ঢাকা ০৯:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

পবিপ্রবির নির্মাণাধীন ভবনে মাদকদ্রব্য

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৭:৫৩:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫
  • ১৪০ বার দেখা হয়েছে

জুবাইয়া বিন্তে কবির:- পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চশিক্ষার এক প্রধান বাতিঘর। জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ চর্চার এ কেন্দ্রটি যখন মাদকের মতো ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধির আখড়া হওয়ার আশঙ্কায় পড়ে, তখন তা কেবল প্রশাসনিক বা আইনি ইস্যু নয়—বরং সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি অশনিসংকেত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন সৃজনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন থেকে এক বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে নিরাপত্তা শাখা, আনসার বাহিনী ও প্রক্টরিয়াল টিমের সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযান সরাসরি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম–এর নির্দেশনায় পরিচালিত হয়। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে হাতে-নাতে আটক করা হয় শ্রমিক ম্যানেজার শামীমকে, যার বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলায়।

শামীমের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় গাঁজা, ইয়াবা, মাদক সেবনের সরঞ্জাম, যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধ ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ। পরদিন সকালেও তার কক্ষে পুনরায় অভিযান চালানো হয় অন্যান্য শ্রমিক ও সাইট ম্যানেজারদের উপস্থিতিতে। বিষয়টি জানানো হয় দুমকি থানা পুলিশকে এবং পরবর্তীতে শামীমকে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রধান মো. মুকিত মিয়া বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই এই চক্রটির গতিবিধির ওপর নজর রাখছিলাম। এই অভিযানে আমরা গুরুত্বপূর্ণ আলামত পেয়েছি, যা তদন্তে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতেও মাদকবিরোধী অভিযান আরও জোরালোভাবে চলবে। অভিযানে স্থানীয় জনসাধারণ, প্রক্টরিয়াল টিম এবং আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের দৃঢ় অবস্থান ও তৎপরতায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকমহলে প্রশংসার সুর ধ্বনিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দুমকি থানার ওসি মো. জাকির হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মাদকবিরোধী যে কোনো প্রয়াসে আমরা পাশে আছি এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পাঠদানের কেন্দ্র নয়, এটি মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রও। আমাদের এই পবিত্র চত্বরে যদি অসৎ চক্রের মরণখেলা চলে, তবে সেটি নীরব ঘুণের মতো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গ্রাস করবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান তাই আপসহীন। বর্তমান প্রশাসনের দূরদৃষ্টি ও কঠোরতা আমাদের সুশাসনের পথে এগিয়ে নিচ্ছে, যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন,“আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মাদক ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের কেন্দ্র। এখানে কেউ মাদকের ছায়া ফেলতে চাইলে তাকে কঠোরভাবে আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি প্রাঙ্গণ যেন আলোকিত হয় জ্ঞান, সততা ও মানবিকতার আলোয়। আমরা চাই, পবিপ্রবি হোক একটি সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত আদর্শ শিক্ষাঙ্গন।

” তিনি আরও জানান,“২৭ জুন রাতেও যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রতিটি নির্মাণাধীন ভবন, আবাসিক এলাকা ও ক্যাম্পাসের আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ও সহকারী অধ্যাপক ড. সগিরুল ইসলাম মজুমদার ও ড. মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, “এটি শুধু একটি অভিযান নয়, বরং শিক্ষাঙ্গনে দায়বদ্ধতা ও সুশাসনের প্রতীক। উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রশাসন যে সাহস ও নিষ্ঠা দেখাচ্ছে, তা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক আদর্শ হয়ে উঠবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, পুরো বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান চলবে। এই উদ্যোগ শুধু একটি চক্রের মুখোশ উন্মোচন নয়, বরং এক বৃহত্তর অভিযানের সূচনা—যেখানে পবিপ্রবির প্রতিটি ইট, প্রতিটি দেয়াল হয়ে উঠবে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত, মাদকমুক্ত এক আদর্শ শিক্ষাঙ্গনের প্রতিচ্ছবি।

পবিপ্রবির নির্মাণাধীন ভবনে মাদকদ্রব্য

প্রকাশিত : ০৭:৫৩:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

জুবাইয়া বিন্তে কবির:- পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চশিক্ষার এক প্রধান বাতিঘর। জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ চর্চার এ কেন্দ্রটি যখন মাদকের মতো ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধির আখড়া হওয়ার আশঙ্কায় পড়ে, তখন তা কেবল প্রশাসনিক বা আইনি ইস্যু নয়—বরং সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি অশনিসংকেত। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন সৃজনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন থেকে এক বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে নিরাপত্তা শাখা, আনসার বাহিনী ও প্রক্টরিয়াল টিমের সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযান সরাসরি ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম–এর নির্দেশনায় পরিচালিত হয়। গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে হাতে-নাতে আটক করা হয় শ্রমিক ম্যানেজার শামীমকে, যার বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলায়।

শামীমের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় গাঁজা, ইয়াবা, মাদক সেবনের সরঞ্জাম, যৌনশক্তিবর্ধক ওষুধ ও অসামাজিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপকরণ। পরদিন সকালেও তার কক্ষে পুনরায় অভিযান চালানো হয় অন্যান্য শ্রমিক ও সাইট ম্যানেজারদের উপস্থিতিতে। বিষয়টি জানানো হয় দুমকি থানা পুলিশকে এবং পরবর্তীতে শামীমকে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় পুলিশের হেফাজতে দেওয়া হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রধান মো. মুকিত মিয়া বলেন, “আমরা বহুদিন ধরেই এই চক্রটির গতিবিধির ওপর নজর রাখছিলাম। এই অভিযানে আমরা গুরুত্বপূর্ণ আলামত পেয়েছি, যা তদন্তে সহায়ক হবে। ভবিষ্যতেও মাদকবিরোধী অভিযান আরও জোরালোভাবে চলবে। অভিযানে স্থানীয় জনসাধারণ, প্রক্টরিয়াল টিম এবং আনসার সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনের দৃঢ় অবস্থান ও তৎপরতায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকমহলে প্রশংসার সুর ধ্বনিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দুমকি থানার ওসি মো. জাকির হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মাদকবিরোধী যে কোনো প্রয়াসে আমরা পাশে আছি এবং আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পাঠদানের কেন্দ্র নয়, এটি মূল্যবোধ ও চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রও। আমাদের এই পবিত্র চত্বরে যদি অসৎ চক্রের মরণখেলা চলে, তবে সেটি নীরব ঘুণের মতো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গ্রাস করবে। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান তাই আপসহীন। বর্তমান প্রশাসনের দূরদৃষ্টি ও কঠোরতা আমাদের সুশাসনের পথে এগিয়ে নিচ্ছে, যা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যও একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন,“আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মাদক ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি বাস্তবায়নে কাজ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের কেন্দ্র। এখানে কেউ মাদকের ছায়া ফেলতে চাইলে তাকে কঠোরভাবে আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি দেয়াল, প্রতিটি প্রাঙ্গণ যেন আলোকিত হয় জ্ঞান, সততা ও মানবিকতার আলোয়। আমরা চাই, পবিপ্রবি হোক একটি সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত আদর্শ শিক্ষাঙ্গন।

” তিনি আরও জানান,“২৭ জুন রাতেও যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রতিটি নির্মাণাধীন ভবন, আবাসিক এলাকা ও ক্যাম্পাসের আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষক ও সহকারী অধ্যাপক ড. সগিরুল ইসলাম মজুমদার ও ড. মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, “এটি শুধু একটি অভিযান নয়, বরং শিক্ষাঙ্গনে দায়বদ্ধতা ও সুশাসনের প্রতীক। উপাচার্যের নেতৃত্বে প্রশাসন যে সাহস ও নিষ্ঠা দেখাচ্ছে, তা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক আদর্শ হয়ে উঠবে।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, পুরো বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ক্যাম্পাসে নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান চলবে। এই উদ্যোগ শুধু একটি চক্রের মুখোশ উন্মোচন নয়, বরং এক বৃহত্তর অভিযানের সূচনা—যেখানে পবিপ্রবির প্রতিটি ইট, প্রতিটি দেয়াল হয়ে উঠবে জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত, মাদকমুক্ত এক আদর্শ শিক্ষাঙ্গনের প্রতিচ্ছবি।