ইন্টারনেট কিংবা অনলাইন জগতে ‘ভিপিএন’ খুব পরিচিত শব্দ। প্রচলিত ধারার বাইরের কিংবা সংরক্ষিত বিষয় ইন্টারনেটে দেখতে ‘ভিপিএন’ ব্যবহৃত হয়। ঘরোয়া ফুটবল লিগে ফেডারেশন কাপ দেখতে মঙ্গলবার অনেক ফুটবলপ্রেমী বাধ্য হয়ে ভিপিএনের শরণাপন্ন হয়েছিলেন। রাষ্ট্রীয় কোনো কারণে নয়, ফুটবল ফেডারেশনের সম্প্রচার নীতির কারণেই সৃষ্টি হয়েছিল এমন পরিস্থিতির।
কিংস অ্যারেনা ও কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রেনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে দু’টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা নিজের দেশে হওয়া ফেডারেশন কাপের দুই ম্যাচ ইউটিউবে দেখতে পারেননি। এ নিয়ে খেলা চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সমালোচনা হয়েছে।
বাফুফের অন্যতম সহ-সভাপতি ও মার্কেটিং এন্ড ডিজিটাল মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ফাহাদ করিম এ প্রসঙ্গে জানান, ‘বাংলাদেশ থেকে ইউটিউবে অন্য একটি প্ল্যাটফর্মে খেলা দেখা যাবে। তাদের সঙ্গে বাফুফের আলোচনা চূড়ান্ত। শুক্রবার লিগের ম্যাচ থেকে সবকিছু এখন সেই ইউটিউবে দেখতে পাবেন ফুটবলপ্রেমীরা।’
টি-স্পোর্টসের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, এবার বাফুফে টিভি এবং ডিজিটাল রাইটস ভিন্নভাবে বিক্রি করেছে। টি-স্পোর্টস টিভিতে খেলা দেখানোর পাশাপাশি তাদের ইউটিউবে খেলা প্রচার করতে পারবে। তবে সেটা বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না। বাংলাদেশ বাদে বিশ্বের অন্য দেশ থেকে দেখা যাবে। বাংলাদেশে ইউটিউবে দেখানোর জন্য বাফুফে অন্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বাফুফে অতিরিক্ত কেমন আয় করে সেটাই দেখার বিষয়।
গত কয়েক মৌসুম ঘরোয়া ফুটবল প্রচার করছে দেশের একমাত্র টেলিভিশন চ্যানেল টি-স্পোর্টস। একই সময়ে একাধিক ভেন্যুতে খেলা থাকলেও তারা টিভি, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে খেলা প্রচার করে আসছে। ফলে টি-স্পোর্টসের ইউটিউবে খেলা দেখার অভ্যাস গড়ে উঠেছে ফুটবলপ্রেমীদের। এরই ধারাবাহিকতায় আজ মোহামেডান-পুলিশ, কিংস ও ফর্টিজ-ম্যাচ দেখার জন্য ইউটিউবে দেখার চেষ্টা করেছেন অনেকে। কিন্তু ভোগান্তির শিকার ও কেউই ইউটিউবে দেখতে না পেয়ে বিরক্ত হয়েছেন। যারা টিভির সামনে ছিলেন তারা ফর্টিজ-কিংস ম্যাচ দেখতে পারলেও মোহামেডানের অনেক সমর্থক বাধ্য হয়ে ভিপিএন ব্যবহার করে কুমিল্লার ম্যাচ দেখেছেন।
অনলাইন মাধ্যমে বাড়তি আয়ের জন্য বাফুফে ভিন্ন পথে হেঁটেছে।ম্যাচগুলো ইউটিউবে সম্প্রচার হবে না এমন ঘোষণা দিলেও অনেক দর্শক ভোগান্তি বা বিড়ম্বনায় পড়তেন না। অথবা গত শুক্রবার চ্যালেঞ্জ কাপের মতো আজও ফেডারেশন কাপের দুই ম্যাচ টি-স্পোর্টসের ইউটিউবে সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া যেত বলে মনে করেন ফুটবল সমর্থকরা।
দর্শকরা ফুটবলের প্রাণ। দর্শক ও ফুটবলপ্রেমীদের উন্মাদনা-ভালোবাসার মাধ্যমেই মূলত স্পন্সর ও ডিজিটাল আয় আসে ফেডারেশনের। সেই দর্শকদের বিষয়টি আজ ফেডারেশন বিবেচনাই করেনি। খেলার আগে এই সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা দেয়নি, এমনকি খেলার পরেও নেই কোনো বিবৃতি। টি-স্পোর্টসও এই সংক্রান্ত কোনো পোস্ট দেয়নি ফুটবলপ্রেমীদের উদ্দেশ্যে।
ফুটবলপ্রেমীদের মতো সাংবাদিকরাও ছিলেন ভোগান্তির মধ্যে। কারণ ঢাকার বাইরে খেলা হওয়ায় টি-স্পোর্টসের ইউটিউবই সাংবাদিকদের রিপোর্টের প্রধান ভরসা। সেই পথও আজ বন্ধ। একে তো খেলা দেখা যায়নি, দ্বিতীয়ত খেলা শেষ হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক পর সাংবাদিকরা দুই ম্যাচের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ও ছবি পেয়েছে।