পাবনার সুজানগর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুইগ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিবসহ ১৫ জনের আহতের ঘটনায় ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় নয়ন খা নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) রাতে বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে গুরুতর আহত সুজানগর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফের ছেলে আদনানুর রউফ রুদ্র বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
গ্রেপ্তার নয়ন খা সুজানগর হাসপাতাল পাড়ার আলতু খার ছেলে। তিনি বিএনপি কর্মী বলে জানা গেছে।
মামলার আসামিরা হলেন- সুজানগর পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান খা, সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য কামাল শেখ, বিএনপি কর্মী লেবু খাঁ, পৌর যুবদল সদস্য মানিক খাঁ, সুজানগর এনএ কলেজ শাখার সভাপতি শাকিল খাঁ, সুজানগর পৌর ৬নং ওয়ার্ডের সিনিয়র সহ-সভাপতি রুহুল খাঁ ও যুবদল কর্মী হালিম শেখ প্রমুখ। গুরুতর আহত বহিষ্কার হওয়া শেখ আব্দুর রউফ কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের অনুসারী। এই মামলার আসামিদের বেশিরভাগ নেতাকর্মী আব্দুল হালিম সাজ্জাদ ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি একেএম সেলিম রেজা হাবিবের অনুসারী বলে জানা গেছে।
বেড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিবের ছেলে বাদী হয়ে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন। এছাড়া ৫০/৬০ অজ্ঞাত জনের নামও রয়েছে। এ ঘটনায় নয়ন খা নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে। অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি নিয়েও পুলিশ কাজ করছে।
এ ঘটনায় সদস্য সচিব রউফ শেখসহ ১৫ জনেরও বেশি নেতাকর্মী গুরুতর আহত হোন। এসময় ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। উদ্ধার করে প্রথমে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিলে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেলে ও ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। অবৈধ অস্ত্র হাতে কয়েকজন নেতাকর্মীদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি থাকা বিএনপির সদস্য সচিব শেখ আব্দুর রউফসহ ১০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করতে শুক্রবার তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল সুজানগরে এসে তথ্য সরবরাহ করেন। হামলার ছবি ভিডিও সংগ্রহ করেন। এছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্রের ভাইরাল হওয়া ছবিও সংগ্রহ করেন প্রতিনিধিদল। পরে থানায় জড়িতদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়ে যান। এসময় শক্তভাবে নিরপেক্ষভাবে ভয়ছাড়া প্রকৃত জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনকে বলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত সুজানগর পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর খায়ের নেতৃত্বে এদের একটি চক্র তৈরি হয়েছে। অবৈধ বালু কাটা, বাজারে দোকানদারদের থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, স্বর্ণের দোকানে দিনেদুপুরে ডাকাতি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ যাবতীয় অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। চলতি বছরের (৩ মার্চ) অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করলে ইউএনওকে মারতে যান মজিবর খাঁসহ ওই চক্রটি। এসময় সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের রুমে বসে থাকা জামায়াত নেতারা বাধা দিলে অফিসের ভেতরেই জামায়াতের উপজেলা নায়েবে আমির ও সেক্রেটারি সহ ৪ জন নেতাকে বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল। এ ঘটনা সারাদেশে আলোচনার জন্ম দিলে নামেমাত্র কয়েকজনকে বহিষ্কার করা হয়। জামায়াত নেতা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলেও তেমন কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। এছাড়া বাজারের একটি স্বর্ণের দোকানে দিনেদুপুরে ডাকাতির ভিডিও ভাইরাল হলে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।