ঢাকা ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পটুয়াখালী ভূমি অধিগ্রহন শাখা ক্ষতিপূরন পেতেও গুনতে হচ্ছে টাকা

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত : ০৬:৪৫:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৯ বার দেখা হয়েছে

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া গ্রামে প্রান্তিক কৃষক মো. বেল্লাল। তাদের গ্রামের স্থাপিত হচ্ছে দেশের নবম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। এ কারণে সরকার তাদের গ্রামে জমি অধিগ্রন করছে। এই ইউজেটএ তার ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহন করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ বাবদ তিনি পেয়েছেন ৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। কিন্তু তার এই ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে তাকে গুনতে হয়েছে টাকা।
বেল্লাল জানায়, ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে তাকে প্রতিদিনই জেলা শহরের ভ’মি অধিগ্রহন (এলএ) শাখায় দৌড়ঝাপ করতে হয়েছে। এক পর্যায়ে টাকা পেতে খরচ বাবদ শতকারা ৬ টাকা চেয়ে বসে। এই হিসেবে তাদের ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পর তিনি তার ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন।
বেল্লাল আরো জানায়, তারবাব-দাদাদের ৩ একর এক শতাংশ জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। ক্ষতিপূরন পেয়েছেন এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এই ক্ষতিপূরণের টাকা পেতেও খরচ বাবদ তাদের ৬ শতাংশ হারে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক মো শাহাবুদ্দিন। তিনি ক্রয়সুত্রে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ জমির মালিক। ইপিজেট এ তার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি অধিগ্রহন করেছে সরকার। কিন্তু তিনি এখণও তার ক্ষতিপূরনের টাকা পাননি।
শাহাবুদ্দিন জানান, ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে খরচ বাবদ টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা দিতে না পারায় ভ’মি অধিগ্রহন শাখায় আসলে বার বার সময় দিচ্ছে আর বলছে দেখছি এক সপ্তাহ পড়ে আসেন। এই ভাবে তাকে ঘোরানো হচ্ছে।
পটুয়াখালীতে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট পটুয়াখালী ইপিজেড প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া গ্রামে স্থাপিত হচ্ছে দেশের নবম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। ইতিমধ্যে ৪১০ দশমিক ৭৮ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার প্রায় ৩০০ একর জমি ইতোমধ্যে বালু ফেলে প্রস্তুত করা হয়েছে। অভ্যন্তরের রাস্তা, রক্ষা প্রাচীরের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। যাদের জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫৪ জনের জন্য পূর্নবাসনের কাজও চলছে।
এদিকে ইপিজেড এর জন্য ভূমি অধিগ্রহনের পর থেকে ক্ষতিপূরন পেতে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখা ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পেতে ভিড় করতে থাকে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াকে ঘিরে এলএ শাখায় কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পেতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। ওই শাখায় গড়ে উঠেছে একটি দালাল চক্র । ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে খরচের কথা বলে শতকরা ৬ টাকা থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে । যারা খরচের টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষতিপূরনের টাকা না পাওয়া কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,অনেক সময় দালাল চক্র ভূয়া কাগজ পত্র তৈরী করে জমির প্রকৃত মালিকদের হয়রানী করতে তার বিরুদ্ধে আপত্তি দিয়ে তাদের টাকা উত্তোলনে সমস্যা তৈরী করছেন। পরে দালালদের সাথে জমির প্রকৃত মালিকদের সমঝোতা হলে তারা তাদের প্রাপ্য টাকা নিয়ে আপত্তি তুলে নিচ্ছেন। নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এই চক্রটির ফাঁদ থেকে। হয়রানির ভয়ে কেই এই দালাল চক্রটির বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে ইপিজিড প্রকল্পের পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহনের সমুদয় টাকা পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেছি। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের টাকা পািরশোধ করা হচ্ছে। টাকা পরিশোধের প্রক্রিয়ার সাথে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি জেলা প্রশাসকের এতিয়ার। সেখানে কোন অনিয়ম হয় কিনা তা আমার জানা নেই।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদ উল আলম বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ এসেছে। নবাগত জেলা প্রশাসক পটুয়াখালীতে যোগদানের পর তার কাছে বিষয়চি অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পটুয়াখালীর নবাগত জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ শহীদ উদ্দীন চৌধুরী মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের দরবার হলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। এসময় সাংবাদিকদের ভূমি অধিগ্রহন শাখায় ক্ষতিগ্রস্তদের হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরলে জেলা প্রশাসক বলেন, ভূমি অধিগ্রগন দপ্তরের অনিয়মের বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে জানান । তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর সাথে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

পটুয়াখালী ভূমি অধিগ্রহন শাখা ক্ষতিপূরন পেতেও গুনতে হচ্ছে টাকা

প্রকাশিত : ০৬:৪৫:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পটুয়াখালী প্রতিনিধি:

পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া গ্রামে প্রান্তিক কৃষক মো. বেল্লাল। তাদের গ্রামের স্থাপিত হচ্ছে দেশের নবম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। এ কারণে সরকার তাদের গ্রামে জমি অধিগ্রন করছে। এই ইউজেটএ তার ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ জমি অধিগ্রহন করা হচ্ছে। ক্ষতিপূরণ বাবদ তিনি পেয়েছেন ৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। কিন্তু তার এই ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে তাকে গুনতে হয়েছে টাকা।
বেল্লাল জানায়, ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে তাকে প্রতিদিনই জেলা শহরের ভ’মি অধিগ্রহন (এলএ) শাখায় দৌড়ঝাপ করতে হয়েছে। এক পর্যায়ে টাকা পেতে খরচ বাবদ শতকারা ৬ টাকা চেয়ে বসে। এই হিসেবে তাদের ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পর তিনি তার ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছেন।
বেল্লাল আরো জানায়, তারবাব-দাদাদের ৩ একর এক শতাংশ জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। ক্ষতিপূরন পেয়েছেন এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এই ক্ষতিপূরণের টাকা পেতেও খরচ বাবদ তাদের ৬ শতাংশ হারে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে।
একই গ্রামের কৃষক মো শাহাবুদ্দিন। তিনি ক্রয়সুত্রে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ জমির মালিক। ইপিজেট এ তার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি অধিগ্রহন করেছে সরকার। কিন্তু তিনি এখণও তার ক্ষতিপূরনের টাকা পাননি।
শাহাবুদ্দিন জানান, ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে খরচ বাবদ টাকা চাওয়া হয়েছে। টাকা দিতে না পারায় ভ’মি অধিগ্রহন শাখায় আসলে বার বার সময় দিচ্ছে আর বলছে দেখছি এক সপ্তাহ পড়ে আসেন। এই ভাবে তাকে ঘোরানো হচ্ছে।
পটুয়াখালীতে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট পটুয়াখালী ইপিজেড প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের পঁচাকোড়ালিয়া গ্রামে স্থাপিত হচ্ছে দেশের নবম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)। ইতিমধ্যে ৪১০ দশমিক ৭৮ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকার প্রায় ৩০০ একর জমি ইতোমধ্যে বালু ফেলে প্রস্তুত করা হয়েছে। অভ্যন্তরের রাস্তা, রক্ষা প্রাচীরের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। যাদের জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫৪ জনের জন্য পূর্নবাসনের কাজও চলছে।
এদিকে ইপিজেড এর জন্য ভূমি অধিগ্রহনের পর থেকে ক্ষতিপূরন পেতে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখা ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পেতে ভিড় করতে থাকে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াকে ঘিরে এলএ শাখায় কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পেতে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। ওই শাখায় গড়ে উঠেছে একটি দালাল চক্র । ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে খরচের কথা বলে শতকরা ৬ টাকা থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে । যারা খরচের টাকা দিতে অপরগতা প্রকাশ করে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্ষতিপূরনের টাকা না পাওয়া কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,অনেক সময় দালাল চক্র ভূয়া কাগজ পত্র তৈরী করে জমির প্রকৃত মালিকদের হয়রানী করতে তার বিরুদ্ধে আপত্তি দিয়ে তাদের টাকা উত্তোলনে সমস্যা তৈরী করছেন। পরে দালালদের সাথে জমির প্রকৃত মালিকদের সমঝোতা হলে তারা তাদের প্রাপ্য টাকা নিয়ে আপত্তি তুলে নিচ্ছেন। নারী-পুরুষ, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এই চক্রটির ফাঁদ থেকে। হয়রানির ভয়ে কেই এই দালাল চক্রটির বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে ইপিজিড প্রকল্পের পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহনের সমুদয় টাকা পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করেছি। সেখান থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের টাকা পািরশোধ করা হচ্ছে। টাকা পরিশোধের প্রক্রিয়ার সাথে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি জেলা প্রশাসকের এতিয়ার। সেখানে কোন অনিয়ম হয় কিনা তা আমার জানা নেই।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাসুদ উল আলম বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ এসেছে। নবাগত জেলা প্রশাসক পটুয়াখালীতে যোগদানের পর তার কাছে বিষয়চি অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পটুয়াখালীর নবাগত জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ শহীদ উদ্দীন চৌধুরী মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের দরবার হলে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। এসময় সাংবাদিকদের ভূমি অধিগ্রহন শাখায় ক্ষতিগ্রস্তদের হয়রানির বিষয়টি তুলে ধরলে জেলা প্রশাসক বলেন, ভূমি অধিগ্রগন দপ্তরের অনিয়মের বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলে জানান । তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর সাথে আলোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।