পটুয়াখালী প্রতিনিধি:
বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়েছে এক অদ্ভুত মাছ। সারা গা জুড়ে খাড়া খাড়া কাঁটা, তিলের মতো কালো দাগ, চিকন লেজ, আর গোল থলির মতো গড়ন। দেখতে হুবহু শজারুর মতো। রোববার বিকেলে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশ জেলে বেল্লাল হোসেন সাগর থেকে ধরা ইলিশভরা ঝুড়ির ভেতর থেকে বের করে এই অচেনা প্রাণী। স্থানীয় জেলেদের ভাষায়, ‘বিদঘুটে মাছ’, কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক নাম Porcupinefish। বিরল প্রজাতির এই পাফারফিশ বাংলায় পরিচিত শজারু মাছ বা তিলক পটকা নামে।
জেলে বেল্লাল হোসেন জানায়, তারা পায়রা বন্দরের শেষ বয়ার কাছে গভীর সমুদ্রে জাল ফেলে। শুক্রবার বিকেলে জাল তুলতেই ইলিশ মাছের পাশাপাশি দেখতে পান বিদঘুটে এই মাছটিকে । জালে যখন তুললেন, তখনও যেন আঁশটে ভয়ের গন্ধ লেগে ছিল মাছটির গায়ে। সমুদ্র থেকে উপকূলে ফেরার পর, রোববার শেষ বিকেলে ইলিশের ঝুড়িতে করে আলীপুর মৎস্য আড়তের সামনে মাছ তুলতেই উৎসুক জনতার ভীড় জমে যায়। কেউ বিস্ময়ে তাকিয়ে, কেউ আবার শিউরে উঠছেন এর কাঁটা ভর্তি শরীর দেখে। আবার অনেকে মুঠোফোনে মাছটির ছবি তুলছেন।
স্থানীয় আড়তদার কামাল হোসেন জানালেন,‘জীবনে এমন মাছ দেখিনি। দেখতে অদ্ভুত, ভয়ঙ্কর। এ কারণে ভয়ে কেউ মাছটি কিনতে আগ্রহ দেখাননি।
পরিবেশকর্মী মেজবাহ উদ্দিন মান্নু বললেন, এই প্রাণী নিয়ে জেলেদের মনে কিন্তু আরেক শঙ্কা। আর সেটা হচ্ছে-এ মাছ খাওয়া যায় তো? নাকি পটকা মাছের মতো প্রাণঘাতী বিষ লুকিয়ে আছে শরীরে? সেই আশঙ্কায় বিক্রি হয়নি মাছটি। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ শুধু মাছই এনে দেয় না, তুলে আনে অজানা রহস্যও। আর সেই রহস্যের জালেই ধরা পড়ল সমুদ্রের এই শজারু অতিথি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা ব্যাখ্যা দিলেন, ‘এটি Diodontidae পরিবারের মাছ। সচরাচর জেলেদের জালে ধরা পড়ে না। তবে বঙ্গোপসাগরে এই পরিবারের কয়েকটি প্রজাতি পাওয়া যায়। তবে মাছটি কেনার জন্য কেউ আগ্রহ দেখাননি। এ কারণে জেলে মাছটি আড়তেই ফেলে রেখে যান। মাছটির ওজন প্রায় সাড়ে তিন কেজি। ’
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক ও উপকূলের পরিবেশ আর মৎস্য বিশেষ করে ইলিশ সম্পদ নিয়ে গবেষণা করেন মীর মোহাম্মদ আলী । তিনি বলেন, শজারু মাছের শরীরে রয়েছে টেট্রোডোটক্সিন নামক মারাত্মক বিষ। মানুষের জন্য সামান্য পরিমাণই প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই অনেক দেশেই এ মাছ নিষিদ্ধ। অথচ জাপানে এর আত্মীয় ফুগু মাছই আবার ‘ডেলিকেসি’। কেবল বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শেফের হাতেই তৈরি হয়, আরেকটি ভুল মানেই মৃত্যু।
তিনি আরো জানান, সাগরে মাছের নতুন নতুন প্রজাতি জালে আটকানোর ঘটনা ঘটছে। । কারণ গভীর সাগরের মাছ দুষণ কিংবা অন্য কারনে অগভীরে চলে আসছে। কুয়াকাটার জেলেদের কাছে বিরল প্রাজাতির এই মাছ একদিকে বিস্ময়ের, অন্যদিকে আতঙ্কের। সমুদ্র মাঝে মাঝে উপহার দেয় ইলিশ, আবার কখনও এমন অজানা অতিথি।