যুক্তরাষ্ট্রের ইতাহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ভাইস প্রেসিডেন্টদের মধ্যে অন্যত ডিক চেনি মারা গেছেন। ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করতে ২০০৩ সালে ইরাকে যে ভয়াবহ আগ্রাসন চালিয়েছিল মার্কিন-ন্যাটো বাহিনী, সেই আগ্রাসনের প্রধান পরিকল্পনাকারী বা মাস্টারমাইন্ড ছিলেন ডিক চেনি।
মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোরবেলায় নিউমোনিয়া এবং হৃদরোগজনিত জটিলতায় মৃত্যু হয়েছে ডিক চেনির। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তার পরিবারের সদস্যরা এক বিবৃতিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ইরাকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম যুদ্ধ বাঁধে ১৯৯০ সালে। ওই বছর আগস্টে ইরাকের সঙ্গে সংঘাত শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ৪২টি দেশের জোটের। ইতিহাসে সেই যুদ্ধ ‘উপসাগরীয় যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ। ডিক চেনি ছিলেন তার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যুদ্ধের পরিকল্পনা, জোটভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ— ইত্যাদি দায়িত্বগুলো তিনিই দেখতেন।
পরে ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট হন জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশের ছেলে জর্জ ওয়াকার বুশ। তার নেতৃত্বাধীন সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন ডিক চেনি। পরে ২০০৪ সালে ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জর্জ ওয়াাকার বুশ। সেই সরকারেও চেনি ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
অর্থাৎ বাবা বুশ এবং ছেলে বুশ— উভয়ের নেতৃত্বাধীন সরকারেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন এই রিপাবলিকান রাজনীতিবিদ। শুধু তাই নয়, জর্জ ওয়াকার বুশের নেতৃত্বাধীন সরকারে সবচেয়ে ক্ষমতাবান কর্মকর্তাও ছিলেন চেনি। ধারণা করা হতো, সরকার মূলত চেনিই চালান এবং বুশ জুনিয়র তার পরামর্শ মেনে চলেন।
ডিক চেনির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াকার বুশ। এক শোকবার্তায় চেনিকে ‘ভদ্র, সম্মানিত মানুষ’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, “তার প্রজন্মের অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে উজ্জল এবং নিবেদিতপ্রাণ জনসেবক। চেনি ছিলেন এমন একজন দেশপ্রেমিক, যার সততা, বুদ্ধিমত্তা এবং কর্মনিষ্ঠা ছিল দৃষ্টান্তযোগ্য।”
ইরাক যুদ্ধ
১৯৯১ সালের চুক্তি ভঙ্গ করে ইরাক ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করছে— অভিযোগ তুলে ২০০৩ সালে ইরাকে হামলা চালায় মার্কিন-ন্যাটো বাহিনী। এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ও উসকানিদাতা ছিলেন চেনি। কিন্তু ইরাকে কোনো বিধ্বংসী অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ২০০৬ সালে ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

চেনির ধারণা ছিল, ইরাকে প্রচুর পরিমাণে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে এবং মার্কিন বাহিনী সেখানে অভিযান শুরু করলে ইরাকের জনগণ তা স্বাগত জানাবে। অভিযান শেষে ইরাকে একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠারও পরিকল্পনা ছিল চেনির।
তবে বাস্তবে তার কিছুই ঘটেনি। ইরাকে কোনো বিধ্বংসী অস্ত্র পাওয়া যায়নি। ইরাকের জনগণও মার্কিন বাহিনীকে স্বাগত জানায়নি, উপরন্তু মার্কিন হামলার সুযোগে দেশটিতে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে আল কায়েদা এবং আইএসের মতো ভয়ঙ্কর কট্টর ইসলামপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠী। মার্কিন হামলার পর থেকে আজ পর্যন্ত ইরাকে স্থিতিশীলতা আসেনি।

ডেস্ক রিপোর্ট 






















