নীরব প্রকৃতি। চারদিক কুয়াশার সাদা চাদরে মোড়া। উত্তরের হিমশীতল বাতাস। কনকনে শীত। শিশিরভেজা দূর্বাঘাসে নরম রোদের ছোঁয়া লাগতেই জেগে উঠেছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি)র শিক্ষার্থীদের প্রাণ।
প্রশাসনিক ভবনের সামনে হলুদ গাঁদা ফুলের পাশে যে জায়গাটুকু জুড়ে মিষ্টি এক চিলতে রোদ পড়ে সেখানে প্রতি দিনের মতো আজও আড্ডা দিতে ভুল করেনি শিক্ষার্থীরা। মাঝে-মধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তাদেরও দেখা যায় অফিস ও ক্লাসের ফাঁকে ক্যাম্পাসের টিএসসি’র সামনে বকুলতলা ও প্রশাসন ভবনের সামনে মুক্ত বাংলায় রোদ পোহাতে।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অপরূপ প্রকৃতি এবং চারদিকে সবুজ গাছের সমারোহের কারণে এখানে শীত যেন একটু বেশি। পবিপ্রবির কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশের পুকুরে সকালের ফুটন্ত শাপলাগুলোয় ও লেকে পাখিদের লুকোচুরি সে এক বিমোহিত হওয়ার মতো দৃশ্য। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজার শিক্ষার্থীর উৎসবমুখর পদচারণায় ক্যাম্পাসে তৈরি হয় অন্যরকম আনন্দময় আবহ। পবিপ্রবি ক্যাম্পাসে শীতের সকালে সব থেকে মনোমুগ্ধকর আকর্ষণ বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক জুড়ে।
লেকের দক্ষিণ পাশে সবুজ মেহগনি বৃক্ষের নুয়েপড়া ডাল-পাতা থেকে ঝরেপড়া শিশিরের টুপটাপ শব্দ আর হাজারো পাখির কলরবে আন্দোলিত হয়ে ওঠে। কুয়াশা ভেদ করে যখন সকালের প্রথম সূর্য লেকের উপর উঁকি মারে তখন ঝলমল করে ওঠে তার চারপাশ।এক অভিন্ন অপরূপ স্নিগ্ধময় আলোকসজ্জ্বা নজর কেড়ে নেবে যে কারও।
কেরামত আলী হলে থাকা শিক্ষার্থী মারসিফুল আলম রিমন ও বিজয় ২৪ হলে থাকা শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন জানান, অনেক রাত করে তারা ঘুমায়। কুয়াশা ঠেলে সূর্যটা উঁকি দিতে দিতে প্রায় দুপুর হয়ে যায়, কিন্তু তাদের তো আলসেমি করার সুযোগ নেই। তারা আরও জানান, প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে হয়। ছোট ছোট আনন্দের উপলক্ষ খুঁজে বের করে শীতকে তারা উপভোগ করেন। শীতকালের মজাটা আলাদা। ক্যাম্পাসে প্রতি শীতে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। চায়ের কাপের উত্তাপ, ভাপা পিঠার ধোঁয়া কিংবা ব্যাডমিন্টন খেলার আনন্দ শিক্ষার্থীদের হৃদয়টাকে উষ্ণ করে। শীত তাদের কাবু করতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম আকাশ, উম্মে হাবিবা ও নুসরাত জাহান বলেন, শীতের প্রকৃতি আমাদের ভালো লাগে। শীতের সকালে আমাদের ক্যাম্পাস আরো বেশি সুন্দর লাগে। আমরা ক্যাম্পাসের আবাসিক হলে থাকি এবং রোজ শীতের সকালে ক্যাম্পাসে হাঁটতে বের হই। সকালের চা নাস্তা আমরা হলের বাইরে করি। সকালবেলা হাঁটতে এসে বন্ধুরা মিলে টিএসসির সামনে বকুলতলায় আড্ডায় মেতে উঠি।
পবিপ্রবির ফিসারিজ অনুষদের ৭ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা, জেবা আফিয়া তাসনিম, লাবিব হাসনাইন ও সাইদুর রহমান এবং আইন ও ভুমি প্রশাসন অনুষদের শিক্ষার্থী আবু হাসনাত তুহিন, মোঃ নুর নবী ও হাবিব বলেন, আমাদের কাছে মনে হয় ক্যাম্পাস জীবনে শীত আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। ক্যাম্পাসের অপরূপ প্রকৃতি এবং চারদিকে সবুজ গাছের সমারোহের কারণে পবিপ্রবি শীতে অনন্যা। সবুজ ক্যাম্পাসকে একটু রঙের ছোঁয়া লাগায় শীতে ফোটা শত শত রং বে-রঙের ফুল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (জনসংযোগ) মুহাম্মদ ইমাদুল হক প্রিন্স জানান, অনেকে শীতে উঞ্চতা খুঁজতে খেলার মাঠ, প্রশাসনের সামনে মুক্ত বাংলা, শহীদ জিয়া হলের সামনে, বিজয় ২৪ হলের সামনে, কেরামত আলী হলের সামনে, লাল কমল লেকের উত্তর পারে, নিল কমল লেকের উত্তর পাড়ে, ও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের সামনে এক এক দলে ১৫ থেকে ২০ জন মিলে করে গ্রুপ স্টাডি।
রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন জানান, ফুলে ফুলে ভরে গেছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। গাছ ঠাঁসা ফোটা এসব ফুলের মিষ্টি সুবাসে পাগলপারা মৌমাছি আর প্রজাপতিরা। যা দেখে মুগ্ধ সবাই। ডালিয়া, জিনিয়া, হরেক রকম গাদা, গোলাপের মতো নাম জানা নানা বর্ণের ফুল তো আছেই, তার সঙ্গে ফুটেছে এবার নতুন নতুন নামের নানা আকার ও বর্ণের অসংখ্য ফুল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম হেমায়েত জাহান বলেন, শীতকালীন নানা প্রজাতির প্রস্ফুটিত এ ফুলের সমারোহে এখন সুশোভিত পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফুলে ফুলে সজ্জিত ক্যাম্পাস যেনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্যমুগ্ধ কোনো ছবি। আর ফুলে সুশোভিত ক্যাম্পাস দেখতে আসছেন প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী। তারা ফুলের বাগানে ঘুরছেন। ছবি তুলতেই যেন তারা বেশি ব্যস্ত। তবে সেলফি তুলতেও ভুলছেন না। বেশিরভাগই আসছেন সপরিবারে।
পবিপ্রবি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, শীতে সৌন্দর্যের ডালি খুলেছে আমাদের পবিপ্রবি ক্যাম্পাস। এ সময় আমাদের ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে এখানকার বাগানগুলোতে ফুটে থাকা নানা রঙের ফুল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত উপভোগ করেন এ সৌন্দর্য। প্রশাসনিক ভবন, বিভিন্ন বিভাগের সামনে, শহীদ মিনারের পাশে, বিভিন্ন হলের ভেতর, সবখানে যেন একই চিত্র। নানা রঙের ফুলের পসরা যেন সাজিয়ে বসেছে নয়নাভিরাম পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।