উল্লেখ মানে কার্যত অন্য প্রতিষ্ঠানের গলা চেপে ধরা বলে মন্তব্য করেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি বলেন, আমরা কোনো প্রিভিলেজ চাই না, চাই ন্যায্য প্রতিযোগিতার সুযোগ। যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থেকে নিজেদের পণ্য তুলে ধরতে পারি। অথচ যখন সরকারি প্রকিউরমেন্ট নীতির বিরোধিতা করে ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করা হয়, তখন দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের নীতিমালাতেই কোথাও ব্র্যান্ডের বাধ্যবাধকতা নেই। সুতরাং দেশীয় উৎপাদকদের জন্য ফেয়ার প্লেগ্রাউন্ড তৈরি করতে হবে, যাতে তারা মান বজায় রেখে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে।

আমাদের কিন্তু কোয়ালিটি নিয়ে বিন্দুমাত্র দেশীয় গ্রাহকের কোনো মানে সংশয় থাকা উচিত না। কারণ যে কোম্পানিটি আগামী বছরে এক্সপোর্টের স্বপ্ন দেখে, যে কোম্পানিটি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে গ্লোবাল কম্পিটিশন করার স্বপ্ন দেখে সেই কোম্পানি তার দেশে ভোক্তাকে কখনো পুওর কোয়ালিটি লিফট দিতে পারে না—জোর দিয়ে বলেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল।

 

দেশেই বিশ্বমানের লিফট তৈরি করছে আরএফএল’র প্রপার্টি লিফটস

প্রকাশিত : ০৮:৩৮:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৫

এখন আর মানসম্মত বিশ্বমানের লিফট পাওয়ার জন্য বিদেশের ওপর নির্ভর হতে হচ্ছে না। দেশে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের সাশ্রয়ী লিফট। বর্তমানে এ খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি লিফটস। প্রতিষ্ঠানটি এরইমধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগও করেছে।

১৯৮৮ সালে লিফট আমদানির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করলেও ২০১৮ সাল থেকে নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে আন্তর্জাতিক সেফটি স্ট্যান্ডার্ড মেনে নিজস্ব কারখানায় লিফট উৎপাদন শুরু করে আরএফএল। শুরুতে আমদানি করা কম্পোনেন্ট দিয়ে লিফট তৈরি হলেও পরে নিজস্ব কারখানায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে ধীরে ধীরে কম্পোনেন্ট উৎপাদন শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। উন্নত প্রযুক্তির মোটর ও কন্ট্রোল প্যানেলের পাশাপাশি মান পরীক্ষার জন্য আধুনিক ল্যাব, ট্রেনিং ফ্যাসিলিটি ও অন্যান্য সুবিধাসহ আধুনিক কারখানা গড়ে তুলেছে প্রোপার্টি লিফট। এর ফলে আমদানি করা লিফটের তুলনায় দাম সাশ্রয়ী হলেও মান ও নিরাপত্তায় গ্লোবাল ব্র্যান্ডের সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

শনিবার (২৩ আগস্ট) নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ঘুরিয়ে দেখানো হয় সাংবাদিকদের। এ সময় আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল, প্রপার্টি লিফটসের চিফ অপারেটিং অফিসার মঈনুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রপার্টি লিফটস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

তারা জানান, বর্তমানে পায়রা থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট, কোরিয়ান ইপিজেড, বে ইকোনমিক জোন, ইউএনআইএলও অফিস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো লিমিটেড, চট্টগ্রাম আর্মি মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রোপার্টি লিফট ব্যবহার হচ্ছে। দেশীয় বাজারে ওয়ালটনও লিফট উৎপাদন করছে। তবে এখনো ৭০–৮০ শতাংশ লিফট আমদানি করতে হয়। দেশীয় কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিকমান বজায় রেখে উৎপাদন শুরু করায় আমদানির ওপর নির্ভরতা দ্রুত কমছে।

বর্তমানে বাজারে প্যাসেঞ্জার লিফট, কার্গো লিফট, হাসপাতাল লিফট, হোম লিফট, ক্যাপসুল লিফট, হাইড্রোলিক লিফট ও সিজার লিফট পাওয়া যাচ্ছে। ধারণক্ষমতা ও ফিচারের ওপর নির্ভর করে এসব লিফটের দাম ১৫ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। আমদানি করা লিফটের তুলনায় দেশীয় লিফট ৫–৭ লাখ টাকা কম দামে পাওয়া যায়।

দেশের লিফট বাজারের আকার বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার। বছরে গড়ে ৪৫০০ থেকে ৫০০০ ইউনিট বিক্রি হয়। প্রবৃদ্ধি হার ১০–১৫ শতাংশ হলেও, উৎপাদন বাড়লে আগামী পাঁচ বছরে তা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় লিফটের চাহিদা ৪৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২০ শতাংশ। দাম কমলে এবং ব্যাপক উৎপাদন শুরু হলে সারাদেশেই লিফটের ব্যবহার বাড়বে।

দেশীয় উৎপাদনের পাশাপাশি প্রপার্টি লিফটস বিশ্বখ্যাত কোনে, ম্যাকপুয়ার্সা ও এসআরএইচ লিফটের বাংলাদেশে একমাত্র পরিবেশক। বর্তমানে প্রপার্টি লিফটস প্রায় ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করছে। আগামী পাঁচ বছরে ৮০ শতাংশ কম্পোনেন্ট স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এরইমধ্যে আধুনিক টেস্টিং টাওয়ার, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী মোটর এবং প্রশিক্ষিত ইনস্টলেশন টিম গড়ে তুলেছে।

 

বর্তমানে নরসিংদীর কারখানায় ২১০ জন কাজ করছেন। ইনস্টলেশন ও সার্ভিসিংয়ের কাজে যুক্ত আছেন আরও এক হাজারের বেশি জনবল। শিগগিরই সারাদেশে নিরাপদ লিফট স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণে ৫ হাজার জনকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। ভবিষ্যতে মোটর ও কন্ট্রোল প্যানেলও দেশে তৈরি করে বিনিয়োগ বাড়াবে প্রোপার্টি লিফট।

প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, সরকারি নীতি সহায়তা ছাড়া দেশীয় লিফট শিল্প প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন। এজন্য সরকারি প্রকল্পে দেশীয় লিফট ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। মানুষ এখনো লিফটকে জটিল পণ্য হিসেবে দেখে, কিন্তু আরএফএল প্রমাণ করেছে দেশেই বিশ্বমানের লিফট তৈরি সম্ভব।

দেশীয় বাজার ছাড়াও রপ্তানির দিকেও নজর দিচ্ছে প্রপার্টি লিফটস। এ বছর থেকেই জার্মানি, ইউরোপ ও আমেরিকার মেলায় অংশগ্রহণ করবে তারা। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাস, সঠিক নীতি সহায়তা ও সচেতনতা তৈরি হলে বাংলাদেশ শুধু লিফটে স্বনির্ভরই হবে না, বৈশ্বিক বাজারেও শক্ত অবস্থান করে নিতে পারবে। লিফট এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং আধুনিক জীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। বহুতল ভবনের সংখ্যা দ্রুত বাড়ায় অফিস, হাসপাতাল, শিল্প ও বাণিজ্যিক ভবনে লিফটের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে ব্যাপকভাবে উৎপাদন শুরু হলে দাম কমে যাবে, ফলে রাতারাতি চাহিদা আরও বাড়বে।

আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল বলেন, ক্রেতারা বিশ্বমানের সেফটি নিশ্চিত করে এমন লিফট চান, তবে দামও যেন তাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকে। একসময় কেবল আমদানি করা লিফটই পাওয়া যেত, যার দাম বেশি এবং পুরোনো ভবনে বসানোর সুযোগও সীমিত ছিল। এজন্য দেশেই লিফট উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি। দেশে মূল্য সংযোজন বাড়ানোর ফলে এখন ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী কাস্টমাইজড লিফট সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে।

তিনি বলেন, একসময় বাংলাদেশে জাপানি পণ্য ব্যাপকভাবে আমদানি হতো। ছোটখাটো কলম পর্যন্ত জাপান থেকে আসতো। কিন্তু জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও শিল্পের দিক পরিবর্তনের কারণে জাপান লো-ভ্যালু পণ্য উৎপাদন থেকে সরে এসে হাই-ভ্যালু সেক্টরে চলে যায়। সেই শূন্যস্থান পূরণ করে চীন, যারা মাত্র দুই দশকে লো-ভ্যালু পণ্যের বিশ্ববাজার দখল করে নেয়। তবে একই পথ চীনেরও হবে। একসময় তারা লো-ভ্যালু প্রোডাক্ট থেকে সরে আসবে। তখন নতুন উৎপাদনশীল দেশগুলো, যেমন বাংলাদেশ, সেই বাজার দখল করবে। ইতোমধ্যে গার্মেন্টস ও প্লাস্টিক খাতে বাংলাদেশ চীনের জায়গা নিতে শুরু করেছে, যা আমাদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে।

এখন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো স্থানীয় বাজার পুরোপুরি দখল করা এবং উৎপাদনে কোয়ালিটি, সেফটি ও সিকিউরিটি নিশ্চিত করে গ্লোবাল মান অর্জন করা। তবে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে সরকারি ক্রয় নীতিতে অনেক সময় নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করা হয়। এটি অন্য শিল্পের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। সরকারের উচিত কেবল স্পেসিফিকেশন, মান ও মূল্যমান নির্ধারণ করা; ব্র্যান্ড নির্দিষ্ট করা নয়। ব্র্যান্ড উল্লেখ মানে কার্যত অন্য প্রতিষ্ঠানের গলা চেপে ধরা বলে মন্তব্য করেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি বলেন, আমরা কোনো প্রিভিলেজ চাই না, চাই ন্যায্য প্রতিযোগিতার সুযোগ। যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থেকে নিজেদের পণ্য তুলে ধরতে পারি। অথচ যখন সরকারি প্রকিউরমেন্ট নীতির বিরোধিতা করে ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করা হয়, তখন দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের নীতিমালাতেই কোথাও ব্র্যান্ডের বাধ্যবাধকতা নেই। সুতরাং দেশীয় উৎপাদকদের জন্য ফেয়ার প্লেগ্রাউন্ড তৈরি করতে হবে, যাতে তারা মান বজায় রেখে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে।

আমাদের কিন্তু কোয়ালিটি নিয়ে বিন্দুমাত্র দেশীয় গ্রাহকের কোনো মানে সংশয় থাকা উচিত না। কারণ যে কোম্পানিটি আগামী বছরে এক্সপোর্টের স্বপ্ন দেখে, যে কোম্পানিটি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে গ্লোবাল কম্পিটিশন করার স্বপ্ন দেখে সেই কোম্পানি তার দেশে ভোক্তাকে কখনো পুওর কোয়ালিটি লিফট দিতে পারে না—জোর দিয়ে বলেন আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল।