রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও সরকারি দলের ঘনিষ্ঠদের ছত্রছায়ায় অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ দিয়েছে জামানত ছাড়াই। এখন ঋণগ্রহীতা খুঁজে পাচ্ছে না, ফলে খেলাপি ঋণের বোঝা বাড়ছে। ফলে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব কারণে পুরো ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক খাত আজ সংকটে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) ২০২৫ সালের মার্চ শেষে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭৭ হাজার ৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৭২ শতাংশ।
২০২৪ সালের জুন শেষে এই খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। ফলে এক বছরের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা।
খাতসংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও সরকারি দলের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা পরিচালক পদে থেকে নিজেদের ঘনিষ্ঠদের নামে ঋণ অনুমোদন করেছেন। এসব ঋণ দেওয়া হয়েছে জামানত ছাড়াই। পরে অনেক ঋণগ্রহীতার হদিসই পাওয়া যায়নি। ফলে ঋণের অর্থ ফেরত আসছে না, আর সেই কারণে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পি কে হালদারের বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতিই এর অন্যতম কারণ। তার নিয়ন্ত্রণে থাকা বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানই আজ খেলাপি ঋণের চাপে ভেঙে পড়েছে। উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়, পিপলস লিজিংয়ের প্রায় সব ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৯৫ শতাংশে পৌঁছেছে। শুধু এ প্রতিষ্ঠানগুলো নয়, সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও একই রকম। ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফিন্যান্স ও আভিভা ফিন্যান্সসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ। সব মিলিয়ে ব্যাংক–বহির্ভূত আর্থিক খাত এখন গভীর সংকটে।
দেশে প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮১ সালে আইপিডিসির মধ্য দিয়ে। এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক লাইসেন্স দিয়ে থাকে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৪-এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর মতো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রেগুলেটরি বডি হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশে বর্তমানে ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এর মধ্যে ২০টি প্রতিষ্ঠানকে সমস্যাগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট ঋণের পরিমাণ ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। খেলাপি ঋণের হার ৮৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। বিপরীতে এসব ঋণের বন্ধকি সম্পদের মূল্য মাত্র ৬ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের মাত্র ২৬ শতাংশ।
অন্যদিকে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা ১৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের হার সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে।