গাজা-ইসরায়েলের সংঘাতের অবসান ঘটাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বৈঠকের পর এ পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এক্সে দেওয়া পোস্টে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এটি ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি কার্যকর পথ প্রদান করবে। তিনি এই প্রচেষ্টায় ব্যাপক সমর্থনের আশাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘গাজা সংঘাতের অবসান ঘটাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। এটি ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি জনগণের জন্য। পাশাপাশি বৃহত্তর পশ্চিম এশীয় অঞ্চলের জন্য দীর্ঘমেয়াদী এবং টেকসই শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের একটি কার্যকর পথ প্রদান করবে। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট সকলেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উদ্যোগকে সমর্থন করবেন।’
গাজার শান্তি পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে:
পুনর্নির্মাণ এবং সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল: গাজা হবে একটি উগ্রপন্থী, সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল, যা তার প্রতিবেশীদের জন্য হুমকিস্বরূপ নয়। গাজার জনগণের সুবিধার জন্য এটি পুনর্গঠিত করা হবে, যারা যথেষ্ট ভোগান্তির শিকার।
যুদ্ধের তাৎক্ষণিক সমাপ্তি: উভয়পক্ষ এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, তাহলে যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ হবে।
বাহিনী প্রত্যাহার: জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতির জন্য ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার করবে। এই সময়ের মধ্যে, বিমান ও কামান হামলাসহ সকল সামরিক অভিযান স্থগিত করা হবে এবং শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্র স্থগিত থাকবে।
জিম্মি প্রত্যাবর্তন: ইসরায়েল এই চুক্তি প্রকাশ্যে গ্রহণ করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাস জীবিত এবং মৃত সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে দিবে। সমস্ত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার পর, ইসরায়েল ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীকে মুক্তি দেবে এবং ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের পর আটক ১৭০০ গাজাবাসীকেও মুক্তি দেবে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুও থাকবে। এছাড়া মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির পরিবর্তে ইসরায়েল ১৫ জন নিহত গাজার নাগরিকের দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিবে।
হামাস সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা: সমস্ত জিম্মিদের ফেরত পাঠানোর পর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং অস্ত্র ত্যাগের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হামাস সদস্যদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হবে। এএনআই অনুসারে, গাজা ত্যাগ করতে ইচ্ছুক হামাস সদস্যদের গ্রহণকারী দেশগুলিতে নিরাপদে যাওয়ার পথ দেওয়া হবে। হামাস এবং অন্যান্য দলগুলিকে গাজার শাসনব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ বা যেকোনোভাবে কোনও ভূমিকা না রাখার বিষয়ে একমত হতে হবে। টানেল এবং অস্ত্র উৎপাদন সুবিধাসহ সমস্ত সামরিক, সন্ত্রাসী এবং আক্রমণাত্মক অবকাঠামো ধ্বংস করা হবে এবং পুনর্নির্মাণ করা হবে না।
গাজায় সাহায্য: এই চুক্তি গৃহীত হলে, সম্পূর্ণ সাহায্য অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় পাঠানো হবে। ন্যূনতম সাহায্যের পরিমাণ ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ সালের মানবিক সাহায্য সংক্রান্ত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। যার মধ্যে অবকাঠামো (জল, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন), হাসপাতাল এবং বেকারিগুলির পুনর্বাসন এবং ধ্বংসস্তূপ এবং খোলা রাস্তা অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রবেশ অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
গাজার শাসনব্যবস্থা: গাজা একটি টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির অস্থায়ী অন্তর্বর্তীকালীন শাসনব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত হবে। যারা গাজার জনগণের জন্য দৈনন্দিন জনসেবা এবং পৌরসভা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। এই কমিটি ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত হবে। যার তত্ত্বাবধান ও তত্ত্বাবধানে থাকবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থা, ‘শান্তির বোর্ড’। এর নেতৃত্বে থাকবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
গাজার নাগরিক: শান্তি পরিকল্পনা অনুসারে, কাউকে গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে না এবং যারা যেতে চান- তারা তা করতে এবং ফিরে আসতে স্বাধীন থাকবেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব অংশীদার: গাজায় অবিলম্বে মোতায়েনের জন্য একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী তৈরি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, আরব এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে কাজ করবে। এই বাহিনী গাজায় ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা প্রদান করবে।
হামাসের প্রতি সতর্কীকরণ: হোয়াইট হাউস শান্তি পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, যদি হামাস এই প্রস্তাব বিলম্বিত করে বা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে আইডিএফ থেকে আইএসএফে কাছে হস্তান্তরিত সন্ত্রাসমুক্ত এলাকায় বর্ধিত সহায়তা অভিযানসহ উপরোক্ত কাজগুলি এগিয়ে যাবে।