আসন্ন ঈদুল আজহায় দক্ষিণাঞ্চলে রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাগুলো যাত্রী সেবায় কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বন্ধ, বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ বন্ধ। শুধুমাত্র সড়ক পথে বিআরটিসি যাত্রী সেবায় থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে ঘরমুখো মানুষদের এবারও দ্বারস্থ হতে হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিবহনগুলোর ওপর।
বেসরকারি পরিবহন সংস্থার ধারণা দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় ন্যূনতম ১৫ লক্ষাধিক মানুষ ঈদ করতে আসেন। ঈদের পরে তারা আবার কর্মস্থলে ফেরেন। এরমধ্যে অধিকাংশ মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় যান।
নদী প্রধান বরিশাল বিভাগে নৌ-যান জনপ্রিয় হলেও রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কোনো জাহাজ যাত্রী সেবায় যুক্ত করা হয়নি। ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া অত্যন্ত জনপ্রিয় প্যাডেল স্টিমার পিএস মাসহুদ, পিএস লেপচা, পিএস টার্ন, পিএস অস্ট্রিচ চলাচলে লোকসান দেখিয়ে নৌ মন্ত্রণালয় থেকে পরিবহন সেবা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এমনকি আধুনিক নৌযান এমভি মধুমতি, এমভি বাঙালীর সেবা একই কারণ দেখিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ না থাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন লঞ্চগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয় যাত্রীদের। বেসরকারি জাহাজে চলাচল করতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকারও হন ঈদে ঘরমুখো মানুষেরা।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক বরিশালের নদী বন্দর কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পরে লঞ্চে যাত্রী কমে গেছে। তবে ঈদে তুলনামূলক কিছু যাত্রী হয়। ঈদুল আজহায় লম্বা ছুটি হওয়ায় যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ থাকবে বলে মনে হয় না। তারপরও স্পেশাল সার্ভিসে আমরা ৬টি লঞ্চ প্রস্তুত রাখবো।
তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপত্তায় আমরা সবসময়েই গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এবারও তার ব্যত্যয় হবে না।
ঈদে ৩ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত স্পেশাল সার্ভিস দেবে লঞ্চগুলো।
এদিকে সড়কে বিআরটিসি বরিশাল ডিপোর অর্ন্তভুক্ত গাড়িগুলো যাত্রী সেবায় থাকবে। ঈদে যাত্রী চাপ সামলাতে বাড়তি কোনো গাড়ি যুক্ত করার সক্ষমতা নেই জানিয়ে বরিশাল ডিপো ম্যানেজার জামিল হোসেন বলেন, বরিশাল ডিপোর মোট ৫২টি গাড়ির মধ্যে ১০টি গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তিবদ্ধ। অন্য গাড়িগুলোর মধ্যে একটি গাড়ি মেরামত করা হচ্ছে। বাকিগুলো বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। ঈদে যাত্রী সেবা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়িগুলোকে সড়কে যুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি আমাদের সক্ষমতার মধ্য দিয়ে যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে।
ঈদুল আজহায় যাত্রী পরিবহনে বিশেষ কোনো ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেনি বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ। বরিশালের স্টেশন ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, সপ্তাহে তিনদিন নিয়মিত যাত্রী সেবা দিয়ে আসছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ঈদুল আজহায় আমাদের স্পেশাল ফ্লাইট সংযুক্ত করা হয়নি।
বিশ্লেষকরা যা বলছেন
যাত্রী সেবায় রাষ্ট্রীয় সংস্থা না থাকাকে বিশেষ উদ্দেশ্য বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশালের সভাপতি গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে পরিবহন থাকতেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে সেবা দিচ্ছে না। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে জাহাজ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। বিআরটিসির যে কয়টি বাস চলাচল করে সেগুলোর মান খুবই নিম্নমানের। বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট নেই। এর মানে, তৃতীয় একটি পক্ষ স্পষ্ট করে বললে ব্যক্তিমালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুবিধা পাইয়ে দিতে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।
তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলবাসী দাবি করছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিবহনগুলো সচল করে সেবায় যুক্ত করা হবে।