পটুয়াখালী প্রতিনিধি :
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের পশ্চিম লোন্দা গ্রামে টিয়াখালী নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের প্লাবন থেকে বাড়ি-ঘর, চলাচলের রাস্তাঘাট, কৃষিজমি রক্ষায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ধানাখালীর বাসিন্দারা।
আজ রোববার দুপুরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) এর সাথে প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা এই দাবি জানান। এই সময়ে বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষে থেকে প্রধান প্রকৌশলী, দক্ষিণাঞ্চল বরাবর লিখিত ভাবে তাদের এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন।
এই সময়ে বাপাউবো এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) নাসরিন ইসলাম মুক্তি এবং সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ ফজলুর রহমান রাজীব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সাথে কথা বলেন। বেড়িবাঁধ না তাদের যে সীমাহীন কস্ট তার বর্ননা করেন। এসময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম ফকু, ভুক্তভোগী কৃষক মো: মোশারফ হাওলাদার, মোঃ নূর ইসলাম, সোহেল মোল্লা, মোঃ আমিরুল হাওলাদার, মোঃ বেল্লাল, মরিয়ম জাহান মৌরি, মোসাঃ সোমা এবং গণগবেষক মোসাঃ হালিমা আয়শা সহ প্রমুখ। এছাড়াও বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ ও জনসুরক্ষা ফোরামের আহ্বায়ক, শুভঙ্কর চক্রবর্তী ও সদস্য মোঃ আখতারুল কবির উপস্থিত ছিলেন।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য হালিমা আয়শা বলেন, এই এলাকার মানুষ প্রাকৃতিক দূরে্যাগ ঘূর্ণিঝড় ছাড়াও অমাবস্যা-পূর্নিমায় অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। ছেলে মেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। চুলায় পানি ঢুকে পড়ায় রান্না করতে পারে না। গর্ভবতী নারী এবং অসুস্থ ব্যক্তিদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। এই অসহনীয় দূর্ভোগ থেকে বাঁচার জন্য এলাকার স্লুইসগেটসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছেন তারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম ফকু বলেন, “ আমরা পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পশ্চিম লোন্দা গ্রামের প্রায় ২৫০ টি দরিদ্র পরিবার ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে এই এলাকায় বসবাস করছি। আমরা জোয়ার ভাটায় ডুবি ভাসি।”
তিনি আরো বলেন, এলাকায় প্রায় ২০০ একর জমি তলিয়ে থাকে। তিন ফসলী এই জমি অথচ আমরা এক ফসলও চাষাবাদ করতে পারি না । আমাদের বেঁচে থাকার জন্য এবং কৃষি জমি রক্ষায় একটি টেকসই বেড়িবাঁধ প্রয়োজন।
বাপাউবো এর নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) নাসরিন ইসলাম মুক্তি জানান, তিনি ক্ষতিগ্রস্থদের কথা শুনেছেন। তিনি পশ্চিম লোন্দা গ্রামে বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে ঊধধতন কর্তৃপক্ষের সাথে উত্থাপনের করবেন এবং নাগরিক আবেদনের তালিকায় বেড়িবাঁধের বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন।
উল্লেখ্য , পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের পশ্চিম লোন্দা গ্রামে টিয়াখালী নদীর তীরে জেগে উঠা চরে দীর্ঘ ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রায় ২৫০ টি পরিবার বসবাস করছে । যাদের অধিকাংশ বসতভিটা এবং ফসলী জমি বিএস জরিপে মালিকানা রেকর্ড হয়। কিছু পরিবার সরকারের খাস জমিতে বন্দোবস্ত নিয়ে বসবাস করছেন। বহুদিনে গড়ে উঠেছে এই জনপদটি। টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকার ফলে প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিক জোয়ারে তলিয়ে থাকে ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট এমনকি ফসলী জমি। জমিতে বীজ বোপনের পর আতংকে থাকে কৃষক। কখন পানি উঠে সব তলিয়ে যায়।
গত বছর অক্টোবর মাস থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো মানবন্ধন, জোয়ারের পানিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আবেদন সহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের দাবী জানিয়ে আসছে।
ক্যাপশানঃ বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) এর সাথে প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে লিখিত ভাবে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখানী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ টিয়াখালী নদীর তীরের বাসিন্দারা।

ডেস্ক রিপোর্ট 























